জমজমাট সাংস্কৃতিক অঙ্গন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসবে ছিল সমবেত নৃত্য পরিবেশনা। ছবি: তারেক আলী

চেনা দৃশ্য। শহরের অলিগলিতে ফেরি করে জাতীয় পতাকা বিক্রি। রাজপথে ছুটে চলা যানবাহন, অফিস কিংবা বসতবাড়ির চিলেকোঠায় উড়তে দেখা যাচ্ছে এই লাল-সবুজ পতাকা। এসব দৃশ্য জানান দিচ্ছে বিজয় দিবস আসন্ন। আজ জাতির গর্বের দিন, বিজয় দিবস। বাঙালির চিরগৌরবের এই দিন ঘিরে প্রতিবছরের মতো এবারও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন। বিজয়ের গান, নাচ, কবিতা আর নাটকে মঞ্চগুলো জমজমাট শুক্রবার। ছিল নতুন নাটকের মঞ্চায়ন। ফিরেছে পুরোনো নাটক।

এসেছে ‘ক্লোজেট ল্যান্ড’
নাটকের দল অপেরা মঞ্চে এনেছে নতুন নাটক। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তেন ‘ক্লোজেট ল্যান্ড’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। ভারতীয় নাট্যকার, নির্দেশক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রাধা ভরদ্বাজের লেখা একই নামের নাটক থেকে বাংলায় এর অনুবাদ করেছেন নাহিদ স্মৃতি, নির্দেশনা দিয়েছেন সাজ্জাদ সাব্বির। অভিনয়েও রয়েছেন তাঁরা দুজন।

শুক্রবার উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিকতা। শীতসন্ধ্যায় উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতিতে শুরু হয় নাটক। দুই চরিত্রের নাটকটিতে উঠে এসেছে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শিশু নির্যাতনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

‘ক্লোজেট ল্যান্ড’ নাটকের দৃশ্য। ছবি: অপেরার সৌজন্যে

নাটকের গল্পে এক শিশুসাহিত্যিক মুখোমুখি হন একজন নাম না–জানা জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তার। এই কর্মকর্তা ও বন্দী সাহিত্যিকের কথোপকথন যত গভীরে যেতে থাকে, ততই উন্মোচিত হতে থাকে অনেক অজানা বিষয়। নির্দেশক সাজ্জাদ সাব্বির বলেন, ‘পাণ্ডুলিপি নির্বাচনের ক্ষেত্রে শৈল্পিক সুষমার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়! নিছক বিনোদন দেওয়া বা নেওয়ার মতো সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় স্থিতাবস্থা বা সাম্যের সূচক আমরা অর্জন করেছি বলে আমার মনে হয় না। শিল্পের বাসনা আর শিল্পীর সীমাবদ্ধতার মাঝে একটা সন্ধি স্থাপনের পথ খুঁজতে গিয়েই রাধা ভরদ্বাজের ‘ক্লোজেট ল্যান্ড’ আমার হাতে আসে। নাটকটি হাতে আসার পর অনুবাদ, নাট্যকারের অনুমতি, রয়্যালটি ও প্রযোজনার সার্বিক অর্থ সংস্থান, সর্বোপরি অভিনয়–প্রস্তুতির সব প্রক্রিয়া শেষ করে নাটকটি মঞ্চে আনতে যদিও আমাদের প্রায় আট বছর সময় লেগে গেল, তবু নাটকটি এখনো খুব বেশিই প্রাসঙ্গিক।’

ফিরেছে ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’
নাট্যদল তীরন্দাজ রেপার্টরির আলোচিত নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’। এটি দলের ষষ্ঠ প্রযোজনা। সাত বছর পর ঢাকার মঞ্চে ফিরেছে নাটকটি। গতকাল বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে বিকেল সাড়ে পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কণ্ঠনালীতে সূর্যর দুটি প্রদর্শনী হয়। মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন দীপক সুমন। আগন্তুক চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপক সুমন আর চিকিৎসক চরিত্রে কাজী তৌফিকুল ইসলাম।

কণ্ঠনালীতে সূর্য নাটকের মহড়া। ছবি: তীরন্দাজ রেপার্টরির সৌজন্যে

এই নাটকের কাহিনি গড়ে উঠেছে এক আগন্তুককে ঘিরে। একদিন সেই আগন্তুক এক চিকিৎসালয়ে এসে বলে, তার কণ্ঠনালিতে সূর্য আটকে গেছে। বহুকাল ধরে সে তা বহন করছে। সে সূর্যটি বের করতে চায় বা চিরকালের জন্য হৃৎপিণ্ডে রেখে দিতে চায়। এমন অদ্ভুত সমস্যার কথা আগে শোনেনি কেউ। তাই আগন্তুককে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে থাকে চিকিৎসালয়ে আসা অন্য দুই চরিত্র মিলু ও সমীর। তবে আগন্তুক তাতে দমে না গিয়ে নিজের কণ্ঠনালিতে আটকে থাকা সূর্যের একটা ফয়সালা করতে চায়। এভাবেই গল্পটা এগিয়ে যায়।

শিল্পকলায় বিজয় উৎসব
শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে গতকাল শুরু হয়েছে দুই দিনের বিজয় উৎসব। শুক্রবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ছিল শিশু-কিশোর ও যুবদের নিয়ে বিজয়ের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে গতকাল শুরু হয়েছে দুই দিনের বিজয় উৎসব
শিল্পকলা একাডেমির সৌজন্যে

শহীদ মিনারে জোটের আয়োজন
‘আমার দেশ, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ’ স্লোগানে ১৩ ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসব। গতকাল তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানমালায় ছিল দলীয় নৃত্য, গানসহ একক আবৃত্তি ও একক গান। উৎসবের আজ শেষ দিন। আজ সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে জোটের উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রা বের হবে।