অক্সিজেন বন্ধ করে চিকেন ফ্রাই চাই না

সারা বিশ্বে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সাম্প্রতিক ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, পরেরবার যখন বিশ্বে যুদ্ধ লাগবে, সেটা হতে পারে অক্সিজেন বা পানির জন্য। পরিবেশ ধ্বংস করায়, জলবায়ু বদলে যাওয়ায় সচেতন মানুষ পৃথিবীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এমন অবস্থায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট বানানোর উদ্যোগকে ‘আত্মঘাতী’ বলে জানিয়েছেন কয়েকজন সংস্কৃতি কর্মী।

পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নকে 'না'
সংগৃহীত

তাঁরা পারফর্মিং আর্টের মাধ্যমে এই বার্তা দিয়েছেন। সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই বার্তা দিতে পারফর্ম করেন কাজী নওশাবা, শাহাদাত রাসেল, মনীষা অর্চিসেওহ আরও অনেকে। আয়োজনটিতে আরও পারফর্ম করে শিশুশিল্পী প্রকৃতি ও ঊষশী। সোমবার বিকেল চারটায় অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী এই পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শনী।

আয়োজনটি নিয়ে অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রকৃতিকে আঘাত না করে সভ্যতার পথ ধরে হাঁটতে চাই। সকল প্রাণী ও প্রকৃতিকে নিরাপদ রেখেই এগিয়ে যেতে চাই উন্নয়নের পথে। প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়ন চাই। প্রকৃতি ধ্বংস করে সবুজ নিধন করে কোনো উন্নয়ন চাই না। অক্সিজেন বন্ধ করে চিকেন ফ্রাই, ফ্লাইওভার চাই না। আমরা এই বার্তাটিই সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি। গাছ কাটা মানে নিজের শিকড় কাটা। আর শিকড় কেটে কেউ বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। এই উন্নয়ন টিকবে না।’  

গাছ আমাদের বন্ধু, স্বজন
সংগৃহীত

আয়োজনটি নিয়ে আয়োজক চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহাদাত রাসেল বলেন, ‘জাতীয়ভাবে ঐতিহ্যবাহী ও বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে ৭ মার্চের প্রতিটি স্তরের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উন্নয়নের নামে নির্বিচার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এভাবে প্রকৃতি ধ্বংস পৃথিবীকেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গাছ কাটার মাধ্যমে আমরা নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছি। নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছি।’

এর আগে গত শনিবার মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।  গণমাধ্যমে পাঠানো ১০টি জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনের যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ১১টি জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশন যৌথ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ব্যঞ্জনা উপলব্ধি করতে পারে, তার জন্যই এই বিশাল চত্বর বা উদ্যানের অবয়ব সংরক্ষণ করা জরুরি।

পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নকে 'না'
সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থানটিতে বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ভাস্কর্য নির্মাণ করে সামনে বিশাল খোলা প্রান্তর অক্ষত রাখা হোক। আর যে স্থানটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সে স্থানেও স্মারক বা স্মৃতিফলক রাখা হোক। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব ধরনের হোটেল নির্মাণ ও পাঁচ শ গাড়ি পার্কিংয়ের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কোনো বিনোদনকেন্দ্র নয়, এটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং অক্সিজেনের অফুরন্ত উৎসকে নিধন করা হচ্ছে।

চলছে পারফর্মিং আর্ট
সংগৃহীত

বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো হলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, আইটিআই, বাংলাদেশ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার।