এই সময়েও প্রাসঙ্গিক নাটকটি

‘পাকে বিপাকে’ নাটকের দৃশ্যসংগৃহীত

শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশমুখে গিয়ে বোঝা যায়, করোনার সংক্রমণ নিয়ে এখন চলছে কড়া সতর্কতা। তাই কেবল খুলে রাখা হয়েছে মৎস্যভবনঘেঁষা ফটকটি। সেখানেও নিরাপত্তারক্ষী, কড়া প্রহরায় জানতে চাইলেন, ‘কোথায় যাবেন?’ গত মঙ্গলবার সেই প্রশ্নে জবাব দিই, ‘মহড়াকক্ষে।’

শিল্পকলা একাডেমির ৪ নম্বর মহড়াকক্ষকে সেদিন বিলে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। দুই দিকে দুটো কাকতাড়ুয়া। এক কোণে মাচায় চাদর মুড়ি দিয়ে বসে একজন, হারিকেন জ্বলছে টিম টিম করে, পাশে বন্দুক। পাশ থেকে যাচ্ছিল বর্গাচাষি জনার্দন। তার পায়ে কামড়ে দেয় কিছু একটা, আবোলতাবোল বকতে শুরু করে সে। সেখান থেকে শুরু হয় শোষক জোতদার নবকৃষ্ণকে গালাগাল। হঠাৎ মাচার দিকে চোখ পড়তেই সে ভড়কে যায়। চাদর মুড়ি দিয়ে ঝুলে আছে স্বয়ং নবকৃষ্ণ! বিলের ধানে বর্গাচাষিদের অধিকার আছে, সূর্য ওঠার আগে সেই ধান কেটে নিয়ে যাবে সে!

‘পাকে বিপাকে’ নাটকের মহড়ার দৃশ্য
সংগৃহীত

নবকৃষ্ণ ও জনার্দনের দীর্ঘ কথোপকথন চলতে থাকে। তাতে উঠে আসে বিলকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই জনপদের বর্গাচাষিদের ওপর জোতদারের শোষণের কাহিনি। নাটকের গল্প দেখে মনে আসে প্রশ্ন, নাটকের গল্পে সামন্তবাদের ছোঁয়া। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগেও কি চলছে না শোষণ? মঞ্চের জন্য এই নাটক নির্বাচনের কারণ কী? নির্দেশক সঞ্জীব কুমার দে জানালেন, এই সময়েও প্রাসঙ্গিক এই নাটক। শাসক ও শোষিতের সম্পর্কের টানাপোড়েন কোনো দেশ, কাল, পাত্র মেনে চলে না। শাসকের রূপ বদলায়, শাসনের ধরন বদলায়। কিন্তু বদলায় না শোষিতের ভাগ্য।

‘পাকে বিপাকে’ নাটকের দৃশ্য
সংগৃহীত

করোনায় থেমে নেই পদাতিক নাট্য সংসদের কর্মীরা। মঞ্চে নিয়ে এসেছে নতুন নাটক পাকে বিপাকে। গত মঙ্গলবার তাঁদের সন্ধ্যা যায় মনোজ মিত্রের লেখা এই নাটকের মহড়ায়। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নাটকটি দেখা যাবে শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তন মঞ্চে।

থিয়েটার একটি যুথবদ্ধ চেষ্টা। করোনা চায় সামাজিক দূরত্ব। তবে উপায় কী? প্রাথমিক মহড়ায় তাই পদাতিকের কর্মীরা বেছে নিলেন অনলাইনকে। তুব থিয়েটারের সঙ্গেই ছিলেন তাঁরা। দলটির সাধারণ সম্পাদকের কণ্ঠে সেই আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ে। মমিনুল হক জানান, তাঁরা চেয়েছিলেন একটি বড় নাটক নিয়ে আসবেন মঞ্চে। করোনার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। তবে দমে যাননি। অল্প কয়েকটি চরিত্র নিয়ে তাঁরা শুরু করেন পাকে বিপাকে। তার চেয়েও বড় কথা, ঢাকার মঞ্চে অভিনয়নির্ভর নাটক হচ্ছে না খুব একটা। এই নাটক অভিনয়কেন্দ্রিক। তাঁর আশা, দর্শক বঞ্চিত হবেন না।