চলে গেলেন বাংলাদেশের বন্ধু আবৃত্তিকার গৌরী ঘোষ

চলে গেলেন গৌরী ঘোষ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন পশ্চিম বাংলার এই আবৃত্তিশিল্পী। স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের পাশাপাশি শরণার্থীদের ত্রাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মান’ প্রদান করে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার একটি হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মান’ প্রদান করে

রেডিওতে উপস্থাপক হিসেবে তাঁদের ক্যারিয়ার শুরু। তিন দশক ধরে কলকাতা থেকে প্রচারিত আকাশবাণীর অনেক অনুষ্ঠানে গৌরী ঘোষের কণ্ঠ শুনেছেন দুই বাংলার শ্রোতারা। দুই বাংলায় আবৃত্তিজগতে পরিচিত ছিলেন গৌরী ঘোষ ও পার্থ ঘোষ দম্পতি। তাঁদের যৌথ শ্রুতি নাটক ‘কর্ণকুন্তি সংবাদ’ আমাদের দেশেও দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। এই শিল্পী দম্পতিকে কলকাতায় বহু জনপ্রিয় অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে দেখা গেছে। তাঁদের বেশ কিছু অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘এই তো জীবন’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয়।

কলকাতার দমদমে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন গৌরী ঘোষ। কয়েক দিন আগে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তখন থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এক সপ্তাহ ধরে ভেন্টিলেশনে ছিলেন। গতকাল রাত থেকে অবস্থার অবনতি ঘটে। অবশেষে সব থেমে যায়। স্তব্ধ হয় তাঁর কণ্ঠ।

তাঁর মৃত্যুতে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। ফেসবুক, টুইটারে অনেকে শোক প্রকাশ করেন। প্রবীণ এ শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখেছেন ‘গৌরী ঘোষের অনবদ্য আবৃত্তি মননশীল শ্রোতাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।’
ফেসবুকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ লিখেছেন, ‘চলে গেলেন স্মরণকালের অতুলনীয় আবৃত্তিশিল্পী গৌরী ঘোষ। আমাদের পরিবারের মাতৃস্বরূপা। গৌরীমার সঙ্গে তিন দশকের ভালোবাসা, মমতা, স্নেহের কত স্মৃতি। কেমনে ভুলি গৌরীমা।’

সংগীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র লিখেছেন, ‘মায়ের মতো মানুষ চলে গেলেন। মাথার ওপর ছাদ ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি।’ শোক প্রকাশ করেছেন বাচিকশিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘উনার চলে যাওয়া মানতে পারছি না। উনার জীবনী নিয়ে একটা কাজ করছিলাম, সেটা শেষ হয়নি।’
কবি সুবোধ সরকার লিখেছেন, ‘আজ আবৃত্তির জগৎ ছেড়ে একজন সম্রাজ্ঞী তাঁর হাঁস ও বীণা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। তাঁর অগণিত অনুরাগীর চোখে জল। আমাদের আজ গভীর শোকের দিন।’ জগন্নাথ বসুসহ অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন।
গৌরী ঘোষকে ২০১৮ সালে ‘কাজী সব্যসাচী সম্মান’ প্রদান করেছিল পশ্চিম বাংলার রাজ্য সরকার।
স্বামী পার্থ ঘোষ, একমাত্র পুত্র এবং দেশ–বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধ শ্রোতা রেখে গেছেন গৌরী ঘোষ।