ঢাকার মঞ্চনাটক নিয়ে এই প্রথম প্রতিযোগিতামূলক পুরস্কার

এবার বাতিঘরের ‘মাংকি ট্রায়াল’, নাট্যকেন্দ্রের ‘পুণ্যাহ’ ও দেশ নাটকের ‘পারাপার’ শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার মনোনয়ন পেয়েছেকোলাজ

বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে সাধারণত সম্মাননা ও পদক দিয়েই শিল্পীকে সম্মানিত করা হয়। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক পুরস্কারের খুব একটা চল ছিল না। প্রয়াত নাট্যকর্মী ইশরাত নিশাতের নামে এবার চালু হলো তেমনই একটি পুরস্কার। আয়োজকদের আশা, এই বার্ষিক পুরস্কারের কল্যাণে ভালো নাটকগুলোর যথার্থ মূল্যায়ন হবে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঘোষণা করা হয় ‘ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার–২০২২’–এর মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঘোষণা করা হয় ‘ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার–২০২২’–এর মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা। গত ২০২১ ও ২০২২ সালের ঢাকার পাঁচটি মঞ্চে প্রদর্শিত মোট ১৭টি নাটক দেখে আটটি বিভাগে মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করে ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার বাস্তবায়ন কমিটি। ১৯ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম, দেওয়া হবে পুরস্কার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় বসবে পুরস্কার বিতরণীর আসর। প্রতিটি পুরস্কারের আর্থিক সম্মাননা হবে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা। বিজয়ী পাবেন একটি ক্রেস্ট ও সনদ।

‘ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার–২০২২’–এর বিভিন্ন বিভাগে মনোনীত ব্যক্তিরা হলেন
শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা: ‘মাংকি ট্রায়াল’ (বাতিঘর), ‘পুণ্যাহ’ (নাট্যকেন্দ্র) ও ‘পারাপার’ (দেশ নাটক)।
শ্রেষ্ঠ নির্দেশক: মুক্তনীল, ইউসুফ হাসান অর্ক, ফাহিম মালেক ইভান।
শ্রেষ্ঠ নাট্যকার: বদরুজ্জামান আলমগীর, মাসুম রেজা ও আবদুস সেলিম।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (নারী): সংগীতা চৌধুরী, মনামী ইসলাম কনক, কাজী রুকসানা রুমা।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (পুরুষ): প্রশান্ত হালদার, খালিদ হাসান রুমি, সুকর্ণ হাসান।
শ্রেষ্ঠ মঞ্চ পরিকল্পনা: ফজলে রাব্বি সুকর্ণ, ইউসুফ হাসান অর্ক, মুজিবুল হক।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিকল্পনা: শিশির রহমান, সেলিম মাহবুব, ইউসুফ হাসান অর্ক।
শ্রেষ্ঠ আলোক পরিকল্পনা: অম্লান বিশ্বাস, মোহাম্মদ আলী হায়দার।
ইশরাত নিশাত

আয়োজকেরা জানান, এখন থেকে প্রতিবছরই এই পুরস্কার দেওয়া হবে। এ বছর অধ্যাপক আবদুস সেলিমকে প্রধান বিচারক করে সাত সদস্যের একটি জুরিবোর্ড করা হয়। সেখানে সদস্য ছিলেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি, দেবপ্রসাদ দেবনাথ, ইউসুফ হাসান অর্ক, মোহাম্মদ আলী হায়দার, কামালউদ্দিন কবির ও আইরিন পারভীন লোপা। শ্রেষ্ঠ নির্দেশক, শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (পুরুষ), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (নারী), শ্রেষ্ঠ মঞ্চ পরিকল্পনা, শ্রেষ্ঠ আলোক পরিকল্পনা, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিকল্পনা ও শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা বিভাগে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ বছর আটটি শাখায় পুরস্কার দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে আরও শাখা বাড়ানোর ইচ্ছা আছে আয়োজকদের।

ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার বাস্তবায়ন করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার চেয়ারপারসন, কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সদস্যরা হলেন রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, আসাদুজ্জামান নূর, ম হামিদ, মামুনুর রশীদ, সারা যাকের, লাকী ইনাম, লিয়াকত আলী লাকী, গোলাম কুদ্দুছ, তারিক আনাম খান, রোকেয়া রফিক বেবী, কামাল বায়েজীদ, মাসুম রেজা ও কামাল আহমেদ।

পুরস্কার আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী সেলিনা শেলীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘একজন সার্বক্ষণিক নাট্যকর্মী হিসেবে আমরা নিশাতকে দেখতে পেয়েছিলাম। সেই নিশাতের চলে যাওয়াটা অনেক বড় ধাক্কা। এখন আমরা বুঝতে পারি, আমরা যখন কোনো রকম একটি সংকট নিয়ে আলোচনা করি, তখন নিশাতের তীব্র বাক্যগুলো এখন আর কেউ উচ্চারণ করে না।’

নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা বলেন, ‘আমরা এই পুরস্কারের কথা দলীয় ভাবনা থেকে একেবারেই ভাবিনি। আমরা দেখেছি, শুধু থিয়েটারের জন্য আমরা কোনো ব্যবস্থাপনা করতে পারিনি। যে সম্মাননা পাই, এটা সারা জীবনের নাটকের অর্জনের জন্য। কিন্তু আমার প্রতিবারের কাজের যে মূল্যায়ন, সেই মূল্যায়ন থিয়েটারে কখনো হয় না। আমরা চেয়েছি যে এই মূল্যায়ন প্রতি বছর হোক। এটি সরকারি পর্যায় থেকে আয়োজিত হোক। এটি পরে জাতীয় পুরস্কার নামে প্রবর্তিত হোক।’ ‘ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার–২০২২’–এর পৃষ্ঠপোষকতা করছে এসকেএস ফাউন্ডেশন।