শিল্পকলায় শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন উৎসবের পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ঢাকা, ২১ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

আগামী শুক্রবার ঢাকায় দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী শিল্প উৎসব শুরু হচ্ছে। ঢাকা থিয়েটার ও ব্রিটিশ কাউন্সিল যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করেছে। এতে দেশের আটটি বিভাগের প্রতিবন্ধী শিল্পীদের সংগঠন ‘সুন্দরম’ ও কলকাতার প্রতিবন্ধী শিল্পীদের একটি নাট্যদল অংশ নেবে। উৎসবে থাকবে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমিতে এ উৎসব চলবে শনিবার রাত পর্যন্ত।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেন উৎসবের পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উৎসবের তাৎপর্য ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের কর্মসূচি পরিচালক ডেভিড নক্স। আলোচনায় অংশ নেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইআইডির সিইও সাঈদ আহমেদ। প্রতিবন্ধীদের শিল্পসংগঠন সুন্দরম ও আইআইডি উৎসবে সহায়তা করছে। এবারের উৎসবের স্লোগান ‘সকলের সাথে সকলে মিলে মানবিক বিশ্ব গড়ব’।

শুক্রবার বেলা ১১টায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের তৈরি করা শিল্পকর্ম প্রদর্শনী দিয়ে উৎসবের সূচনা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বেলা তিনটায় জাতীয় নাট্যশালার মূলমঞ্চে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি। শনিবার রাত আটটায় এখানে সমাপনী অনুষ্ঠানের অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত; সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এবং সংস্কৃতিসচিব খলিল আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, দেশের প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ প্রতিবন্ধী। তাঁরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নিতে পারেন না। ঢাকা থিয়েটার ৫১ বছর ধরে থিয়েটার চর্চা করছে। মূলধারার সংস্কৃতিচর্চায় সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নাট্য ও শিল্পচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক যুগ ধরে দেশের আটটি বিভাগে প্রতিবন্ধীদের শিল্পসংগঠন ‘সুন্দরম’ গড়ে তোলা হয়েছে। এতে সহায়তা দিচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংলাপবিহীন নাটক ‘নৈঃশব্দ্যে ৭১ ’–এর একটি দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

নাসির উদ্দীন ইউসুফ আরও বলেন, সুন্দরমের প্রতিটি শাখায় বছরে আটটি করে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। গত ছয় বছরে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের নিয়ে ৩৮৪টি কর্মশালা হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত প্রতিবন্ধী নাট্য পরিচালক জেনি সেলি তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

তাঁর পরিচালনায় ২০১৬ সালে শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে প্রথমবার প্রতিবন্ধী শিল্পীদের নাটক ‘আ ডিফারেন্ট রোমিও জুলিয়েট’ মঞ্চস্থ হয়। এরপর ২০১৯ সালে সামিউন জাহানের পরিচালনায় নারী নির্যাতনবিষয়ক নাটক ‘ফিয়ারলেস’ এবং মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের আরেক খ্যাতিমান বাক্‌ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী নির্দেশক রমেশ মেয়াপ্পানের নির্দেশনায় ‘নৈঃশব্দ্যে-৭১’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দুই দিনব্যাপী উৎসবে সুন্দরমের ও কলকাতার প্রতিবন্ধী নাটকের দলের শিল্পীদের মোট ১০টি নাটক মঞ্চস্থ হবে। এ ছাড়া থাকবে সেমিনার, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।

জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ ‘এ ডিফারেন্ট রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নাটকের একটি মুহূর্ত
ফাইল ছবি

ডেভিড নক্স বলেন, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে ব্রিটিশ কাউন্সিল সহায়তা দিচ্ছে। বিশেষত শিল্পচর্চায় তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে এক যুগ ধরে এই কাজ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবন্ধী শিল্পীরা এত অসাধারণ কাজ করেছেন যে তাঁদের নাটকগুলো দর্শকদের অভিভূত করবে। চোখে পানি চলে আসবে।
উৎসবে অংশ নিতে ‘ https://dare-festival.com. এই লিংক থেকে নিবন্ধন করে নাটকের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। তবে উৎসবকেন্দ্রেও তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। টিকিট বিনা মূল্যেই পাওয়া যাবে।
প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে পাঁচটি করে নাটক মঞ্চস্থ হবে জাতীয় নাট্যশালার মূলমঞ্চে। প্রথম দিন সুন্দরম প্রযোজনা ‘নৈঃশব্দ্যে-৭১’।

এরপর থাকবে সুন্দরম চট্টগ্রামের নাটক ‘স্বপ্ন কাহন’, বরিশালের ‘সার্কাস সার্কাস’, খুলনার ‘অতঃপর করিম বাওয়ালী’ এবং রংপুরের নাটক ‘ত্রিবেণি’। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে থাকবে সুন্দরম সিলেটের নাটক ‘সঙগতি’, রাজশাহীর নাটক ‘পিতৃগণ’, ঢাকার নাটক ‘কেন্দ্র বরাবর সুড়ঙ্গটির নাম পৃথিবী’, ময়মনসিংহের নাটক ‘কাজলরেখা’ এবং কলকাতার জনসংস্কৃতি সেন্টার ফর দ্য থিয়েটার অব দ্য ওপ্রেসডের নাটক ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড আ জার্নি’।
উৎসবে নাটক ছাড়াও থাকবে প্রতিবন্ধীদের সমাজে অন্তর্ভুক্তি, চলাচলের সুগম ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনটি সেমিনার। সেমিনারগুলো হবে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনারকক্ষে। প্রথম দিনের সেমিনার হবে বেলা সাড়ে ১১টায়। পরের দিনে বেলা ১১টা ও বেলা সাড়ে ৩টায়।
চিত্রশালা মিলনায়তনে উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থাকবে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এ ছাড়া দুই দিনই একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থাকবে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের তৈরি হরেক রকম হস্ত ও কারুশিল্প এবং খাদ্যসামগ্রীর প্রদর্শনী।