নগরে জমজমাট যাত্রাপালা, ঢাকঢোল
শহরের ভিড়ভাট্টায়, কংক্রিটের দেয়ালের ফাঁকে যাত্রাপালার ডাক যেন অন্য এক সময়ের টান। গত শতকেও গ্রামবাংলার মাঠ, হাটবাজার আর মেলায় যে সাংস্কৃতিক আড্ডার প্রাণ ছিল, সেই যাত্রা গতকাল মঙ্গলবার জায়গা করে নিল নগরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্তমঞ্চে। শরতের হাওয়া, সঙ্গে ঢাকের বাজনা আর দর্শকের কোলাহল—সব মিলিয়ে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ‘শারদীয় সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৫’।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ উৎসবের প্রথম দিন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে মঞ্চস্থ হয় যাত্রাপালা ‘মহিষাসুর মর্দিনী, দেবী দুর্গা’। পালাটি লিখেছেন উজ্জ্বলকুমার বেপারী, পরিবেশনা করে পিরোজপুরের মাতা মজ্জুলিকা ধর্মীয় নাট্য সংস্থা। বিকেল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিও দর্শকের আগ্রহ কমাতে পারেনি—রাত সাড়ে ৯টায় চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল মুক্তমঞ্চে। শহরের বুকজুড়ে এই আয়োজন যেন মনে করিয়ে দিল, যাত্রাপালা এখনো বাঙালির উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
যাত্রাপালার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন উজ্জ্বলকুমার বেপারী, রনজিৎ হালদার, রেবতী রঞ্জন মজুমদার, প্রমথ রঞ্জন গোমস্তা, প্রবীর বেপারী, সঞ্জয় বিশ্বাস, সুদেব মন্ডল, হিমাংশু হাওলাদার, অমল হালদার, মানিক বড়াল, বিমল বৈদ্য, সৌরভ হালদার, নির্মল চন্দ্র দে, গৌতম দাস, মুক্তি চক্রবর্তী, শিমু দেবনাথ, রহিম মিঞাসহ আরও অনেকে।
উৎসবের দ্বিতীয় ও শেষ দিন, বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে আয়োজন ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ৫০ জন শিল্পীর একযোগে ঢাকঢোল বাদন দিয়ে শুরু হয় আসর। এরপর ‘মাঙ্গলিক নৃত্য’ পরিবেশন করে স্পন্দন। একক কণ্ঠে গান শোনান অনিমা রায়, দেবলীনা সুর দোলা, সিঁথি সাহা ও ঋতুরাজ—তাঁদের পরিবেশনায় ছিল রবীন্দ্রসংগীত থেকে লোকগান, এমনকি ব্যান্ডসংগীতও।
পরিচিত এই ৪ শিল্পী শুনিয়েছেন ‘মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’, ‘এবার তোর মরা গাঙ্গে বাণ এসেছে’, ‘মঙ্গল দ্বীপ জ্বেলে’, ‘হৃদ মাঝারে রাখবো’; ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’, ‘সোনা দিয়া বান্ধাইয়াছি ঘর’, ‘শোন গো দখিনা হাওয়া’, মাইলসের ‘জ্বালা জ্বালা’ ইত্যাদি গান। সবশেষে ‘ফাগুনের মোহনায়’, ‘সুন্দরী কমলা’, ‘ও রঙবতী’সহ ফোক ম্যাশআপে জমে ওঠে আসর।
উদ্বোধনী দিনে আলোচনাপর্বে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। স্বাগত বক্তব্য দেন নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক দীপক কুমার গোস্বামী।
বুধবার রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল ফয়েজ মো. আলাউদ্দিন খান, যুগ্ম সচিব মোহা. হারুন-অর-রশীদ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, লাটভিয়া, সুইজারল্যান্ড ও রাশিয়ার এম্বাসির প্রতিনিধি। সমাপনীতেও দর্শকের প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।