সহশিল্পী থেকে মূল শিল্পী, সুযোগের হাতছানি

কাজের সুষম বণ্টন হলে টেলিভিশন নাটকের ইন্ডাস্ট্রি আরও ভালো মানের অভিনয়শিল্পী পাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিশ্বাসকোলাজ: আমিনুল ইসলাম

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের ছেলে সবুজ। স্কুলের পর বাড়িতে বইখাতা রেখেই ছুটতেন বন্ধুদের কাছে। তাদের নিয়ে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা, নয়তো আড্ডা তাঁকে টেনে নিয়ে যেত। আড্ডায় কেউ গাইত গান, কেউ বলত গল্প, কেউবা পাঠ করত কবিতা। সবুজ ছিলেন সে রকম আড্ডার মধ্যমণি। বন্ধুরা বলত, ‘তুই অভিনেতা হতে পারবি।’ ‘অভিনয়’! সেটার প্রতি তখনো তাঁর মোহ জাগেনি। তবে ২০০৩ সালে ঢাকায় এসে সুবজ যোগ দেন বঙ্গরঙ্গ নাট্যদলে। থিয়েটার থেকে আসে টেলিভিশনের ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ। কিন্তু মনে তৃষ্ণা প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের। সেই সুযোগ তিনি পেলেন প্রায় ১৩ বছর পর, কোটিপতি নাটকে।

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের ছেলে সবুজ
সংগৃহীত

তত দিনে তিনি টেলিভিশন অঙ্গনে শহীদুল্লাহ সবুজ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। অভিনয় করা হয়ে গেছে তিন শতাধিক নাটকে। সবুজের মতো আরও অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন, যাঁদের অভিনয়জীবন শুরু হয়েছে পার্শ্বচরিত্র দিয়ে। এখন তাঁরা পেতে শুরু করেছেন প্রধান চরিত্রের কাজ। সেই তালিকায় আছেন আনন্দ খালেদ, রাশেদ সীমান্ত, পায়েল, মুশফিক আর ফারহান, দোলন দে, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

ধরা যাক আনন্দ খালেদের কথা। প্রায় এক যুগ আগে মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয় শুরু হয় তাঁর। ২০১০ সালে আংশিক সাদাকালো নাটকে আনিসুর রহমান মিলনের বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করে ক্যারিয়ার শুরু হয় টেলিভিশনে। এরপর থেকে খালেদের জন্য যেন সংরক্ষিত থাকে নায়কের ভাই নয়তো বন্ধুর চরিত্র। খালেদ সেসব যত্ন নিয়েই করেছেন। কিন্তু প্রধান চরিত্রে কাজ করতে না পারলে অভিনয়জীবনে তৃপ্তি আসে?

প্রায় এক যুগ আগে মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয় শুরু হয় আনন্দ খালেদের
সংগৃহীত


আনন্দ বলেন, ‘১০ বছর ধরে টিভি নাটকে অভিনয় করি, মানুষ আমাকে চেনে। আমার অভিনয় নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু আমি অভিনয় করতে পারি, এমন কোনো চরিত্র নিয়ে কেউ ভাবেনি। প্রধান চরিত্র পেতে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাকে।’ সম্প্রতি তিনি টিভি নাটক ত্রয়ী এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মেন্টাল প্যানডেমিক–এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

‘অনেক তরুণ যথেষ্ট অভিজ্ঞ। কিন্তু বিশেষ কিছু কারণে নির্মাতারা তাঁদের নিয়ে কাজ করতে পারেন না। যাঁরা কাজগুলো দেন, তাঁরাও নতুনদের নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না। সে ক্ষেত্রে নতুনদের নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। এজেন্সিরও নতুনদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। কারণ, দর্শক একই মুখ বারবার দেখতে চান না। যাঁরা দক্ষ, তাঁদের কাজের সুযোগ দিলে আমরা আরও নির্ভরশীল অভিনয়শিল্পী পাব।’
শহীদুজ্জামান সেলিম

শরিফুল ইসলামকে এখনো অনেকে শিশুশিল্পী ভাবেন। বাবা আবদুর রশিদের সুবাদে অভিনয় শুরু করে সে। বাবা চাইতেন, ছেলে অভিনয় চালিয়ে যাক। চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামানের হাত ধরে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পরিচালনায় অভিনয় শুরু করে শরিফুল। পরে সুযোগ আসে বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার। তাতে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সে। অভিনয়ের ডাক আসতে শুরু করে নিয়মিত। সেসব চরিত্র ছিল নাটকগুলোর অলংকারের মতো। এখন শরিফুলের দিন ফিরেছে। প্রধান চরিত্র পেতে শুরু করেছে সে। কেমন লাগছে তার? ‘আমারে নিয়া অহন মেইন ক্যারেক্টারের জন্য পরিচালকেরা ডাকতাছেন। এডা আমার খুবই ভালো লাগে। নায়ক চরিত্র করতে ভালো লাগে’, এই ছিল শরিফুলের প্রতিক্রিয়া। পাপ্পি ভাই, ভাঁড়, খাটো জামাইসহ বেশ কিছু নাটকে প্রধান চরিত্রে দেখা গেছে শরিফুল ইসলামকে।

শরিফুল ইসলামকে এখনো অনেকে শিশুশিল্পী ভাবেন
সংগৃহীত

অভিনয়ে দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় তরুণ অভিনেতাদের। সাধারণত তারকাদের দিয়েই করানো হয় প্রধান চরিত্রগুলো। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘অনেক তরুণ যথেষ্ট অভিজ্ঞ। কিন্তু বিশেষ কিছু কারণে নির্মাতারা তাঁদের নিয়ে কাজ করতে পারেন না। যাঁরা কাজগুলো দেন, তাঁরাও নতুনদের নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না। সে ক্ষেত্রে নতুনদের নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। এজেন্সিরও নতুনদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। কারণ, দর্শক একই মুখ বারবার দেখতে চান না। যাঁরা দক্ষ, তাঁদের কাজের সুযোগ দিলে আমরা আরও নির্ভরশীল অভিনয়শিল্পী পাব।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের তথ্য অনুসারে, ছোট পর্দার তালিকাভুক্ত শিল্পীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০। তাঁদের মধ্যে এক হাজার শিল্পী নিয়মিত কাজ পান না। কাজের সুষম বণ্টন হলে টেলিভিশন নাটকের ইন্ডাস্ট্রি আরও ভালো মানের অভিনয়শিল্পী পাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিশ্বাস।

পায়েল
সংগৃহীত