উৎসবের আমেজে শুরু দেশি ছবির প্রদর্শনী
সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মানুষের আনাগোনা কম থাকলেও ছুটির দিনে ব্যতিক্রম দেখা যায়। বিশেষ করে শুক্রবার যদি কোনো উৎসব থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনেকেই ছুটে আসেন শিল্পকলায়। গতকাল ছিল তেমনই একটি দিন। গতকাল শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব’। এ উৎসবকে ঘিরে সিনেমাপ্রেমীরা জড়ো হয়েছেন একাডেমি প্রাঙ্গণে। এ ছাড়া শিল্পকলার পরীক্ষণ থিয়েটার ও স্টুডিও থিয়েটারে সন্ধ্যায় হয়েছে মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী। সিনেমা, নাটকের প্রদর্শনী দেখতে আসা দর্শকের ভিড়ে মুখর ছিল শিল্পকলা প্রাঙ্গণ।
‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব’ নিয়ে কয়েক দিন ধরে প্রচারণা চালিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। তারপরও অনেকেই জানেন না চলচ্চিত্র উৎসবটির খবর। তেমনই একজন সাহেদ আলী। তিনি নিজের ৭ ও ৯ বছর বয়সী দুই সন্তান নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে এসেছিলেন স্রেফ ঘোরাঘুরি করতে। এসে বাড়তি হিসেবে পেলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। দেরি না করে ঢুকে গেলেন মূল মিলনায়তনে। দেখলেন উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, এরপর দেখলেন ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র প্রদর্শনী। সাহেদ আলী জানান, ঢাকায় বাচ্চাদের খেলাধুলার খুব একটা জায়গা মেলে না। তাই বাচ্চাদের নিয়ে প্রতি শুক্রবার শিল্পকলায় ঘুরতে আসেন। যখন যে অনুষ্ঠান পান, বাচ্চাদের নিয়ে দেখতে বসে যান।
গতকাল উৎসবে পাওয়া গেল একদল শিক্ষার্থীকেও। কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিব হোসেনের সঙ্গে। ‘প্রতি শুক্রবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই, কখনো ক্যাম্পাসে আড্ডা জমাই। আজ (গতকাল) শুনলাম এখানে চলচ্চিত্র উৎসবের খবর। উৎসবে নাকি বিনা মূল্যে সিনেমা দেখানো হবে। তাই বন্ধুবান্ধব নিয়ে সিনেমা দেখতে চলে এলাম,’ বলছিলেন রাকিব।
দীর্ঘ সাত বছর পর তৃতীয়বারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির মূল মিলনায়তনে বিকেলে হয়েছে উৎসবটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, চলচ্চিত্র অভিনেতা ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক হায়দার রিজভী ও শামীম আখতার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর জাতীয় নাট্যশালায় প্রদর্শিত হয়েছে নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। সিনেমাটি দেখতে মিলনায়তনে ছিল দর্শকদের ভিড়। কেউ রাকিব হোসেনের মতো জেনে এসেছেন, কেউ সাহেদ আলীর মতো ঘুরতে এসে নিখরচায় সিনেমা দেখার সুযোগ পেয়েছেন। ১৫ দিনের এ উৎসবে ৩৬টি সিনেমা প্রদর্শিত হবে। সমকালীন চলচ্চিত্র, নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, ধ্রুপদি চলচ্চিত্র ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বা পুরস্কারপ্রাপ্ত—পাঁচটি ভিন্ন ক্যাটাগরি থেকে সিনেমাগুলো বাছাই করেছে শিল্পকলার নির্বাচন কমিটি।
৩৬টি সিনেমার মধ্যে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের সমকালীন সিনেমা রয়েছে ২৩টি। সমকালীন এই সিনেমাগুলোকে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা, বিশেষ জুরি, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক, শ্রেষ্ঠ শব্দ পরিকল্পক ও শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা পরিকল্পক—সাতটি ক্যাটাগরিতে নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে। এ ছাড়া দেওয়া হবে উৎসব স্মারক ও সনদ। সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র বিভাগে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সিনেমা জমা নেওয়া হয়। অর্ধশতাধিক সিনেমা থেকে বাছাই করা ২৩টি সিনেমা উৎসবে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত করা হয়। ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সিনেমাগুলো দেখানো হবে। দেশীয় চলচ্চিত্রের এ উৎসব শেষ হবে আগামী ৩ মার্চ। উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্যে সাত সদস্যের জুরিবোর্ড গঠন করা হয়েছে। জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক মসিহউদ্দিন শাকের। সদস্য হায়দার রিজভী, মোরশেদুল ইসলাম, পঙ্কজ পালিত, গাজী রাকায়েত।
আজ থাকছে যেসব সিনেমা
আজ বেলা ৩টায় দেখা যাবে ফতেহ্ লোহানীর ‘আসিয়া’, বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে রয়েছে প্রসূন রহমানের ‘জন্মভূমি’। ঢাকায় সিনেমা দুটি দেখা যাবে শিল্পকলার জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। একই সময়ে ৬৪টি জেলার শিল্পকলা একডেমিতেও দেখা যাবে সিনেমা দুটি। এ ছাড়া আজ ঢাকায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বিকেল ৪টায় মুহাম্মদ কাইউমের ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ও সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে একই ভেন্যুতে রয়েছে মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’র বিশেষ প্রদর্শনী।