লেখকের মৃত্যু ও হ্যামলেটের ফিরে আসা
‘গতকাল রাতে গুলশানে নিজের ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেছেন এই প্রজন্মের জনপ্রিয় লেখক আদনান হোসেন।’ লেখকের মৃত্যু নাটকের ট্রেলারের শুরুতেই শোনা যায় কথাগুলো। এই আদনান হোসেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রওনক হাসান। রহস্যময় সেই মৃত্যুর জট খোলার দায়িত্ব পড়ে এএসপি আনোয়ার (মোশাররফ করিম), ইন্সপেক্টর বুশরা (আদিবা বুশরা) ও রতনের (মিলন ভট্টাচার্য) ওপর। লেখকের মৃত্যুরহস্যের জাল ছাড়াতে গিয়ে তাঁরা নিজেরাই পড়ে যান রহস্যের অতল গহ্বরে। এর শুরু কোথায়? শেষটাই-বা কী হলো?
‘লেখকের মৃত্যু’ নাটকটি এমন গল্পের। নাটকটি পরিচালনা করেছেন আশরাফুজ্জামান। সম্প্রতি তিনি মোশাররফ করিম ও রওনক হাসানকে নিয়ে আরেকটি নাটক নির্মাণ করেছেন। ‘পরিবর্তন আসুক বাংলা নাটকেও’ স্লোগানে ছয় দিন আগে ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে ‘হ্যামলেটের ফিরে আসা’। ইতিমধ্যে আলোচনা চলছে নাটকটি ঘিরে। বাজেটস্বল্পতা সত্ত্বেও সুচিন্তিত, সুলিখিত চিত্রনাট্য ও রওনক হাসানের সু-অভিনয় নজর কেড়েছে দর্শকদের।
আর তারিক রায়হানের (মোশাররফ করিমের) সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ক্লাডিয়াসের (হ্যামলেটের পিতার হত্যাকারী)। শুরু হয় নাটকের নির্দেশক মোশাররফ করিম ও এই অভিনেতার মনস্তাত্ত্বিক খেলা। নাটক শেষে দেখা যায়, এই নাটকের প্রতিটি চরিত্র বাস্তবের হ্যামলেটের প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়। এই নাটকের অস্থিমজ্জায় সাহিত্যরস। এই গল্প মানুষকে হাসায়, কাঁদায়, ভাবায়। আবার কখনো কখনো হয়ে ওঠে কারও ব্যক্তিগত জীবনের গল্প।
দুটো নাটক নিয়েই আলাপ করার জন্য ফোন করা হলো অভিনেতা রওনক হাসানকে। যে নাটকটিকে বলা হচ্ছে রওনকের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয়, সেই চিত্রনাট্য নাকি অনেক দিন পড়ে ছিল বাসায়। খুলে দেখায় হয়নি। বললেন, ‘আমি ব্যস্ততায় অনেক দিন “হ্যামলেটের ফিরে আসা” নাটকের চিত্রনাট্য খুলে দেখতে পারিনি। একদিন নিয়ে বসলাম। পড়তে পড়তে চোখে পানি চলে এল। শুরুতে আমার মনে হয়েছে, এরপর কী হবে? পরিচালক আশরাফুজ্জামানকে আমি চিনতাম না। চিত্রনাট্য পড়া শেষ করে আমি নিজেই ফোন করলাম তাঁকে। মোশাররফ করিম কাজ করছে জেনে আরও আগ্রহী হলাম। উনি এই সময়ের সেরা অভিনেতাদের একজন। বললাম, কাজটা আমি করছি।’ম
আক্ষেপও ঝরে পড়ল এই অভিনেতার কণ্ঠে, ‘আমি দীর্ঘদিন মঞ্চে কাজ করেছি। হ্যামলেট আমার স্বপ্নের চরিত্র। সেটা করার সুযোগ এল। গল্পের গাঁথুনি এত ভালো! আমি পরিচালককে বলেছিলাম, আর একটা দিন নাটকটাকে দেওয়া যায় না? উনি বললেন, না, বাজেট নেই। যতটুকু দরকার, ততটুকু বাজেট দিয়ে সময় নিয়ে কাজটা করলে আরও ভালো হতো।’ শিল্পী ও প্রযোজকদের এ ধরনের পরিচালকের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলেও জানান রওনক। তিনি আরও বললেন, ‘আশরাফুজ্জামান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। উনি সাহিত্য নিয়েও আগ্রহী। রহস্য, থ্রিলার নিয়ে কাজ করেন। আমাদের উচিত এ ধরনের নির্মাতার পৃষ্ঠপোষকতা করা।’
‘হ্যামলেট’ নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার শেষ মুহূর্তে পা ভেঙে যায় হ্যামলেট চরিত্রের অভিনেতার। মুখ ঢাকা দুর্বৃত্তরা এসে তাঁর পা ভেঙে দিয়ে চলে যায়। ‘নাটক বাঁচাতে’ ওই চরিত্রে আসে নতুন ‘অভিনেতা’ হ্যামলেট মো. সুমন (রওনক হাসান)। সে আগে কখনোই অভিনয় করেনি। কিন্তু সে সবই জানে। কারণ হিসেবে বলে, ‘আমি তো অভিনেতা নই। আমি হ্যামলেট।’
‘লেখকের মৃত্যু’ নাটকের লেখকের মৃত্যুরহস্যর উন্মোচন হবে ২২ নভেম্বর, রাত সাড়ে নয়টায়, এনটিভিতে।