থিয়েটার আনছে ‘পোহালে শর্বরী’

গতকাল বুধবার জাতীয় নাট্যশালায় থিয়েটারের নতুন নাটক পোহালে শর্বরীর চূড়ান্ত মহড়া হয়। আগামীকাল শুক্রবার নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে। ছবি: সংগৃহীত

সকালে মেঘ–রোদের লুকোচুরি চললেও দুপুর থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টির ধারা। গতকাল বুধবার আষাঢ়ের ১৫তম সন্ধ্যায় থিয়েটারের সদস্যরা হাজির হয়েছিলেন জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। তাঁরা ব্যস্ত নতুন নাটকের চূড়ান্ত মহড়ায়। আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দর্শক দেখবেন তাঁদের নতুন নাটক পোহালে শর্বরী।
নানা কারণে থিয়েটারের এ নতুন নাটক উল্লেখযোগ্য। ১৯৭২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করা দেশের পথিকৃৎ নাট্যদল হিসেবে তাদের নাম আসে শুরুতেই। দলের ৫০ বছর পূর্তি ছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। ৫০ বছরের উজ্জ্বল যাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে নতুন নাটক আনছে দলটি। নিজেদের সক্রিয়তার জানান দিচ্ছে তারা। সর্বশেষ থিয়েটার নতুন নাটক মঞ্চে আনে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে, মায়া নদী। সাড়ে ৬ বছর পর মঞ্চে আনছে তাদের ৪৭তম প্রযোজনা পোহালে শর্বরী। বহু বছর পর নতুন কোনো নাটকের নির্দেশনা দিচ্ছেন রামেন্দু মজুমদার।

এমনিতে মহড়ায় বাইরের মানুষের প্রবেশের সুযোগ থাকে না। দলের কান্ডারি রামেন্দু মজুমদারের অনুমতি নিয়ে নাটকের চূড়ান্ত মহড়ায় (রান থ্রু) ঢুকে রীতিমতো উৎসবের আবহ দেখা গেল। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, কোরাস সদস্য ছাড়া ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের এ নাটকে ৮ জন করে মোট ১৬ জন মূল শিল্পী কাজ করছেন। অর্থাৎ একই চরিত্রে দুজন করে শিল্পী অভিনয় করবেন। একেক শোতে একেক শিল্পী।

রামেন্দু মজুমদার
সংগৃহীত

হিন্দি ভাষার সাহিত্যিক সুরেন্দ্র বর্মার রচনা থেকে নাটকটি অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক। নির্দেশনা দিচ্ছেন রামেন্দু মজুমদার এবং সংযুক্ত নির্দেশনায় আছেন ত্রপা মজুমদার। নাটকটির পোশাক পরিকল্পনা করছেন নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার।

বিষয়বস্তুর কারণে নাটকটি মঞ্চে আনতে আগ্রহ দেখিয়েছে থিয়েটার, এমনটাই জানালেন রামেন্দু মজুমদার। প্রায় ২০ বছর পর কোনো নাটকের নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ মাধবী নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন ২০০৩ সালে। এর আগেও নারীপ্রধান একাধিক নাটক মঞ্চে এনেছেন তাঁরা। রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘মহাভারতের “মাধবী” থেকে আমাদের কালের “কোকিলারা” কেবল পুরুষের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়েছে। তেমনি দেড়-দুই হাজার বছরের আশপাশে এক কালখণ্ডে রাজবংশের উত্তরাধিকারের সংকটে নারীকে তার কামনা-বাসনার কোনো মূল্য না দিয়ে নিছক সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করার কাহিনি দেখা গেছে নাটকে। পাশাপাশি রয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন ও রাজনীতির কূটকৌশল; একইভাবে পুরুষও যার শিকার হয়েছে।’ নির্দেশকের মতে, সামাজিক বিধিবিধান, ব্যক্তিমানস, বিশেষ করে নারীর চাওয়া-পাওয়াকে মর্যাদা দিতে এখনো উদাসীন। পোহালে শর্বরী যদি দর্শকদের এ বিষয়ে কিছুটা হলেও ভাবায়, তবেই তাঁদের চেষ্টা অর্থবহ হয়েছে বলে মনে করবেন নির্দেশক।

নাট্যকার অংশুমান ভৌমিকের কথায় জানা যায়, হিন্দি ভাষায় লেখা সুরেন্দ্র বর্মার নাটকটির বয়সও ৫০ হয়েছে এ বছর। ১৯৭২ সালে মারাঠি ভাষায় এ নাটকের প্রথম প্রযোজনা করেছিলেন অমল পালেকর। পরে হিন্দিতে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার রেপার্টরি কোম্পানির জন্য রামগোপাল বাজাজ তিনবার নির্দেশনা দিয়েছেন।

ভারতজুড়ে সাড়া ফেলা নাটকটি প্রথমবারের মতো বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে অংশুমান নজর দিয়েছিলেন মূল নাটকের চলন ও মেজাজে, যাতে বিন্দুমাত্র চিড় না ধরে। তাঁর ভাষায়, ‘এর স্থান-কাল-পাত্রের সঙ্গে আমাদের সময়ের জীবনযাত্রা ও জীবনচর্যার মিল-অমিলগুলো মাথায় রেখেছিলাম।’

দুই বছরের বেশি সময় আগে নাটকটির কাজ শুরু করেছিল থিয়েটার। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে মাঝে প্রস্তুতিতে ভাটা পড়ে। ‘নাটকটির প্রতিটি চরিত্রের জন্য আমরা দুজন করে অভিনয়শিল্পী তৈরি করেছি। ফলে একদিকে যেমন দলের বেশি কর্মী কাজের সুযোগ পেয়েছেন, অন্যদিকে কারও সমস্যার কারণে যেন প্রদর্শনী থেমে না যায়, সেটিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে,’ বললেন রামেন্দু মজুমদার। নাটকের অভিনয়শিল্পী ও সংযুক্ত নির্দেশক ত্রপা মজুমদার জানালেন, তিনিও আশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন এই নাটকের জন্য। দীর্ঘদিন পর নতুন নাটক মঞ্চে আসায় তিনি যেমন রোমাঞ্চিত, তেমনি অবাকও। এত দিন কোনো নতুন নাটক করা হয়নি! ‘আসলে আমরা তো নিয়মিতই পুরোনো নাটকের শো করি। নিয়মিতই মঞ্চে থাকি। নতুন নাটক যে হচ্ছিল না, তা বুঝতেও পারিনি,’ বলছিলেন ত্রপা মজুমদার।

ত্রপা মজুমদার ছাড়া নাটকটিতে আরও অভিনয় করবেন গুলশান আরা, মাহমুদা আক্তার, নাজমুন নাহার, সামিয়া মহসীন, আপন আহসান, নূর-এ-খোদা মাশুক সিদ্দীকি, শেকানুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান, সামিরুল আহসান, তানভীর হোসেন সামদানী, তানভীন সুইটি, তানজুম আরা, রাশেদুর রহমান, রবিন বসাক, জোয়ারদার সাইফ প্রমুখ।

চলছে মহড়া

পোহালে শর্বরী দিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর পর নতুন নাটকে দেখা যাবে তানভীন সুইটিকে। যা নিয়ে খুশি এই টেলিভিশন তারকাও, ‘আমার ভালো লাগা ও ভালোবাসার জায়গা মঞ্চ। প্রথমবার রামেন্দু মজুমদারের নির্দেশনায় কাজ করছি, তিনিই প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমাকে এই চরিত্রের জন্য। একেবারেই শিক্ষকের মতো ভুলত্রুটি সুন্দর করে ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি।’
আলাদা আলাদা শিল্পী নিয়ে আগামীকাল ও শনিবার জাতীয় নাট্যশালায় বিকেল সাড়ে পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পরপর দুই দিন চারটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে যাত্রা শুরু হবে পোহালে শর্বরীর।