প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলেন অভিনেতা, উদ্দেশ্য গাড়ি ছিনতাই

একটি নাটকের দৃশ্যে শাহরিয়ার শুভ।সংগৃহীত

গতকাল রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় ছোট পর্দার অভিনেতা শাহরিয়ার শুভর বেশ কিছু ছবি। এসব ছবিতে দেখা যায়, তিনি উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরছেন। কেউ কেউ বলছেন তিনি ভারসাম্যহীন, মাতাল হয়ে ঘুরছিলেন। আসলে কী ঘটেছিল? অভিনেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলেন।

এ অভিনেতার ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দিয়েছেন বিনোদনজগতের অনেকে। সেখানে সবাই প্রতিভাবান এই অভিনেতাকে এভাবে ঘুরতে দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ঘটনা জানতে অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিমকে ফোন দেওয়া হলে তিনি জানান, এই অভিনেতা এখন সুস্থ আছেন। কিছু মানুষের কারণে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন।

নাসিম বলেন, ‘শুভর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি কিছু মানুষের লোভের স্বীকার হয়ে চায়ের সঙ্গে কিছু একটা খেয়েছিলেন। পরে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমরা খোঁজ পেয়ে সেই হাসপাতালে লোক পাঠিয়েছিলাম। গিয়ে দেখে, সেখানে শুভ নেই। আমরা খোঁজ অব্যাহত রেখে আজ বিকেল চারটার দিকে তাঁর সন্ধান পাই। তিনি এখন সরিষাবাড়ি ডাকবাংলোতে আছেন।’

জয়া আহসানের সঙ্গে শাহরিয়ার শুভ
সংগৃহীত

একপর্যায়ে কথা হয় শাহরিয়ার শুভর সঙ্গে। তিনি জানান, গত মঙ্গলবার তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ‘অফিসার রিটার্ন’ নামের একটি ছবির লোকেশন দেখতে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রযোজক বাসেদুল করিম। পরে লোকেশন দেখা শেষ হলে প্রযোজক গাড়ি রেখে ঢাকায় ফেরেন। এই অভিনেতাকে একটা প্রজেক্টের কাজে থাকতে হয়। তিনি ধনবাড়ি কেন্দুয়া বাজারে পরিচিত এক ছোট ভাই টুটুলের বাসায় থেকে যান। সেখানে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক কর্মী পরিকল্পনা করে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চা ও পানির সঙ্গে কিছু একটা মিশিয়ে খাওয়ায়। তিনি বলেন, ‘চক্রটি আমার গাড়ি ছিনতাই করার জন্য আমাকে কিছু একটা খাওয়ায় চা ও পানির মাধ্যমে। ভুলক্রমে আমি খেয়ে ফেলি। একসময় আমি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল ১২টা পর্যন্ত আমি সেই ওষুধের প্রভাবে অবচেতন ছিলাম। এ সময় কী হয়েছে, কিছুই মনে নেই। কোথায় গেছি, কী করেছি; কিছুই মনে করতে পারছি না।’ এই অভিনেতা আরও জানান, একপর্যায়ে তিনি সরিষাবাড়িতে আসেন। সেখানে অনেকেই তাঁকে চিনতে পারেন। তখনো তাঁর স্বাভাবিক চেতনা ছিল না। লোকমুখে শুনেছেন, তখন তিনি মাতালের মতো ঢুলছিলেন। স্থানীয় কিছু লোকজন সাহায্য করে হাসপাতালে ভর্তি করান। এখন তিনি ভালো আছেন।

চক্রটি আমার গাড়ি ছিনতাই করার জন্য আমাকে কিছু একটা খাওয়ায় চা ও পানির মাধ্যমে। ভুলক্রমে আমি খেয়ে ফেলি। একসময় আমি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল ১২টা পর্যন্ত আমি সেই ওষুধের প্রভাবে অবচেতন ছিলাম। এ সময় কী হয়েছে, কিছুই মনে নেই। কোথায় গেছি, কী করেছি; কিছুই মনে করতে পারছি না।’
শাহরিয়ার শুভ, অভিনেতা
শাহরিয়ার শুভ
সংগৃহীত

মঞ্চনাটক দিয়ে ১৯৯৮ সালের দিকে শুভর অভিনয়জীবন শুরু। তিনি ২০০৫ সালে শহীদুজ্জামান সেলিমের পরিচালনায় সুবর্ণা মুস্তাফার বিপরীতে ‘রংছুট’ নামের এক ঘণ্টার একটি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ছোট পর্দায় যাত্রা শুরু করেন। ২০১২ সালে ‘পঞ্চম বিবাহবার্ষিকী’, ‘শশাঙ্কের শালুকলতা সার্কাস’সহ বেশ কিছু নাটকে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। নাটক দুটিতে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন জয়া আহসান ও আশনা হাবীব ভাবনা। তিনি তখন থেকেই নির্মাতাদের কাছে সম্ভাবনায় অভিনেতা হয়ে ওঠেন।

নির্মাতা এস এ হক অলিক বলেন, ‘তিনি দেশের অভিনেতাদের মধ্যে বেশ সম্ভাবনাময় ছিলেন। তাঁর এ অবস্থার কথা শুনে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। পাওয়া গেলে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’