‘দেশকে এমনভাবে স্বাধীন করব, যাতে দেশের সবাই দরজা খোলা রেখে ঘুমাতে পারে,’ এ মূলমন্ত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলেন সার্জেন্ট মহি আলম চৌধুরী। বেশ সাহসী ছিলেন। ভয় পেতেন তিনি তাঁর দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারবেন কি না। তাই তো দক্ষ আর দায়িত্বশীল নেতার মতোই প্রতিটি অপারেশনে সম্মুখে থেকে পরিচালনা করতেন। তাঁর নিষ্ঠা আর দক্ষ সমরপরিকল্পনার জন্য একের পর এক যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে শত্রুমুক্ত করেছেন চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালিয়া এলাকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর বোর্ড অফিসের রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশনের সময় রহস্যজনকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যেও তাঁর অনুরাগী সহযোদ্ধারা তাঁকে কাঁধে নিয়ে পাহাড়ি অরণ্যে দাফন করেন।

ডকুড্রামাটিতে মহি আলম চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াদ রায়হান

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ডকুড্রামা ‘দুইটি যুদ্ধের একটি গল্প’র এই হচ্ছে পটভূমি। ফুয়াদ চৌধুরীর পরিকল্পনা ও পরিচালনায় দীপ্ত টিভির উদ্যোগে ডকুড্রামাটি নির্মিত হয়েছে। সাক্ষাৎকার এবং ঘটনার নাটকীয় দৃশ্যায়নের মাধ্যমে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ডকুড্রামাটি প্রদর্শিত হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, আনবিক শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক ইউনুস আকন, বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা এবং কাজী ফুডের প্রধাননির্বাহী তানভীর হায়দার চৌধুরী।

নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরী

সহযোদ্ধা ছাড়া পরিবারের সদস্যদের কাছে একটা সময় পর্যন্ত অজানাই ছিল মহি আলমের এই বীরগাথা। অজ্ঞাত ছিল কবরটিও। ভুলতে বসা জাতির এই সূর্যসন্তানের বীরোচিত অবদান একক প্রচেষ্টায় খুঁজে বের করেন শহীদ মহি আলমের ভ্রাতুষ্পুত্রী মারজান চৌধুরী। চাচার করবটা একনজর দেখার প্রত্যাশায় চলে আসেন অচেনা শহরের অচেনা গ্রামে। আর এসে দেখতে পান কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে চাচার বীরগাথা। বিষয়টা তিনি একেবারেই মেনে নিতে পারেন না।

সহযোদ্ধা ছাড়া পরিবারের সদস্যদের কাছে একটা সময় পর্যন্ত অজানাই ছিল মহি আলমের এই বীরগাথা

তাই তো পরিবারের বাধা আর সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও নিজের গণ্ডির বাইরে পা না রাখা মেয়েটি শুধু মনের জোরে একটা ছবির সূত্র ধরে আবিষ্কার করেন সেই কবর, উদ্ধার করেন নিজের চাচার বীরত্বের স্বীকৃতি, প্রতিষ্ঠিত করেন শহীদ চাচার প্রাপ্য সম্মান। সে যেন আরেকটি যুদ্ধ জয় করে।
ডকুড্রামাটিতে মহি আলম চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াদ রায়হান। মারজান চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অহনা মিথুন। এ ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন মির্জা শাকিব, সাইদুর রহমান, জয়শ্রী মজুমদার লতা ও চট্টগ্রামের নান্দিমুখ থিয়েটারের একদল নাট্যকর্মী।