নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত গ্রুপ থিয়েটার দিবসে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপিত হলো বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার দিবস

সত্তরের দশকে একদল স্বাপ্নিক ও মেধাবী যুবকের হাত ধরে এ দেশে মঞ্চনাটকের পথচলা শুরু। এই ধারাবাহিকতায়ই ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। বুধবার ৪৩ বছর  পূর্তি হয় সংগঠনটি। এ উপলক্ষে ফেডারেশনের ৪৩ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এদিন নাট্যনির্মাণ, আলোচনা সভা, পদক প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপিত হলো বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার দিবস। এ উপলক্ষে বুধবার বিকেল চারটা থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলসংলগ্ন প্রাঙ্গণ ছিল উৎসবমুখর।
এবারের আয়োজন ছিল ব্যতিক্রমী, বৈচিত্র্যময়। বিকেলে ঢাকার অর্ধশতাধিক নাট্যদলের মধ্যে নতুন নাটকের পাণ্ডুলিপি বিতরণ দিয়ে শুরু হয় নাট্যনির্মাণ; প্রশিক্ষক-নির্দেশক-অভিনেতা-অভিনেত্রী-কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে এই নাট্যনির্মাণ কার্যক্রম। ‘অবহেলায় মৃত্যু আর নয়’ স্লোগান নিয়ে প্রদীপ প্রজ্বালন করে ফিলিস্তানবাসীর প্রতি জানানো হলো ভালোবাসা ও সহমর্মিতা। শহীদদের স্মরণ ও ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশে পাঁচ শতাধিক নাট্যকর্মীর অংশগ্রহণে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। মিলনায়তনের বাইরে প্রথম পর্বের আয়োজনের পরপরই জাতীয় নাট্যশালায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্ব শুরু হয় সমবেত জাতীয় সংগীত দিয়ে।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে আয়োজন চলে যায় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। সে অনুষ্ঠানে বরেণ্য নাট্যজন আতাউর রহমানকে প্রদান করা হয়  গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সম্মাননা। তাঁকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন অতিথিরা। এ সময় বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে ঝুনা চৌধুরী, আকতারুজ্জামান, আহাম্মদ গিয়াসসহ অনেকেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
ফেডারেশন সভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। স্বাগত বক্তব্য দেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা।
সভাপতির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, গ্রুপ থিয়েটার দিবসে নতুন নাটক নির্মাণ, নাট্যব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান এবং নাট্যকর্মীদের সমবেত অংশগ্রহণে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এক অর্থে সামগ্রিক সাংস্কৃতিক প্রবহমানতায় নাট্যকর্মীদের অবদানের মূল্যায়ন এবং অগ্রযাত্রার নান্দনিক নিদর্শন।

সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতে হিংস্রতার বিপরীতে মানবতার বার্তা দেওয়া হয় যুদ্ধবিরোধী গণসংগীতে। অনেকগুলো কণ্ঠ এক স্বরে গেয়ে ওঠে, ‘আজ যত যুদ্ধবাজ দেয় হানা হামলাবাজ/ আমাদের শান্তি-সুখ করতে চায় লুটতরাজ ...।’  এরপর নাচের আশ্রয়ে ফিলিস্তিনের শহীদের স্মরণ এবং সেখানকার শিশুদের প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়।  ‘অবহেলার মৃত্যু আর নয়’ শীর্ষক কোলাজ নৃত্যটি পরিবেশন করে একাডেমির শিশু শিল্পীরা। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত  ‘ইতিহাস জানো তুমি’ গানের সুর উপস্থাপিত হয় ড্যান্স কোরিওগ্রাফিতে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ তুলে ধরেন শিল্পীরা। সব শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ মঞ্চায়ন করে ‘সিদ্ধান্ত’ শিরোনামের নাটক।