আনর্ত অর্হণপত্র পাচ্ছেন জ্যোৎস্না বিশ্বাস, বাবুল বিশ্বাস ও আবু তাহের

আবু তাহের, বাবুল বিশ্বাস ডানে জ্যোস্না বিশ্বাসকোলাজ

যাত্রা–সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাসের স্ত্রী এবং চলচ্চিত্র নায়িকা অরুণা বিশ্বাসের মা জ্যোৎস্না বিশ্বাস ৩০০টির বেশি যাত্রাপালায় সরাসরি অভিনয় ও ৩০টিতে প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছেন। তাঁকে আগামীকাল সোমবার দেখা যাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আনর্ত’ নাট্যমেলায়। একইভাবে থিয়েটারসংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্বদরবারে পরিচিত করার জন্য দেখা যাবে বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভসের নির্বাহী পরিচালক বাবুল বিশ্বাস ও থিয়েটারের একমাত্র আলোকশিল্পী আবু তাহেরকে। তাঁদের ‘আনর্ত-অর্হণপত্র’ প্রদান করা হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘আনর্ত নাট্যমেলা-২০২৪’। দুই দিনব্যাপী এই মেলা আগামীকাল (২৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে শুরু হতে যাচ্ছে। এবারের নাট্যমেলায় থিয়েটারের ‘প্রত্যক্ষ’ ও ‘নেপথ্য’ শাখায় অবদানের জন্য এই তিন গুণী শিল্পীকে ‘আনর্ত’ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। থিয়েটারবিষয়ক পত্রিকা ‘আনর্ত’ এই মেলার আয়োজন করেছে।
জ্যোৎস্না বিশ্বাস আগামীকাল সকালে রাজশাহীতে পৌঁছাবেন, বাবুল বিশ্বাসে আজ রোববারই পৌঁছেছেন। আর আবু তাহের রাজশাহীতেই আছেন। আগামীকাল বেলা ১১টায় মেলায় উদ্বোধনী শোভাযাত্রা শুরু হবে। মেলায় দুই বাংলার সাতটি নাটক মঞ্চস্থ হবে। আসছেন দুই বাংলার মঞ্চশিল্পীরা।

‘আনর্ত-অর্হণপত্র’ প্রদানের সময় জ্যোৎস্না বিশ্বাসের নামে ঘোষণা করা হবে ‘যে পবিত্রতম জ্যোৎস্নালোক একদিন রাজকুমার সিদ্ধার্থকেও গৃহত্যাগী করে দিয়েছিল, তাঁর সৌষ্ঠবেও হয়তো সংলিপ্ত হয়েছিল সেই অপার্থিব উজ্জ্বলতা। না হলে তাঁর নাম “জ্যোৎস্না” হবে কেন! একজন অমলেন্দু জ্যোৎস্নার জীবনসঙ্গী; যে বিশ্বাসে তাঁরা শুরু করেছিলেন যৌথ জীবন, যূথবদ্ধ কালের যাত্রায়, সে বিশ্বাস ফুলেফেঁপে একাকার হয়ে তাঁর জীবন একেবারে পূর্ণ করে দিয়েছে। ভালোবেসে আমরা তাঁর নাম দিয়েছি “যাত্রা–সম্রাজ্ঞী”। “যাত্রা”র বাইরের এই জ্যোৎস্নাও আমাদের সমূহ সমীহ আদায় করে নেন। আনর্ত পরিবার যাত্রা–সম্রাজ্ঞী জ্যোৎস্না বিশ্বাসকে “আনর্ত-অর্হণ” প্রদান করতে পেরে আনন্দিত।’
বাবুল বিশ্বাস সম্পর্কে উচ্চারণ করা হবে, ‘নদী কর্ণফুলী আর সবুজ পাহাড়ের মায়ার আবেশ তাঁর জন্ম সম্ভব করেছিল রাঙামাটির চন্দ্রঘোনায়। কিন্তু নদী-পাহাড় মাতৃস্নেহে অন্ধ হয়ে বন্দী করেনি তাঁকে। মুক্ত করে ছেড়ে দিয়েছে অসীমের পথে। সে পথে হেঁটে পিতৃভূমি লক্ষ্মীপুরের অগাধ প্রকৃতির উদারতা নিয়ে তিনি ক্রমে এগিয়ে গেছেন বিপুল বিশ্বে। যুক্ত হয়েছেন নাট্যশিল্পের অন্তর্ভুবনের সঙ্গে। তাঁর ঘরে থিয়েটারের লাখো যে প্রমাণ, তার স্বীকৃতি দিতে পেরে আনর্ত যে ধন্য। জীবন তাঁর উৎসর্গিত হোক থিয়েটারের জন্য। এই আসরে এই প্রত্যয় হোক তার মান্য বন্ধু হে...’

রাজশাহী থিয়েটারের একমাত্র আলোকশিল্পী আবু তাহের নেপথ্য শাখায় মনোনীত হয়েছেন। তিনি দুই হাজারের বেশি নাটক ও যাত্রায় আলোক সঞ্চালনা করেছেন। তিনি নিজের জীবন ও সংসারকে উজাড় করে দিয়ে আলোর কাজ করে গেছেন। কিন্তু এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আলোর কথা যত হলো, আলোয় মেলা ভরে গেল, এই দেশেতে আলোর নাইরে শেষ, কত মানুষ আলো দিয়ে জীবন করল শেষ, আমরা তার কী খবর রাখি ভাই রে, প্রশ্ন সবিশেষ। আবু তাহের নামটি তাহার, রাজশাহীতে বাস যাঁহার, মঞ্চটাকে ভালোবেসে যায়, পালাকারের হাত ধরে আসেন যেন এই ধরায়, আলোর সাথে জীবনপথে ও তাঁহার জীবন পরাণ পায়।

‘হাজার দুয়েক নাটকে আলো জ্বালেন তাঁর হাতে, নিজ জীবনে আলো তাঁহার নাই, এমন মানুষ কজন আছে, আমাদের আশপাশেও আমরা খুঁজে নাহি পাই। অসুখে জীবন চলে, চলা তাকে নাহি বলে, রাজশাহীতে একমাত্র সেজন। আনর্ত তাহারে দেখে বরাবরই স্বজন করে, ও ভাই রে প্রাণেরও মতন।’