শুক্রবার বিকেল তখন চারটা। জাতীয় শিল্পকলা অনেকটা ফাঁকা। বন্ধের দিনেও এমন ফাঁকা দেখে অবাক হলাম। কিন্তু না! কিছুক্ষণ পর বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। কোথাও থেকে আসছে গানের সুর, কোথাও থেকে আসছে আবৃত্তির স্বর। মাঠের বিভিন্ন স্থানে বসে দলে দলে আড্ডা দিচ্ছেন একদল তরুণ-তরুণী। কোনো আড্ডায় চলছে গান, কোনো আড্ডায় কবিতা।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের ভিড়। লোকারণ্যে পরিণত হয় শিল্পকলার মূল মাঠসহ চারপাশ। কেউ এসেছেন নাটক দেখতে, কেউ এসেছেন গান শুনতে। আর কেউ কেউ জাতীয় নাট্যশালার উন্মুক্ত স্থানে বসে উপভোগ করেছেন গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন। জাতীয় নাট্যশালা প্রাঙ্গণে ভিড় করেছেন দর্শকেরা। শিশুরা এসেছে মা-বাবার হাত ধরে, বন্ধুদের নিয়েও এসেছেন অনেকে। জমে উঠেছে গঙ্গা–যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব।
সন্ধ্যা নামতেই হালকা ঠান্ডা বাতাস, যেন শীত নেমে পড়েছে। ঠান্ডা এক প্রবীণকে বাসায় আটকে রাখতে পারেনি। নাম বলতে রাজি হলেন না। তবে কথা বললেন। তিনি এসেছেন সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে। কথায় কথায় তাঁরা জানান, প্রায় সময় তাঁরা এখানে আসেন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। থিয়েটারগুলোয় ভালো কোনো নাটক চললে তাঁরা দেখেন।
প্রবীণদের সঙ্গে গল্প শেষ না হতেই হঠাৎ একজন এসে জিজ্ঞাসা করলেন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান কোথায় চলছে? তাঁর সঙ্গেই চলে গেলাম চিত্রশালা মিলনায়তনে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা পুরস্কার তুলে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এক প্রতিযোগীর পুরো পরিবার উপস্থিত হয়েছিল। তার মা বললেন, ছেলে প্রথম কোনো প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছে। তাই পুরো পরিবার নিয়ে সন্তানের এই পুরস্কার গ্রহণ দেখতে এসেছেন।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখলাম, একটি ফ্লোরে বসে চিত্র আঁকছে শিশুরা। আর বাবা-মা বাইরে বসে গল্প করছেন। মাঠ পেরিয়ে নাট্যশালার সামনে উপস্থিত হতেই দেখা মিলল এক অভিভাবকের। যিনি তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে নাটক দেখাতে এসেছেন। তিনি জানান, তাঁর বাসার আশপাশে সন্তানদের খেলাধুলার স্থান নেই। কিন্তু বাচ্চারা তো বাসায় বসে থাকতে পারে না। তাই তাদের নাটক দেখাতে নিয়ে এসেছেন।
ওই অভিভাবক আরও জানান, তিনি শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্কুল, কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। তার ধারণা, সন্তানেরা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে তারা বিপথে যাবে না।
শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব। ২১ অক্টোবর শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এবারের উৎসবে বাংলাদেশ ও ভারতের ১২২টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আনুমানিক ৪ হাজার শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি এবং আইএফআইসি ব্যাংকের সহযোগিতায় গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২২ উদ্যাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল, সংগীত আবৃত্তি ও নৃত্য মিলনায়তন এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে চলবে এ উৎসবে।