রোজিনাকে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে প্রাচ্যনাটের পথনাটক

রোজিনার জন্য নাট্যযাত্রায় প্রাচ্যনাট। ছবি: সংগৃহীত

সচিবালয়ের সামনে থেকে শুরু হয় নাট্যযাত্রা। শহীদ মিনার হয়ে সেটি শেষ হয় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে সেখানে একটি পথনাটক পরিবেশন করে দেশের নন্দিত নাট্যদল প্রাচ্যনাট। রোজিনার জন্য আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে রাজধানীতে ছিল তাদের নাট্যযাত্রা।

পথনাটকে দেখানো হয়, জেলের গারদে আটকে আছে কলম। সেখানে প্রতীকী বার্তা দেওয়া হয়, স্বাধীন সাংবাদিকতাই আটকে আছে প্রশাসনিক জালে। রোজিনার লেখা আলোচিত প্রতিবেদনের শিরোনামগুলো সেখানে তুলে ধরা হয় আর তাঁর জন্য তোলা হয় ন্যায়বিচারের দাবি। বিকেল পাঁচটায় শেষ হয় নাট্যযাত্রার এ আয়োজন। র‍্যালিতে অংশ নেন প্রাচ্যনাটের ৪০ কর্মী, শিক্ষার্থী ও ১০০ সংস্কৃতিকর্মী।

রোজিনার জন্য নাট্যযাত্রায় শতাধিক সংস্কৃতিকর্মী। ছবি: সংগৃহীত

প্রাচ্যনাটের মুখ্য সম্পাদক কাজী তৌফিকুল ইমন বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকের এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধা দেওয়ার যে নজির তৈরি হলো, তা নিন্দনীয়। একজন সাংবাদিকের গলা টিপে ধরার অধিকার তো তাদের নেই। রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার মধ্য দিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আঘাত করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই। পাশাপাশি সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।’

প্রাচ্যনাটের জ্যেষ্ঠ সদস্য সাইফুল জার্নাল বলেন, ‘সম্প্রতি বিচ্ছিন্নভাবে অনেকগুলো ঘটনা ঘটল। কিন্তু লকডাউনের জন্য আমরা একত্র হয়ে রাস্তায় নামতে পারিনি। আজও আমরা জোর দিয়ে কাউকে আসতে বলিনি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে র‍্যালি আর পারফরম্যান্স করেছি। সাংবাদিকেরা জীবন বাজি রেখে আমাদের জন্য কী না করেন। আর তাঁদের দুঃসময়ের সঙ্গী হওয়া আমাদের দায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা আমাদের শিল্প আর সংস্কৃতিচর্চারই অবিচ্ছেদ্য অংশ।’

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হয়রানি, মামলা ও আটকের ঘটনায় সারা দেশে চলছে তোলপাড়। বিনোদন অঙ্গন থেকেও জানানো হয়েছে তীব্র প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ‘রোজিনার জন্য নাট্যযাত্রা’র আয়োজন করে দেশের বরেণ্য নাট্যদল প্রাচ্যনাট। সচিবালয় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে আর ন্যায়বিচারের দাবিতে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে তারা।

রোজিনার জন্য নাট্যযাত্রায় তাঁর মুক্তির দাবি করে প্রাচ্যনাট। ছবি: সংগৃহীত

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রাচ্যনাট জানিয়েছিল, রুচির স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে মানুষ। অস্থির সময়ে অযৌক্তিকভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে পেশিশক্তি। লোভের বশে চুরির নেশায় খালি করছে দেশের সম্পদ। এসব অসামঞ্জস্যতা নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে সবাইকে উল্টো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। চুপ থাকা, নিজেরটা বুঝে নেওয়া আর চোখ বুজে থাকাই নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ‘নীতি’ যাঁরা মানতে চান না, অপশক্তি তাঁদের টুঁটি চেপে ধরে কণ্ঠ রোধ করে। সাইফুল জার্নাল বলেন, ‘এসব অপশক্তি যতবার টুঁটি চেপে ধরবে, ততবারই কণ্ঠ দ্বিগুণ চিৎকার করে উঠবে। আমরাও চিৎকার করতে চাই রোজিনার জন্য, চিৎকার করতে চাই দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য। এ কারণেই প্রাচ্যনাট ও তার বন্ধুরা আয়োজন করছে “রোজিনার জন্য নাট্যযাত্রা’।’

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সিএমএম আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঢাকা, ১৮ মে
ছবি: সাজিদ হোসেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পরিচিত মুখ রোজিনা ইসলাম গত সোমবার সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে যান। সেখানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাঁকে একটি কক্ষে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে পরে পুলিশে সোপর্দ করে এবং রাতে তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। পরে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় মামলা করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন করলে, তা নাকচ করে কাশিমপুর কারাগারে পাঠান আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভার্চ্যুয়ালি রোজিনার জামিন শুনানি হয়। জামিন নিয়ে আদেশের জন্য রোববার দিন ধার্য করেছেন আদালত।