‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ নিয়ে নতুন দল
পুঁজিবাদী সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাবার আজীবনের লালিত স্বপ্ন সন্তানের সফলতা। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সামর্থ্য। এমনও দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মধ্য দিয়েই বাবা সন্তানদের জন্য নিজের সর্বশেষ চেষ্টার চিহ্ন রেখে যান। এমনই একটি মৃত্যুর সঙ্গে হাজারো স্বপ্নের বাঁচা-মরার গল্প জড়িয়ে গড়ে ওঠে ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ নাটকের কাহিনি।
আর্থার মিলারের ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ নাটকটি বিশ্বের জনপ্রিয় মঞ্চনাটকগুলোর একটি। বলা হয়ে থাকে, মঞ্চের জন্য কঠিন যতগুলো নাটক, এটি সেগুলোরও একটি। নানা দেশে, নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনের মঞ্চে এটি নিয়ে আসে থিয়েটারিয়ান। এর আগে ১৯ এপ্রিল থেকে টানা তিন দিন নাটকটির কারিগরি মঞ্চায়ন করে দলটি। গতকাল ছিল উদ্বোধনী প্রদর্শনী।
বৈশাখের বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় সাড়া পেয়েছে থিয়েটারিয়ান। মিলনায়তনের সব আসনই ছিল পূর্ণ। নতুন দলের নতুন নাটক দেখতে এসেছিলেন ঢাকার বিভিন্ন নাট্যদলের সদস্যরা। উৎসাহ দিতে এসেছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, ইস্রাফিল শাহিন, মাসুম রেজা প্রমুখ।
ডেথ অব আ সেলসম্যান থিয়েটারিয়ানের প্রথম প্রযোজনা। দলটি ঢাকার মঞ্চে নতুন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর নাট্যদল ‘প্রাঙ্গণেমোর’-এর ২৭ সদস্য যৌথপত্রে স্বাক্ষর দিয়ে দলছুট হন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে তাঁরা ঘোষণা দেন থিয়েটারিয়ানের। বিগত তিন মাস দলটি কাজ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনিই নির্দেশনা দিয়েছেন ফতেহ্ লোহানী অনূদিত ডেথ অব আ সেলসম্যান নাটকটি।
‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ পরিচয় হারানো একজন মানুষের নিজের ও সমাজের মধ্যকার পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পারার গল্প। নাটকটি স্মৃতি, স্বপ্ন, দ্বন্দ্ব ও তর্কের একটি সম্মিলিত ছবি, উইলি লোম্যানের জীবনের শেষ ২৪ ঘণ্টার ঘটনা। পরিবর্তনের চেষ্টায় একদিন জীবনের গল্পটাই বদলে ফেলে সে।
আশিকুর রহমান বলেন, ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ প্রযোজনাটি দর্শকের সামনে শুধু একটি নাট্য শিল্পকর্ম হিসেবে কখনোই আমরা উপস্থাপন করতে চাইনি। বরং চেয়েছি পুঁজিবাদী সমাজে যেখানে আমাদের আবাস, সেখানে প্রতিমুহূর্তে যে নিরন্তর লড়াই করে আমরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করি বা মারা যাই, সেই ট্র্যাজিক বাস্তবতার নির্যাস যাতে ধরা দেয়। আর্থার মিলার এই নাটকে সামন্ততান্ত্রিক চির অভ্যস্ত চেতনার ধারক ব্যক্তির জীবনসংগ্রাম, স্মৃতি, অনুশোচনা, বাবা-ছেলের বাৎসল্য ও টানাপোড়েন, নারী-পুরুষের সম্পর্কের দমনমূলক চিত্রের জটিলতা ইত্যাদি চিত্রণে পুঁজিবাদী সমাজকে উপস্থাপন করেছেন ক্ষুধার্ত রাক্ষসরূপে। এই প্রযোজনার পরতে পরতে পুঁজিবাদী সমাজে আমরা কীভাবে বেঁচে আছি আর কীভাবে মারা যাই প্রতিমুহূর্তে, সে বিষয়েই প্রশ্ন তোলে।’
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৌহিদ বিপ্লব, পলি চৌধুরী, তাসমিয়া মীম, মো. মাইনুল ইসলাম, আহমেদ সুজন, নাজমুল নাঈম, আমিরুল মামুন, লিটু রায়, পৃথু অভিষেক, অর্নিলা অচিন প্রমুখ। আজ শনিবার নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী।