নিঃসঙ্গ নিরাময় কেন্দ্রে প্রয়োজনে সঙ্গীর ব্যবস্থা করা হয়

নিশ্চয়ই এমন অনেক মুহূর্ত গেছে, আপনি আর আপনার প্রিয় মানুষটি পাশাপাশি। অথচ দুজন ব্যস্ত দুটি কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনে। প্রযুক্তি কত কিছুই না বদলে দিয়েছে। ঘরে বসে বোতাম টিপলেই মিলছে কত কি! যেন হাতের মুঠোয় পুরো দুনিয়া। কিন্তু প্রযুক্তিই কি গ্রাস করেছে সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যের সমাজ জীবনকে? পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে আঘাত করছে না? এই প্রশ্নগুলো তুলে এনেছে মতিঝিল থিয়েটার (মতিঝিল) এর নতুন নাটক ‘নিঃসঙ্গ নিরাময়’।
নাটকের অন্যতম চরিত্র রাইসা খানম দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। স্বামী সন্তান হারিয়ে প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে আসেন নিঃসঙ্গ। তিনি অনুভব করেন যে, সবাই আসলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। একইভাবে আশপাশের অনেককে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন, তাঁরাও রাইসার মতোই নিঃসঙ্গ। সেই দলে আছেন বৃদ্ধ থেকে তরুণ সবাই। তাই নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পেতে রাইসা প্রতিষ্ঠা করলেন ‘নিঃসঙ্গ নিরাময় কেন্দ্র’।
এই নিঃসঙ্গ নিরাময় প্রতিষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করেই নাটক। একদিন সেখানে হাজির হন নিঃসঙ্গ প্রৌঢ় মাহবুব হাসান। নিঃসঙ্গ নিরাময় কেন্দ্রে প্রয়োজনে সঙ্গীর ব্যবস্থা করা হয় শুনে তিনি ভুল বোঝেন। ভাবেন এটি হয়তো ‘ভদ্র পতিতালয়’। কিন্তু তাঁর ভুল শুধরে দেন রাইসা। প্রতিষ্ঠানটিতে আসতে থাকেন রাহবার, রুকুর মতো তরুণ-তরুণীরা। সেখানে মুখোমুখি হন নিঃসঙ্গ বাবা, সন্তান ও সন্তানের প্রেমিকা। ঘটতে থাকে নানা নাটকীয়তা।
আধুনিক সমাজ মানুষকে দিয়েছে অনেকরকম সুযোগ-সুবিধা। অন্যদিকে আবার ‘সৃষ্টি’ মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছে নিঃসঙ্গতা। পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্কগুলো ক্রমশই নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে তাতে। ধাবমান আধুনিকতার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ হয়ে পড়ছে আত্মকেন্দ্রিক। মানুষের একা হয়ে পড়ার এই প্রবণতা ফুটে উঠেছে ‘নিঃসঙ্গ নিরাময়’ নাটকে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে হয়ে গেল নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। এতে রাইসা খানম চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসরিন গীতি, মাহবুব হাসানের চরিত্রে নাজমুল হাসান। এ ছাড়া অন্যান্য চরিত্রগুলোতে আছেন কানন, শায়লা পারভীন ও শারমিন সারা। নাটকটি লিখেছেন রবিউল আলম, নির্দেশনা দিয়েছেন নাজমুল হাসান। ‘নাটক হউক শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির হাতিয়ার’ স্লোগান নিয়ে ১৯৮৪ সালের ১০ নভেম্বর মতিঝিল থিয়েটার যাত্রা শুরু করেছিল।