আলকাপ রঙ্গরসে জমেছে আসর
বাবা বলছেন, ‘ছেলে আমার।’ মা-ও বলছেন, ছেলে তাঁর। ছেলে এখন কে পাবেন? মা ডাকলে ছেলে তাঁর কাছে যায়। বাবা ডাকলে যায় না। বাবাকে ডাকেও না। এ নিয়ে নানার কাছে নাতির দরবার। মঞ্চে এর সবকিছুই ঘটে রসালাপ, নাচ আর গানে গানে। রাজশাহী কলেজ মাঠে ‘লোকনাট্য সমারোহ’ উৎসবে গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলার তানোরের ‘আলকাপ রঙ্গরস গ্রাম থিয়েটার’-এর পরিবেশনা ছিল এটি।
বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনব্যাপী লোকনাট্য সমারোহ উৎসব শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ রাজশাহী কলেজ মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
আলকাপ রঙ্গরসে নাতির চরিত্রে অভিনয় করেন আলতাফ হোসেন (৬২), নানা আকবর আলী (৬০), নানির চরিত্রে সোনিয়া খাতুন, নাতবউ বিউটি ও ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিথি হেমরম। দোহারসহ এই পালায় অংশ নেন মোট ১২ জন শিল্পী।
নাতি গান ধরলেন, ‘ছেলে দাও ছেলে দাও, কার ছেলে কারে দাও। ছেলে দাও, ছেলে দাও।’ এই থিয়েটারের নিয়ম অনুযায়ী, একজনের গানের সঙ্গে মঞ্চে যাঁরা থাকেন, সবাই নেচে নেচে সেই গান করেন। পেছনে বসা দোহারেরা সেই গানের পুনরাবৃত্তি করেন। আর শিল্পীরা গানের সঙ্গে মিলিয়ে নাচেন। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে সংলাপ।
নানা নাতিকে বললেন, ‘তোর ছেলে তার কী প্রমাণ আছে।’ নাতি বললেন, ‘ছেলের জন্য যে বেশি কষ্ট করেছে, যে বেশি কষ্টের প্রমাণ দিতে পারবে, ছেলে হবে তার।’
নানা জানতে চাইলেন, ‘তুমি কী কষ্ট করেছ, তার প্রমাণ দাও।’ নাতি এবার কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘ছেলেকে নিয়ে হাটে গিয়েছিলাম। ছেলে জিলাপি খেতে চাইল। আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম আমার পকেটে কোনো টাকা নাই। কিন্তু ছেলে যে জিলাপি খাতে চাইল। আমি মাত্র দুখানা জিলাপি চুরি করলাম। এই দুখানা জিলাপি চুরির অপরাধে সারা হাটের লোক আমাকে ধরে পেটাল। তাহলে এই কষ্ট কি কম! তবে মার খেলেও আমি অপমানিত হইনি। কারণ, আমি আমার ছেলের জন্য জিলাপি চুরি করেছি। এখন আপনি বলেন, ছেলের জন্য তার মা কি এ রকম কোনো কষ্ট করেছে?’
এবার নানা ছেলের মাকে প্রশ্ন করলেন, ‘এর চেয়ে বেশি কি কষ্ট ছেলের জন্য তুমি করেছ?’ ছেলের মা গানে গানে বললেন, ‘সন্তান প্রসবের সময় মায়ের রক্ত পানি হয়ে যায়। বাবার কি এ রকম কোনো কষ্ট আছে?’ এভাবে অনেকক্ষণ ধরে বাহাস হয়। শেষে নানা ফয়সালা দেন, সন্তান মা-বাবা দুজনেরই। মাঝখানে তাঁদের কৌতুকপূর্ণ বাক্য বিনিময় হয়। একটু পরপর দর্শক হাসিতে প্রায় গড়িয়ে পড়েন। জমজমাট এ আসর চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।