সিডনি মাতিয়ে দেশে ফিরছেন চঞ্চলরা

নাটকটিতে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, শাহনাজ খুশি, দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি। প্রথম আলো

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মঞ্চনাটক করে দর্শকদের মাতিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী এবং তাঁর সঙ্গীরা। গত ৩০ জুলাই বিকেল পাঁচটায় সিডনির ব্যাংকস টাউনের ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে ‘দড়ির খেলা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।

আরও পড়ুন

এর আগে দেশটির ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী মেলবোর্নে ২১ জুলাই নাটকটি স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। নাটকটিতে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, শাহনাজ খুশি, দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি। যুদ্ধবিরোধীর কাহিনি নিয়ে লেখা মঞ্চনাটকটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীরাও অংশ নেন।

এর আগে ২০১৬ সালে মঞ্চনাটকের জন্য একই দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী।

যুদ্ধবিরোধীর কাহিনি নিয়ে লেখা মঞ্চনাটকটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীরাও অংশ নেন। ফেসবুক থেকে

প্রায় সাত বছর পর নাটকের মানুষের বিদেশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য নাটক নিয়ে আসা প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন চঞ্চল। তিনি বলেন, ‘অনেকবারই আসি আসি করছিলাম, করোনার কারণে আসা হয়নি। এখন আসার পর সিডনি, মেলবোর্ন—দুই জায়গার দর্শকদের আন্তরিকতা আর যাঁরা আমন্ত্রণ করেছেন, তাঁদের আতিথেয়তা—সবকিছুই মুগ্ধ হওয়ার মতো। তবে অস্ট্রেলিয়ায় অনেক পরিচিত মানুষ রয়েছে, যার কারণে অভিনয়ের বাইরেও ঘোরাঘুরির আনন্দটা বেশি পাচ্ছি, একটা এনার্জি পাওয়া যায়। আর এই এনার্জি নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের কাজগুলোতে চেষ্টা করি ভালো কাজ করার।’

২০০৬ সালের দিকে চঞ্চল চৌধুরী ও মাহফুজ আহমেদ অভিনীত এবং মামুনুর রশীদ চৌধুরী পরিচালিত ৩২ পর্বের ধারাবাহিক নাটক ‘দক্ষিণায়ন’ নির্মিত হয়েছিল সিডনিতে। তখনকার বাংলাদেশি বিনোদনজগতের সঙ্গে সিডনির যোগসূত্র ছিল অনেক কম। তবে এখনকার সময়ে বহু নাটক-সিনেমার শুটিং, তারকাদের আনাগোনা হয় সিডনিতে। এ প্রসঙ্গে কথা হলে চঞ্চল বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা এ দেশে বড় হচ্ছে, তাদের সঙ্গে বাংলা সিনেমা, নাটক ও সাহিত্যের পরিচয় করিয়ে দেওয়া জরুরি।  তাদের সামনে বেশি বেশি বাংলাদেশি কনটেন্ট উপস্থাপন করা উচিত। আর এ জন্য আমাদের কাজগুলো ভূমিকা রাখছে, এটাই আনন্দের।’

প্রায় সাত বছর পর আবারও মঞ্চনাটক নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যান চঞ্চলরা। প্রথম আলো

বাংলা নাটক মানুষ যেমন পছন্দ করেন, তেমনই বাংলা নাটক নির্মাণেও সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন চঞ্চল চৌধুরী, ‘কিছু অপপ্রচার আছে যে মানুষ বাংলা নাটক দেখে না, যা একদমই সত্য নয়। বাংলা নাটকের এখন বিশাল একটা মার্কেট হয়েছে, বাংলা নাটক দেখে না বলে বলে নাটকের দাম কমিয়ে রাখার একটা ধান্দা চলছে, যাতে নাটকের বাজেট কম থাকে। সারা বিশ্বের বাংলাদেশিরা নাটক দেখছেন, প্রত্যেকের আলাদা রুচি আছে, তবে নাটক দেখছেন সবাই। এমনকি মঞ্চনাটকের সব শো হাউসফুল, আগাম টিকিট শেষ।’

‘দড়ির খেলা’র নির্দেশক ও অভিনেতা বৃন্দাবন দাসের সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘এবার বিশেষ ভালো লাগাটা থাকছে। কারণ, দর্শকেরা মঞ্চনাটকটি উপভোগ করেছেন। গোটা আয়োজনটি দর্শকেরা খুব পরিতৃপ্তি নিয়ে দেখেছেন এবং আয়োজনে সুশৃঙ্খল বজায় ছিল। এই ভালো লাগা নিয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছি।’

নাটকের অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি বলেন, ‘বাংলাদেশিরা আমাদের প্রচণ্ড ভালোবাসা দেন, মনে হয় বছর থাকলেও তাঁদের এই ভালোবাসা প্রতিদান দিতে পারব না। তবে সবকিছুই ব্যর্থ হতো যদি শিল্পী হিসেবে আমাদের কাজ ঠিক না থাকত। কিন্তু দর্শক এবং আয়োজকেরা বলেছেন, আমাদের কাজ ভালো হয়েছে, শিল্পী হিসেবে এটাই পাওয়া।’

অস্ট্রেলিয়ার দুটি শহরে ‘দড়ির খেলা’র দুটি শো হয়। প্রথম আলো

কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাটকটি দেখার পর তাঁদের অনুভূতি তুলে ধরেন প্রথম আলোর কাছে।  প্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকে চোখের সামনে দেখতে পেরে আবেগ প্রকাশ করেন তরুণ বাংলাদেশি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শুভজিৎ ভৌমিক, ‘আমার দেখা সেরা একজন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। যেকোনো চরিত্রে বাতাসের মধ্যে মিশে যান। উনাকে সব সময় দূর থেকে দেখেছি। আজ সামনাসামনি দেখতে পেরে ভালো লেগেছ। আমার জন্য অমূল্য একটা স্মৃতি হয়ে থাকল তাঁর সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি করতে পারাটা।’

নাটকটি দেখতে দেখতে বিদেশে থাকার কথা ভুলে গিয়েছিলেন বলে জানালেন সিডনির ওয়াইলিপার্কের বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তা কেক এন বেকের স্বত্বাধিকার মাসুমা মৌ। তিনি বললেন, ‘মঞ্চনাটক শুরু হয় বিকেল পাঁচটার দিকে। সব কাজ গুছিয়ে, সন্তানদের তৈরি করে আসতে আসতে আমার একটু দেরি হয়, ক্লান্ত ছিলাম কিছুটা। কিন্তু থিয়েটারে ঢুকে চঞ্চলদা ও বাকি সবার অভিনয় দেখতে দেখতে কাজের চাপ তো ভুলেছিই, আমি যে সিডনিতে আছি, সেটাও ভুলে গিয়েছিলাম। সবার অভিনয়, নাটকের গল্প অসাধারণ লেগেছে।’

দর্শকচাহিদার কারণের আগামী দিনে আরও বাংলাদেশি তারকাদের অস্ট্রেলিয়ায় আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনার কথা জানান সিডনিতে নাটকটির পরিবেশক বঙ্গজ ফিল্মস। আয়োজকদের একজন তানিম আল মিনারুল মান্নান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশিদের বরাবরই আমরা সুন্দর কিছু অভিজ্ঞতা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর প্রতিবারই আমাদের সব শো হাউসফুল গেছে। আসন স্বল্পতার কারণে অনেকেই শো উপভোগ করার সুযোগ পান না, তাঁদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বাংলাদেশ থেকে যে তারকারা প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দেন, তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।’

নাটকের প্রদর্শনী শেষে বুধবার চঞ্চলদের দেশে ফেরার কথা।