তারকার কাছে তারকা যাঁরা

টেলিভিশন ও সিনেমার অনেক তারকাই একসময় পেশায় শিক্ষক ছিলেন। কেউ কেউ এখনো শিক্ষক। শিক্ষক দিবসে তাঁদের কণ্ঠে উঠে এল প্রিয় শিক্ষক ও শিক্ষকতা পেশা নিয়ে অনুভূতি।

ফেরদৌসী মজুমদার, অভিনয়শিল্পী
আমি আজিমপুর অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, মাস্টারমাইন্ড স্কুল ও পরে ১৮ বছর শিক্ষকতা করেছি সানবিমস স্কুলে। আমার বাচ্চারা আমাকে পছন্দ করত। আমি তখন মুসলিম গার্লস স্কুলে পড়ি।

ফেরদৌসী মজুমদার

আমার একজন শিক্ষক ছিলেন সালমা রহমান। আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। আমি যে ইংরেজিতে বিশেষ ভালো ছিলাম এমন নয়। তবে তিনি আমার বাক্য গঠন পছন্দ করতেন। নানাভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি আমার একজন প্রিয় শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ড. আনিসুজ্জামান আমাদের বিসর্জন নাটক পড়াতেন। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আবু হেনা মুস্তফা কামাল, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানও আমার অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক।

দিলারা জামান, অভিনয়শিল্পী
শিক্ষক হিসেবে কেমন ছিলাম, জানি না। গ্রামে কিংবা বিদেশে গেলে দূর থেকে ছাত্ররা দেখা করতে আসে। তখন শিক্ষক হিসেবে প্রশান্তিতে মনটা ভরে যায়। আমার ছাত্ররা ভালো অবস্থানে আছে, শুনলে আমার তৃপ্তি আসে।

দিলারা জামান
ছবি : সংগৃহীত

বিদেশে একবার বিমানবন্দরে বিপদে পড়েছিলাম, সেখান এক ছাত্র আমাকে রক্ষা করেছিল। এটুকুই মনে হয়, শিক্ষক হিসেবে নিঃস্বার্থভাবে ছাত্রদের ভালোবাসতে পেরেছি। আমি যশোরের একটি স্কুলে পড়াশোনা করতাম। আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন ইউসুফ আলী। আমার মতো অমনোযোগী ছাত্রীকে স্যার গল্প শুনিয়ে পড়া আদায় করতেন, এটা আমাকে খুব আনন্দ দিত।

রহমত আলী, অভিনয়শিল্পী
জন্মের পর থেকেই আমরা মা–বাবা, পরিবার ও আশপাশের সবার কাছ থেকে শিখি। তারপর শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখি। শিক্ষা বলতে অ আ ই ঈ পড়ে শেখা নয়, স্বভাব–চরিত্র, চলন-বলন-পঠন—সবকিছুই শেখা। এটি মহৎ একটি পেশা। কোনো কিছু দিয়ে এটাকে মূল্যায়ন করতে পারি না। ৩১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি।

রহমত আলী-ওয়াহিদা মল্লিক জলি
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগ দিয়ে শিক্ষকতার শুরু। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। শিক্ষকতার পাশাপাশি আনন্দচিত্তে অভিনয় করি। শিক্ষকতা করে আমি কখনোই ক্লান্ত হই না। আমার যিনি প্রিয় শিক্ষক, মাস্টার তোফাজ্জল হোসেন, আমার নাট্যশিক্ষক। আমার দৃষ্টিতে তিনি মহান শিক্ষক।

ওয়াহিদা মল্লিক জলি, অভিনয়শিল্পী
আমি নাটকের শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে নাটকে অভিনয় করি। আমার বাবাও শিক্ষক ছিলেন। তখন রাজশাহী থাকতাম। ছোটবেলা থেকে যা করতাম, যা ভালোবাসতাম, আমার সেই ভালোবাসার বিষয়ই পড়াচ্ছি। তাই আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। বাবা আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষক। মা–ও কিন্তু কম নন, তিনি খুব ভালো সেতার বাজাতেন। আমি আসলে একজনকে প্রিয় শিক্ষক বলতে পারব না। আমার ছাত্রছাত্রীদেরও শিক্ষক মনে হয়, তাদের কাছ থেকেও প্রতিনিয়ত শিখি। আমার মনে হতো, আনিসুজ্জামান স্যারের সঙ্গে দেখা হওয়া মানেই শিক্ষার বিশাল দরজা খুলে যাওয়া। কার নাম বলব। মমতাজ আপা বলে আমাদের একজন ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন, তাঁর অসাধারণ বাংলা উচ্চারণ আমাকে মুগ্ধ করত।

তাহসান রহমান খান

তাহসান খান, অভিনয়শিল্পী ও সংগীতশিল্পী
চার বছরের বেশি আমি আর শিক্ষকতা করছি না। তবে আমার এই শিক্ষক ‘আমি’কে খুব মিস করি। এক দশক ধরে শিক্ষকতা করেছি। আমার শিক্ষার্থীরা আমাকে খুবই পছন্দ করত। বার্ষিক মূল্যায়নে ছাত্রদের কাছ থেকে আমি অনেক নম্বর পেতাম। আজ আমি যা, তার পেছনে অনুঘটক হিসেবে আছে আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা।