এদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে, যেটা মানুষ মনে রাখবে

এখনো ঘর থেকে বের হচ্ছেন না নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের করাচ্ছেন শাস্ত্রীয় নাচের অনুশীলন ক্লাস। সম্প্রতি বেড়ে যাওয়া ধর্ষণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে শিল্পাঙ্গনের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বললেন এই তারকা।
শিবলী মহম্মদ। ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

নাচের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসকে কীভাবে নিয়েছে? সশরীরে ক্লাস শুরু করার ইচ্ছে কবে থেকে?

ঘরে বসে থাকার চেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অনলাইন ক্লাসটা বরং বেশি ভালো লাগছে। তারা ভীষণ উপভোগ করছে। শতাধিক শিক্ষার্থী সপ্তাহে চার দিন করে ক্লাস করছে। ঘরে বসে থাকার একঘেয়েমি কাটাতে এটা তাদের ভীষণ উপকার করছে, পাশাপাশি তারা পিছিয়ে পড়ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে আমরা সশরীরে ক্লাস চালু করব না। সেটা করা ঠিকও হবে না। ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপারে শিক্ষক হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

শিবলী মহম্মদ। ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

চার দিন ক্লাস। বাইরে বের হচ্ছেন না। বাকি সময় কীভাবে কাটাচ্ছেন?

মায়ের সঙ্গে গল্প করি। আমার সৌভাগ্য যে মা আমাদের সঙ্গে আছেন এখনো। বিকেলে ভাই-বোনেরা বিদেশ থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে কথা বলে। করোনাকালে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, মায়ের সঙ্গে আমরা প্রচুর সময় কাটাতে পেরেছি। মাকে ঘিরেই আমাদের পৃথিবী।

প্রশ্ন :

ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে মানুষ পথে নেমেছে। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

মানুষ তো পথে নামবেই। ধর্ষণের যে বিচার হয় না সেটা স্পষ্ট। যাবজ্জীবন বা কয়েক বছরের জেল-জরিমানা হলে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে আসে। কয়েক দিন বা মাস কিংবা বছর জেলে থাকা তাদের জন্য কঠিন নয়। ভীষণ মানসিক বিকৃতি না থাকলে কেউ ধর্ষণ করে? এদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে, যেটা মানুষ মনে রাখবে। শাস্তি এমন হতে হবে, যাতে মানুষ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।

শিবলী মহম্মদ
সংগৃহীত
পয়সা খরচ করে শিশুদের ভালো স্কুলে পাঠিয়ে দিলেই হয় না, তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি ঘরে তাদের নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হয়।

প্রশ্ন :

পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা নিশ্চয়ই ধর্ষণ রোধে ভূমিকা রাখতে পারে?

পারিবারিক শিক্ষার বিষয়টা যেন একপ্রকার উঠেই গেছে। শিশুদের বই পড়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে গেছে। মা-বাবারাও শিশুদের সেইভাবে সময় দেয় না। শৈশব-কৈশোরে আমরা সুকুমার রায় পড়েছি, কত কত বই পড়েছি। এখনকার বাচ্চারা ফেসবুক পড়ে! প্রয়োজন নেই তবু অষ্টম-নবম শ্রেণিতে উঠলেই অভিভাবকেরা তাদের স্মার্টফোন কিনে দেয়। চাইলেই শিশুদের সবকিছু দিতে নেই, এটা খুব মন্দ প্রবণতা। এ ছাড়া শিশুদের সামনে মা-বাবারা অনেক সময় ঝগড়া-বিবাদ করে, যেটা শিশুদের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পয়সা খরচ করে শিশুদের ভালো স্কুলে পাঠিয়ে দিলেই হয় না, তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি ঘরে তাদের নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হয়। হইচই, আনন্দ, নাচ-গানের মধ্যে থাকলে শিশুরা কিন্তু মাদক থেকেও দূরে থাকতে পারে।

প্রশ্ন :

ধর্ষণের মতো অপরাধ কমাতে শিল্পীরা কীভাবে অবদান রাখতে পারেন?

নাটক, সিনেমা, নৃত্যনাট্যে ধর্ষণের ভয়াবহতা এবং এর শাস্তির কঠোর দিকগুলো তুলে ধরা যায়। ধর্ষণের চেয়ে বরং মানবিক হয়ে মানুষকে সহযোগিতা করাকে বেশি মহিমান্বিত করে দেখাতে হবে। আমরা আগাগোড়া সেটাই করে আসছি। এখন আরও তীব্রভাবে করা দরকার। তা ছাড়া শিল্পীরা ধর্ষণের প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে পথে নামতে পারে। তারাও সমাজের মানুষ, তারাও মন্দকে মন্দই বলবে।

কৃষ্ণের ভূমিকায় শিবলী মহম্মদ। ছবি: আবদুস সালাম

প্রশ্ন :

টিভি ও মঞ্চের অনুষ্ঠান কবে থেকে শুরু করবেন?

বিটিভিতে ‘তারানা’ নামে নাচের যে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানটি চলছিল, সেটা শিগগিরই আবার শুরু হবে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, আমরা সম্মতি দিয়েছি। এ মাসের শেষ বা সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে হয়তো আবারও শুরু করব। তবে ভিড় এড়াতে এখন আপাতত দলীয় নৃত্য থাকবে না। কেবল একক নৃত্যের প্রতিযোগিতা হবে।