বাবা আছেন, বাবা নেই

মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়ায় ক্যামেরায় বাবা–ছেলের শেষ ছবি

বাবা আছেন। অফিসঘরের দরজার ওপাশে, অফিসে খাওয়ার জন্য রাখা কাচের বয়ামে থাকা বিস্কুটে। বাবা আছেন এই আষাঢ়ে বৃষ্টিতে। মঞ্চের পর্দা সরলেই তাঁকে দেখা যাবে। অফিসের ক্যামেরাগুলোয় লেগে আছে বাবার স্পর্শ! অথচ বাবা নেই। বুকের ভেতর একটা চিনচিনে ব্যথায় যেন বাবাই আছেন।
বাবা দিবসে মায়ের একটা আক্ষেপ ছিল। মা–বাবার বিবাহবার্ষিকীর সময়ে বাবা দিবস আসে। বিবাহবার্ষিকীটাকে ঢেকে দেয়। সব মনোযোগ কেড়ে নেন বাবা। এবার সেটা আর হবে না। বাবার না থাকা তখন আরও তীব্র হয়ে উঠবে। বাবা নেই বলেই তাঁর অফিসঘরটাতে ঢোকা হয়নি।

হয়তো ওই বিল্ডিংয়েই অফিস করতে গিয়েছিলাম, বাবার ঘরে যাইনি। অনেক দিন পর যেদিন গেলাম, দেখলাম, ঘরটা আছে আগের মতোই গোছানো। ডায়াবেটিক বিস্কুটগুলো আছে কাচের বয়ামে। কেবল তাকে ক্যামেরাটা নেই, টেবিলে ল্যাপটপটা নেই, আর চেয়ারে বাবাটা নেই!

বাবা আলী যাকেরের সঙ্গে ছেলে ইরেশ যাকের
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সেদিন খুব জোরে বৃষ্টি নামল। এক সহকর্মী বলে উঠলেন, ‘চাচাকে এ সময় ঠেকানো যেত না।’ আমার মনটা তখন চলে গেল রতনপুর। বাবার সঙ্গে প্রায় সব ঋতুতে আমি সেখানে গিয়েছি, কেবল বর্ষায় যাওয়া হয়নি। অথচ বৃষ্টি উপভোগ করতে বাবা সেখানে চলে যেতেন। বাবার প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা।

বাবা আলী যাকেরের সঙ্গে ইরেশ যাকের। ছবি: খালেদ সরকার

আমরা বাবার প্রতিবেশী ছিলাম। তাঁর কাছে সবাই মিলে বেড়াতে যেতাম। আড্ডা দিতাম সপরিবার। এখন পরিবারের সবাই এক হই, বাবার না থাকাটা তখন ভীষণ প্রকট হয়ে ওঠে। একটা শূন্যতা সব সময় খা খা করে। কেননা, বাবা আমাকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন, তা নয়। কিন্তু বাবা আমাকে যা দিয়েছেন, সেসব না পেলে আজ আমি এখানে দাঁড়াতে পারতাম না।

ইরেশ ও আলী যাকের

বাবা আমাকে কখনো কিছু করতে বলতেন না। বরং কিছু কিছু কাজে নিরুৎসাহিত করতেন। তবে যখন যে ক্যামেরা চাইতাম, দিতেন। ২০১৮ সালে যখন মঞ্চে কাজ করলাম, খুব খুশি হয়েছিলেন। সাত দিনের প্রদর্শনী দুই দিন দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছিলেন বলেই আমি এখন যা মন চায়, করতে পারি। যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করতে পারি। তিনি আমাকে একটা পরিবেশ দিয়েছিলেন, সৃজনশীল বিষয়ে কৌতূহলী করেছিলেন। এটা সব বাবা পারেন কি না, আমার জানা নেই।

আলী যাকের
ছবি: সংগৃহীত