সৃজনশীলতা ক্ষমতার দাপটকে মানতে চায় না

থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে (টিআইসি) ‘সৃজনে-স্মরণে-বরণে তির্যক’ শীর্ষক দুই দিনের উৎসবের শেষ দিনে অতিথি ও আয়োজকেরা। ছবি: সংগৃহীত

‘স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সমকালীন ও সংকট সামনে নিয়ে নাট্য ও নাট্যিক কর্মকাণ্ড এবং সংস্কৃতির বিকাশে নাগরিক শিল্পমনস্কতায় যে উর্বর ভূমি জেগে উঠেছিল, তা আজ বিলুপ্তপ্রায়। সর্বক্ষেত্রে আপসকামিতায় আমরা আমাদের নিজস্বতা, শিল্পচর্চার সব মননতা হারিয়ে ফেলেছি।’ চট্টগ্রামে ‘বিশাল বাংলায় নাট্যচর্চা’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত নাট্যকর্মীদের আলোচনায় তাঁদের কর্মক্ষেত্রে নানামুখী সংকট, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথার কথা বলতে গিয়ে এক বক্তা এসব বলেন।
শনিবার টিআইসিতে তির্যক নাট্যদল আয়োজিত দুই দিনের নাট্যায়োজনে সকাল ১০টায় আয়োজিত সেমিনারে নাট্যকার মামুনুর রশীদের সঞ্চালনায় মূল বিষয় উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। এতে বক্তারা আরও বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই সৃজনশীলতা ক্ষমতার দাপটকে মানতে চায় না। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের প্রথম ধারায় যে পুঁথি, পালা, যাত্রা এবং আঞ্চলিক নানান বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তা আজ সজ্ঞান বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। আশির দশকে গ্রামপর্যায়ে থিয়েটার চর্চা যে পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ছিল, আজ তা ড্রয়িংরুমে বন্দী।

অনুষ্ঠানে  একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারকে সব নাট্যকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীর পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সেমিনারে অংশ নেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, গোলাম সারোয়ার, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, বিপ্লব প্রসাদ, শিশির দত্ত, অলক ঘোষ, রবিউল আলম, মোহাম্মদ বারী, শাজাহান চৌধুরী, বাবুল বিশ্বাস, সানোয়ার আলম, ইউসুফ হাসান, অনিরুদ্ধ কুমার ধর, সুচরিত, কুন্তল বড়ুয়া, সঞ্জীব বড়ুয়া, দীপক চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আসলাম আলী, মো. আবদুল কাইয়ূম, মীর জাহিদ হাসান, খোরশেদুল আলম, রওশন জান্নাত, আলী হায়দার, আক্তারুজ্জামান, আহমেদ গিয়াস, অনন্ত হিরা, কামাল আহমেদ, অলোক বসু, গোলাম শফীক, কামরুন নূর, মোসলেম উদ্দিন সিকদার, মিজানুর রহমান, চন্দন রেজা, শাহনেওয়াজ, সাইফ আহমেদ, নওশীন ইসলাম, জসিম উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, সালাম সাকলাইন, গোলাম সরোয়ার, কাজী রোকসানা, মোস্তফা হীরা, হুমায়ুন কবির, মনি পাহাড়ী, আশিক সুমন, সুবীর মহাজন প্রমুখ।

বেলা তিনটায় টিআইসির মিলনায়তনে ‘সৃজনে-বরণের কথকতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এবারের একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারকে সব নাট্যকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীর পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সম্মাননাপত্র পাঠ করেন কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার। নাট্যজন অনন্ত হিরার পরিকল্পনায় আহমেদ ইকবাল হায়দারের জীবন ও কর্ম নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। উপস্থিত বিভিন্ন দলের নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মী তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এবং আহমেদ ইকবাল হায়দার নির্দেশিত ‘রাজা’ নাটকটি মঞ্চস্থ করে তির্যক। ছবি: সংগৃহীত

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মিলনায়তনে তির্যক নাট্যদল পরিবেশন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এবং আহমেদ ইকবাল হায়দার নির্দেশিত ‘রাজা’। রাত আটটায় মুক্তমঞ্চে গান, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপন হয়।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নাট্যচর্চা শুরু করে তির্যক নাট্যদল। চার দশকের বেশি সময় ধরে নাট্যচর্চার বিকাশে নিয়মিত কাজ করেছে দলটি।

‘রাজা’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

নতুন নাটক, মহড়া, সেমিনার, প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ থিয়েটার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সক্রিয় থেকেছে দলটি। প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছর ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে তির্যক। শুক্রবার থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে (টিআইসি) ‘সৃজনে-স্মরণে-বরণে তির্যক’ শীর্ষক দুই দিনের এ উৎসব শুরু হয়ে শনিবার শেষ হয়।