নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে মঞ্চস্থ ‘ঊরুভঙ্গম’

‘ঊরুভঙ্গম’ নাটকটিতে তুলে ধরা হয়েছে হিংসা ও লোভে আবৃত দুর্যোধনের স্বরূপসংগৃহীত

অন্ধকার মঞ্চটা ধীরে ধীরে আলোকিত হয়ে উঠল। বেজে উঠল শঙ্খ, মন্দিরা আর ঘণ্টা। বোধন সংগীতের মতো শ্লোকের উচ্চারণ, আবৃত্তির মতো সংলাপ আর ধ্রুপদি নৃত্যের সমাবেশে এগিয়ে চলে নাটক আর মুগ্ধ হয়ে তা উপভোগ করেন মিলনায়তনভর্তি দর্শক।
এভাবেই পরপর দুই সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাব প্রযোজিত নাটক ‘ঊরুভঙ্গম’। কবি ভাস রচিত ‘ঊরুভঙ্গম’ নাটকটি ‘মহাভারত’ মহাকাব্যের নবম পর্বের ঘটনা অবলম্বনে রচিত। এর মূল পাঠের সঙ্গে কাশীরাম দাস অনূদিত ‘মহাভারত’ মহাকাব্যের বিশেষ কিছু দৃশ্য সংযোজিত হয়েছে। মূলত মহাভারতের এই মহাযুদ্ধ কেন সংগঠিত হয়েছিল, তা যেন সাধারণ দর্শকদের সহজেই বোধগম্য হয়, তাই সংযোজনটা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মিলনায়তনে নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী ছিল ৩ মার্চ (রোববার) এবং দ্বিতীয় প্রদর্শনী ৪ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে।

‘ঊরুভঙ্গম’ নাটকটিতে তুলে ধরা হয়েছে হিংসা ও লোভে আবৃত দুর্যোধনের স্বরূপ। ছল ও মিথ্যার দ্বারা সে পঞ্চপাণ্ডবদের এবং তাদের অর্ধাঙ্গিনী দ্রৌপদীকে চরম লাঞ্ছনার সম্মুখীন করে এবং তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, যা পরে মহাযুদ্ধে রূপ নেয়। যুদ্ধ শেষে পরাজিত ও সর্বহারা দুর্যোধন ভীম কর্তৃক গদাযুদ্ধে বধ হন। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে এসে দুর্যোধন নিজের সব মোহ, অহংকার থেকে মুক্তি পায় এবং অন্যায় উপলব্ধি করে। পুরো নাটকটাই গীতি ও নৃত্যনাট্য।
‘ঊরুভঙ্গম’ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আতিকুল ইসলাম। নাটক সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য, ‘মৃত্যু তো আসবেই, জীবনের হাত ধরেই না হয় আসুক, যুদ্ধের হাত ধরে নয়।’ নাটকটির সংগীত পরিকল্পনা করেছেন মেহফুজ আল ফাহাদ, চলন ও দেহবিন্যাস করেছেন জুয়েরিয়া মৌলি, নির্দেশিনা সহযোগী, মঞ্চ ও পোশাক পরিকল্পনা করেছেন সৈয়দা ইফাত আরা, দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনা ও নির্দেশনা সহকারী কামরান আনান্দ। রূপসজ্জা পরিকল্পনা সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাবের সদস্যরা।

ঊরুভঙ্গম’ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আতিকুল ইসলাম
সংগৃহীত

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাব এর আগেও মঞ্চে এনেছে বুড়োসালিকের ঘাড়ে রোঁ: দ্য ডেড পিকক, দ্য মাউসট্র্যাপ, দ্য উড বি জেন্টলম্যান, দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস, ফাঁস, স্ক্যাপিন, অ্যান্ড দেয়ার ওয়্যার নান, দ্য কমেডি অব এররস, দ্য লিগ অব ইউথ, দ্য ব্লাড প্রেমা ধন, দ্য ইম্পর্ট্যান্স অব বিং আরনেস্ট, কিনু কাহারের থেটার, ফুয়েন্টে অভিযুনা, আ মিড সামার নাইটস ড্রিম, মহুয়া, শকুন্তলা, ওথেলো।

সিনে অ্যান্ড ড্রামা ক্লাবের ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজার প্রিয়াঙ্কা নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সব পারফরমার ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে নাটকটি মঞ্চস্থ করার জন্য। তাদের নাটকটি নিয়ে ভালো করার এই তীব্র ইচ্ছা আমাকে প্রতিটা সময় মুগ্ধ করে এবং সব সময় উদ্বুদ্ধ করে তাদের পাশে থেকে সুন্দর ও শৈল্পিক নাটকের মঞ্চায়ন নিশ্চিত করতে।’