চাঙা হচ্ছে নাট্যাঙ্গন

প্রাচ্যনাট আয়োজিত উঠান নাটকের মেলা ‘মহলা মগন’ শুরু হলো গতকাল শুক্রবার থেকে। মঞ্চনাটকের মানুষেরা আবারও মঞ্চে ফিরে আসছেন। চাঙা হচ্ছে এই অঙ্গন।

‘দ্য জু স্টোরি’ নাটকের দৃশ্যসংগৃহীত

করোনার কারণে টানা প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ ছিল মঞ্চনাট্যাঙ্গন। গত ২৮ আগস্ট বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে ‘লাল জমিন’ নাটকের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ফের শুরু হয় নাটক প্রদর্শনী। এবার প্রাচ্যনাট আয়োজিত উঠান নাটকের মেলা ‘মহলা মগন’ শুরু হলো গতকাল শুক্রবার থেকে। মঞ্চনাটকের মানুষ আবারও মঞ্চে ফিরে আসছেন। চাঙা হচ্ছে এই অঙ্গন।

গতকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রাচ্যনাটের মাসব্যাপী এই আয়োজন। উদ্বোধনী দিনে মঞ্চস্থ হলো ‘দ্য জু স্টোরি’। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাচ্যনাট আয়োজিত এই আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহলা মগন’ উঠান নাটকের মেলা ২০২০।

‘অবসাদ বিরুদ্ধ স্রোত’ স্লোগান নিয়ে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর কাঁটাবনে প্রাচ্যনাটের নিজস্ব মহড়াকক্ষে।

প্রাচ্যনাট আয়োজিত মাসব্যাপী এই আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহলা মগন’ উঠান নাটকের মেলা ২০২০। ‘অবসাদ বিরুদ্ধ স্রোত’ স্লোগান নিয়ে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর কাঁটাবনে প্রাচ্যনাটের নিজস্ব মহড়াকক্ষে।

গতকাল সন্ধ্যায় নাট্যমেলার উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ ও পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস। তাঁদের কথায়, প্রাচ্যনাটের এই উদোগ্য প্রশংসার দাবি রাখে। কাউকে না কাউকে এই সময়ে এগিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রাচ্যনাট এগিয়ে এসেছে। তাদের ধন্যবাদ জানান নাটকের এই নেতারা। তাঁরা মহিলা সমিতিতে নাটকের প্রদর্শনী করারও প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া প্রাচ্যনাটের মুখ্য সম্পাদক কাজী তৌফিকুল ইসলাম, শতাব্দী ওয়াদুদসহ প্রাচ্যনাটের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

‘দ্য জু স্টোরি’ নাটকের দৃশ্য
সংগৃহীত

এডওয়ার্ড অ্যালবি রচিত ‘দ্য জু স্টোরি’ নাটকটি অনুবাদ করেছেন আশফাকুল আশেকীন। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম। প্রাচ্যনাট সূত্র জানিয়েছে, আজ শনিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় নাটকটির আরেকটি প্রদর্শনী হবে। প্রতি প্রদর্শনীতে দর্শনীর বিনিময়ে ২০ জন দর্শক নাটক দেখার সুযোগ পাবেন।

‘দ্য জু স্টোরি’ নাটকের গল্পে দেখা যায়, বই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত পিটার একজন উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষ, যাঁর ঘরে স্ত্রী ও দুটি মেয়ে আছে। চল্লিশোর্ধ্ব পিটার পার্কের বেঞ্চে বসে বই পড়তে থাকেন। তাঁর চেয়ে কয়েক বছরের ছোট জেরি নামের এক লোক সেই বেঞ্চের কাছে আসেন। তিনি যেনতেন পোশাক পরা। এই লোকটি এসে পিটারকে বলেন, তিনি সেন্ট্রাল পার্ক চিড়িয়াখানা থেকে এসেছেন। পিটার কোনো উত্তর দেন না কিন্তু জেরি গায়ে পড়ে কথাবার্তা শুরু করতে চান। কারণ, জেরি ভীষণ একা এবং যে কারও সঙ্গে একটু যোগাযোগ তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন।

নির্দেশক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যখন সমাজ একদিক থেকে কোনো কিছু দেখে, তখন আসল রূপটা আমাদের নজরে আসে না। সাজানো ছবি আমাদের ভুল দিকনির্দেশনা দেয়। সত্যিটা আমরা ধরতেই পারি না। চিড়িয়াখানায় জন্তুরা যখন তাদের দিক থেকে আমাদের দেখে, আমাদের হাসি, হাততালি দেওয়া দেখে, হয়তো ভাবে কী হাসিখুশি পরিবার, কী শান্তির জীবন আমাদের। আমরা আমাদের দিক থেকে যখন খাঁচার প্রাণীটিকে দেখি, ভাবি ভালোই তো আছে ওরা।’

নাটকটিতে অভিনয় করেছেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ও আহমেদ সাকি। সংগীত পরিকল্পনায় রিফাত নোবেল, প্রয়োগে ছিলেন আন্দোলন মিঠুন ও অদ্রিজা আমিন। আলোক প্রয়োগে মোখলেছুর রহমান ও ফয়েজ রাকিব। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন তানজিকুন এবং মঞ্চ অধিকর্তা ছিলেন শ্রাবণ শামীম।

মাসব্যাপী আয়োজনে ‘দ্য ডাম্ব ওয়েটার’ ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর, ‘হান্ড্রেড বাই হান্ড্রেড’ ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর, ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’ ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ‘ফাউস্ট অথবা অন্য কেউ’ আগামী ২ ও ৩ অক্টোবর দেখা যাবে।

নাটক প্রদর্শনীর পর দ্বিতীয় পর্বে ‘মনঃসামাজিক বিশ্লেষণ ও বর্তমান’ নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার। মাসব্যাপী আয়োজনে ‘দ্য ডাম্ব ওয়েটার’ ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর, ‘হান্ড্রেড বাই হান্ড্রেড’ ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর, ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’ ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ‘ফাউস্ট অথবা অন্য কেউ’ আগামী ২ ও ৩ অক্টোবর দেখা যাবে।