শুরু হলো দুই বাংলার মিলন উৎসব

জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন এই অতিথিরাআশরাফুল আলম

বাংলাদেশ ও ভারতের ৪৪টি নাট্যদলের অংশগ্রহণে শুরু হলো দুই বাংলার মিলন উৎসব। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় গঙ্গা–যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব–২০২২ উদ্বোধন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতিচর্চা আমাদের বিশ্বদরবারে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়, আবার বিদেশ থেকে যা কিছু ভালো, আমরা গ্রহণ করতে পারি। এভাবে এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা মানুষেরা এক হব।’

উদ্বোধনী সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার বেইলি রোডের নাটক পোহালে শর্বরী। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন রামেন্দু মজুমদার ও ত্রপা মজুমদার। এর আগে ছিল উদ্বোধনী নৃত্য। ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন ধৃতি নর্তনালয়ের শিল্পীরা। আতাউর রহমান বলেন, শিল্প–সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষে মানুষে মিলনের বিরাট সুযোগ তৈরি হয়। কেবল বিনোদন নয়, এই চর্চা গণশিক্ষারও মাধ্যম।

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লিয়াকত আলী লাকী, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শাহ আলম সারোয়ার এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ। মঞ্চে উঠেই প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন এই অতিথিরা। এ ছাড়া নাট্যাঙ্গনের প্রয়াত গুণীজনদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আশরাফুল আলম

রামেন্দু মজুমদার বলেন, এই উৎসবের মাধ্যমে বহু সাংস্কৃতিক কর্মী একত্র হন। এভাবেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে হবে। নয়তো সাংস্কৃতিক সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘সমাজের ভেতরে যা হচ্ছে, সেই লক্ষণগুলো ভালো নয়। সংস্কৃতিতে আমাদের কিছু ঘাটতি রয়েছে। এগুলো পূরণ না করলে সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য ভালো হবে না।’

গঙ্গা–যমুনা উৎসব সংস্কৃতিকর্মীদের শক্তি দেয়। এ প্রসঙ্গে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘এই উৎসব কেবল বাংলাদেশের নয়, বাঙালির। এর মধ্য দিয়ে আমরা সৃষ্টিশীলতা বিনিময় করি। পরস্পরকে জানি, পরস্পরের কাজ দেখার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করি। এটি আমাদের শক্তি দেয়।’

প্রথম আলো

কে এম খালিদ বলেন, ‘সংস্কৃতিকর্মীরা প্রাপ্তির আশা ছাড়াই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে লড়াই করে গেছেন। এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও আপনাদের, যাতে ২০৪১ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করা যায়।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসবের সদস্যসচিব আক্তারুজ্জামান।

শিল্পকলা একাডেমির পাঁচটি মঞ্চ ও বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তন মঞ্চে দর্শনীর বিনিময়ে উৎসবের নাটকগুলো দেখা যাবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। উৎসবে দেখা যাবে দুই দেশের মোট ১২৩টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাটক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

প্রথম আলো

শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রধান মিলনায়তনে রয়েছে ঢাকা থিয়েটারের নাটক নিমজ্জন, পরীক্ষণ থিয়েটারে ঢাকা পদাতিকের পাইচো চোরের কিচ্ছা, স্টুডিও থিয়েটারে অপেরার হাত বাড়িয়ে দাও, মহিলা সমিতিতে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের কী চাহ শঙ্খচিল। উৎসবে নাটক নিয়ে এসেছে ভারতের ৪টি, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৪০টি দল। নাটকের পাশাপাশি উন্মুক্ত মঞ্চে থাকবে নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন।