আগেকার বেশির ভাগ বাবাই এমন ছিলেন

বাবা দিবস উপলক্ষে শিল্পী মাহমুদুন্নবীর গাওয়া ‘ওগো মোর মধুমিতা’ নতুন করে গাইলেন মেয়ে সামিনা চৌধুরী। গতকাল সন্ধ্যায় ইউটিউবে গানটি প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছুদিন আগে গাওয়া ‘বাবা’ শিরোনামের আরেকটি গানও নতুন করে ইউটিউবে আপলোড করেছেন তিনি। এটি সাড়াও ফেলে বেশ।

সামিনা চৌধুরীছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

আপনার ‘বাবা’ গানটি ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে।

আমিও দেখেছি। গানটি বছরখানেক আগে গেয়েছিলাম। লিটন অধিকারী রিন্টুর কথা, ইজাজ খান স্বপনের সুরে মিউজিক করেছেন রুপজ্জল মজুমদার। গানটি শুনে অনেকে কেঁদেছে—আমাকে জানিয়েছে। এই গান সবার অনুভূতিকে স্পর্শ করেছে। বাবা দিবস উপলক্ষে বাবার গাওয়া ‘ওগো মোর মধুমিতা’ নতুন করে গেয়েছি। এটি আমার ইউটিউবে প্রকাশ করেছি।

সংগীত শিল্পী সামিনা চৌধুরী

প্রশ্ন :

বাবা নিয়ে কয়টা গান গাইলেন?

খুব বেশি নয়। মাত্র দুটি গান। আব্বা-আম্মাকে নিয়ে গান গাইতে পারি না, কষ্ট হয়। একটা গেয়েছিলাম ১৯৯৩ সালে, শিরোনাম ‘যে অভিমানে আমি’। এটি বাবাকে নিয়ে অভিমানের গান। আর বাবা গানটি যাঁদের বাবা নেই, তাঁদের ব্যাপারটা উঠে এসেছে। বহুদিন পর একটা গান মানুষ শুনেছে, এটাই বড় কথা।

প্রশ্ন :

করোনায় সব বন্ধ। আপনার গানের ব্যস্ততা কেমন?

অন্য সময়ের চেয়ে ভালো। করোনা না হলে তো নিজে নিজে কাজ করার ব্যাপারটা শুধু ভাবতামই, বাস্তবে করা হতো না। এখন ভাবি, যেহেতু সময় আছে, নতুন নতুন গান করি না কেন। নিজের ইউটিউবও আছে, প্রকাশেরও সমস্যা নেই।

বাবা মাহমুদুন্নবীর সঙ্গে সন্তানেরা (সবার বাঁয়ে সামিনা চৌধুরী)

প্রশ্ন :

তিন দশক আগে আপনার বাবা চলে গেছেন। আপনার স্মৃতিতে বাবা কীভাবে ধরা দেন?

কদিন আগে স্বপ্ন দেখলাম, অদ্ভুত। স্বপ্ন দেখে অনেক সময় ধরে কাঁদলাম। স্বপ্নে দেখলাম, আব্বা বাসায় আসছেন। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছেন। দৌড়ে আম্মার কাছে গেলাম। বললাম, আব্বা আসছেন। আম্মা বললেন, ঠিকাছে, তোমার আব্বাকে আসতে বলো। নুমা (ফাহমিদা নবী) আর অপেক্ষা করল না, সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে গেল। আব্বাও নুমাকে (ফাহমিদা নবী) জড়িয়ে ধরল। চুমু খেল। অদ্ভুত একটা স্বপ্ন!

সামিনা চৌধুরী ও ইজাজ খান স্বপন। ছবি: ফেসবুক থেকে

প্রশ্ন :

বাবার সঙ্গে কোন স্মৃতিটা বেশি মনে পড়ে?

স্মৃতি তো অসংখ্য। মনে পড়ে যে আব্বা যেদিন মারা গেলেন, সেদিন তাঁর মাথার পাশে আমার মাথাটা রেখে অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম। আব্বার সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া তো একদমই কথা বলতাম না। খুবই ফরমাল ছিলাম। আব্বাও খুব কম কথা বলতেন। আগেকার বেশির ভাগ বাবাই এমন ছিলেন। তাই আমরাও দূরে দূরে থাকতাম। এখন তাই সবাইকে বলি, বেঁচে থাকতেই মানুষের সঙ্গে মানুষের একটা লজ্জা, সংকোচ ও দূরত্ব থাকে—এটা দূর করে মনের সব কথা নিঃসংকোচে বলে ফেলা উচিত। আব্বাকে হারানোর পর এই মেসেজটাই পেয়েছি। আমরা অনেকে মনের মধ্যে ভালোবাসা পুষে রাখি, প্রকাশ করি না—এটা ঠিক নয়।

ফাহমিদা নবী ও সামিনা চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রশ্ন :

দেখলাম আপনার মেয়ে ফাবাশশির তেজী খানও গান গাইছেন।

তেজী তো গান একদমই গাইতে চায় না। অনেক জোরাজুরিতে একটা গান কদিন আগে প্রকাশ করলাম। সে আমার মতোই। তবে গান ভালোবাসে খুব। কিন্তু সে একটু শেকি। আমিও যেমন গান গাইতে চাইতাম না।

প্রশ্ন :

তাহলে আপনি কী চাইতেন?

আমার খালি মন চাইত, ডাক্তার হব, অভিনেত্রী হব। একই অবস্থা তেজীরও। সে চেহারা দেখাবে না, ভিডিও চিত্রে থাকবে না। গান যেটা প্রকাশ করেছি, বলেছে, ভিডিও করতে পারব না। অনেক কষ্ট করে চেহারা ছাড়া বিভিন্ন দৃশ্য সংযোজন করে ভিডিও বানিয়েছি। জানি না ভবিষ্যতে সে কী হবে, কী করবে। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে হয়তো। আমার ছেলে মাহদীন খান নবী বীরবলের গলা তো খুব সুন্দর কিন্তু সে গানের ধারেকাছেও নেই। সে আছে শুটিং, এডিটিং, ডিরেকশন এসব নিয়ে। সে ইউটিউব কন্টেন্ট বানাচ্ছে।

প্রশ্ন :

সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সিঙ্গার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসএবি) কমিটি ঘোষণা হয়েছে। সংগীতশিল্পীদের নিয়ে এমন একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা কতটা বলে মনে করছেন?

সংগীতশিল্পীদের নিয়ে এই সংগঠনের ১৭-১৮টি লক্ষ্য আছে। লক্ষ্যগুলো দেখে মনে হয়েছে, এসব নিয়ে আমরা নিজেদের মতো করে ৩০-৪০ বছর ধরে কথা বলে আসছি। তবে সাংগঠনিক এই যাত্রায় কিছু পয়েন্ট যুক্ত হয়েছে, যা খুবই চমৎকার। এই দাবির প্রতি সব শিল্পীরই সমর্থন থাকবে। কারণ, এসব সব শিল্পীরই দাবি।