থিয়েটারের টানে দিনাজপুর

সম্বিত সাহার হাতে ২০২০ সালের মোহাম্মদ জাকারিয়া স্মৃতিপদক তুলে দিল নাটকের দল থিয়েটার। দেশের প্রান্তের এই কীর্তিমান তরুণ মঞ্চকর্মীকে নিয়ে আমাদের বিশেষ আয়োজন।

দিনাজপুরের নাট্য প্রশিক্ষক সম্বিত সাহা
ছবি: সংগৃহীত

গণসাহায্য সংস্থায় চাকরি করতেন সম্বিত সাহা। সে সময় দুই মাসের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারতের নাট্যজন বাদল সরকার। তাঁর কর্মশালা আর প্রযোজনায় কাজ করতে গিয়ে সম্বিতের ভাবনার জগৎটাই পাল্টে গেল। থিয়েটারকে বাদল সরকার যেভাবে মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন, সেটাই হয়ে উঠল সম্বিতের অনুপ্রেরণা। তাঁর মনে হলো, থিয়েটারের উৎপাদনক্ষেত্র হলো মফস্বল। নাট্যচর্চা যদি সেখানে বেগবান হয়, তবেই মূল স্রোতে এসে লাগবে সেটার ধাক্কা। নাট্যকর্মী, সমালোচক ও দর্শকের চাষ করবেন বলে দিনাজপুরে ফিরে গেলেন সম্বিত।

আজও সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন। সম্বিত সাহা বলেন, ‘খুব কষ্ট করতে হয়েছে। নানামুখী বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে দেখলাম, উপজেলার শিশু-কিশোরদের নাটকের ব্যাপারে অনেক আগ্রহ। আমরাই বরং তাদের কাছে নাটককে নিয়ে যেতে পারছি না।’

‘স্বপ্নভঙ্গের রঙ্গমঞ্চ’ নাটকে সম্বিত সাহা
ছবি: সংগৃহীত

মূলত প্রশিক্ষক ও সংগঠক হিসেবে বেশি পরিচিত সম্বিত সাহা। কাজ করেছেন নবরূপী ও নাট্য সমিতির মতো দলে। গড়েছেন নিজের দল শিল্পনাট। নাটক রচনা, নির্দেশনার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন ৩১টির মতো নাটকে। দিনাজপুরের প্রায় প্রতিটি দলের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। মঞ্চ ব্যবস্থাপনা থেকে আলোক পরিকল্পনা, কোরিওগ্রাফি, কম্পোজিশনে রেখেছেন ভূমিকা। অর্থাভাবে পড়লেও নিয়ম করে প্রদর্শনীর আয়োজন করে গেছেন। তিনি বললেন, ‘যখন ছাত্র ছিলাম, তখনই টের পেয়েছিলাম যে আমার পারফর্মিং আর্টের দক্ষতা আছে। তবে কেবলই পারফর্মার হব, সেটা কখনো ভাবিনি। থিয়েটার করতেই বেশি ভালোবাসি।’

নাট্যমঞ্চে সম্বিত সাহা
ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাটক বিভাগের প্রশিক্ষক সম্বিত সাহা এখন শিশুনাট্য নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করতে চান। ঢুকতে চান স্কুল–কলেজে। এ জন্য দরকার তহবিল। আর নিজ এলাকার নাটকের দর্শকদের জন্য তাঁর রয়েছে বিশেষ প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, ‘দিনাজপুরের সব কটি নাটকের দলকে নিয়েও যদি রেগুলার থিয়েটার করানো যায়, তাহলে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত একটা নাটকের আয়োজন করা যাবে। আমার এলাকার ৬ হাজার মানুষের ভেতর থেকে অন্তত ৩০০ দর্শক তো আমরা বের করে আনতে পারব।’