নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত বিশ্ব নাট্য দিবস

চলচ্চিত্র আসার আগে থেকেই মানুষ নাটককেই বিনোদনের উৎস হিসেবে উপভোগ করত। শুধু বিনোদন নয়, সারা বিশ্বের নাট্যকর্মীদের মতে, থিয়েটার বা নাট্যচর্চা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা। যুগের পর যুগ থিয়েটার মানুষকে জুড়ে জুড়ে রাখার অন্যতম শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছে। ২৭ মার্চ বিশ্বজুড়ে উদ্‌যাপিত হয় বিশ্ব থিয়েটার দিবস। বিশ্ব থিয়েটার দিবস তাই নাটক সংরক্ষণ ও নাটকের প্রচারের জন্যও উদ্‌যাপিত হয়। গতকাল যেমনটি হয়েছে।

নানা আয়োজনে গতকাল রোববার উদ্‌যাপিত হলো বিশ্ব নাট্য দিবস। বিশ্বের সব নাট্যকর্মী ও শিল্পীর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপন ও নাটকের শক্তিকে নতুন করে আবিষ্কার করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করে শিল্পকলা একাডেমি, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও পথনাটক পরিষদ।
রোববার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমি থেকে বের হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। শিল্পকলা একাডেমি থেকে বের হওয়া আনন্দ শোভাযাত্রাটি চারপাশ ঘুরে এসে শেষ হয় জাতীয় নাট্যশালার সামনে। সেখানে জমে ওঠে আড্ডা, মুখর হয় একাডেমি প্রাঙ্গণ। এরপর বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় ছিল সেতারের সুরে সাজানো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সঙ্গে ছিল আলোচনা।

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বিশ্ব নাট্য দিবসে গত শতকের ষাটের দশকের গ্রুপ থিয়েটার চর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এ দেশে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা অগ্রসৈনিক নাট্যজন মাসুদ আলী খান এবং নাট্যজন আরহাম আলোকে বিশ্ব নাট্য দিবস সম্মাননা প্রদান করা হয়। বিশ্ব নাট্য দিবসের বাণী পাঠ করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত দুই নাট্যশিল্পী লাকী ইনাম ও আফরোজা বানু।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব, অভিনেতা, নির্দেশক ও লেখক আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব, অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার মামুনুর রশীদ এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত হিরা, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গিয়াস। স্বাগত বক্তব্য দেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা।

এবারের বিশ্ব নাট্য দিবসের বাণী দিয়েছেন আমেরিকার অপেরা, থিয়েটার ও উৎসব পরিচালক নাট্যজন পিটার সেলার্স। তিনি খ্যাতি অর্জন করেন ক্ল্যাসিক নৃত্য ও সংগীতের যুগান্তকারী আধুনিক ও সমসাময়িক রূপায়ণের জন্য। সেলার্স আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের সদস্য এবং পোলার মিউজিক প্রাইজে ভূষিত হন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রযোজনাতে তিনি নির্দেশক ও সংগীত পরিচালক হিসেবে বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।

১৯৬১ সালের জুন মাসে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নবম কংগ্রেসে বিশ্ব থিয়েটার দিবস প্রবর্তনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরের বছর প্যারিসে অনুষ্ঠেয় (১৯৬২ সালে) থিয়েটার অব নেশনস উৎসবের সূচনার দিনটি, অর্থাৎ ২৭ মার্চ প্রতিবছর বিশ্ব নাট্য দিবস উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের সব দেশের নাট্যকর্মীর মধ্যে ঐক্য স্থাপন, সম্প্রীতি, উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং এর মাধ্যমে নাটকের উন্নয়ন সাধন করা। বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) স্থানীয় কেন্দ্রগুলো প্রধানত এই দিবস পালনে কর্মসূচি গ্রহণ করে।