আমি মানসিকভাবে মৃত্যুর জন্য সব সময় তৈরি

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের চিরসবুজ নায়ক আলমগীর-এর ৭২তম জন্মদিন ছিল গতকাল। তাঁর বাবা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অন্যতম প্রযোজক। পারিবারিক, সামাজিক, অ্যাকশন, রোমান্টিক, ফোক, ফ্যান্টাসিসহ নানা ধরনের চলচ্চিত্রের একজন সফল অভিনেতা তিনি। প্রযোজক, পরিচালক আর গায়ক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। বেশ কয়েক দিন লন্ডনে থাকার পর গত শনিবার ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। জন্মদিনে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন। কেমন লাগে এই দিনে?

ধন্যবাদ। নট সো ইমপর্ট্যান্ট। এটা একেবারেই সাধারণ একটা দিন। এই দিনে আমার কোনো রিঅ্যাকশন নেই।

প্রশ্ন :

আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন। সেখানে অনেকে শুভেচ্ছা জানান। অভিনয়জীবনের অনেক দুর্লভ তথ্যও এই দিনে প্রকাশ করেন। নানা ধরনের স্মৃতিকথাও অনেকে লেখেন। এসব দেখে নস্টালজিক হন?

আমি সবই দেখি। মাঝেমধ্যে থ্যাংকসও জানাই। তবে আমি নস্টালজিক খুব একটা হই না। কারণ, আমি খুবই বাস্তববাদী মানুষ। প্র্যাকটিক্যাল মানুষ, বর্তমান নিয়ে বেশি চিন্তা করি। প্রতিবছর আমার জন্মদিন আসে। ছোটবেলায় একটা খাতায় মা লিখে রেখেছিলেন। আমার ভাইবোনদের জন্মদিনও খাতায় লিখে রাখতেন আম্মা। তখন ডায়েরি ছিল না, খাতায় লিখে রাখতে হতো। ইমপর্ট্যান্ট অনেক কিছু তিনি সেখানেই লিখে রাখতেন। ওখান থেকেই আমরা সবাই জন্মদিনের কথাটা জানতে পেরেছি। প্রতিবছর দিনটি এলে বুঝতে পারি, আরেকটা বছর বাড়ল। আর জীবন থেকে আরেকটা বছর কমল।

প্রশ্ন :

আপনার কাছে জীবন কেমন?

জীবনটা হলো মৃত্যুর জন্য তৈরি হওয়া। এই জীবনকে যদি সাজিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে ফাইন। না পারলে, উই ডোন্ট নো অ্যানিথিং।

আলমগীর

প্রশ্ন :

মৃত্যু নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

আমি মানসিকভাবে মৃত্যুর জন্য সব সময় তৈরি। আমার মধ্যে এসব কাজ করে না যে সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে যাব? আমি সব সময় এটা ভাবি, আজকের দিনটাই বাঁচব। তাই আনন্দ-উল্লাস, হইহুল্লোড় করে যেভাবে থাকতে পছন্দ করি, সেভাবেই চলব। মৃত্যুর জন্য যে তৈরি হচ্ছি, এটা তো অন্তরের ভেতরে, আত্মার ভেতরে থাকে। আমি সবাইকে ছেড়ে চলে যাব, এটা একটা দুঃখ। কিংবা আমি চলে গেলে অনেকে দুঃখ পাবে, তাই দুঃখটা আমি নিজের মধ্যে রাখি, কারও সঙ্গে শেয়ার করি না। আনন্দটা সবার সঙ্গে শেয়ার করি। পৃথিবীতে আসছি, যত দিন হাসি–আনন্দ নিয়ে থাকতে পারব, যত দিন পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে রাখবেন, আই উইল শেয়ার অল দ্য হ্যাপিনেস উইথ এভরিবডি। তারপর যখন যাওয়ার সময় হবে, চলে যাব, দ্যাটস ইট।

প্রশ্ন :

দুঃখটাকে লুকিয়ে রেখে আনন্দটা বিলিয়ে দেব, এটা কি আপনার জীবনের দর্শন?

ছোটবেলায় আমার বাবার কাছে শিখেছি, দুঃখটা নিজের মধ্যে রেখে আনন্দটা সবার কাছে বিলিয়ে দেবে, তাহলে তুমি মানুষ হতে পারবে। এটা আমার বাবা জোর দিয়েই বলেছিলেন। এটাও বলেছিলেন যে লেখাপড়া করবে, শিক্ষিত হবে।

আলমগীর ও রুনা লায়লা

প্রশ্ন :

আপনি ছোটবেলায় বাবার কাছের ছিলেন নাকি মায়ের?

আমি বাবার ন্যাওটা ছিলাম। আমার জীবনের টোটালটাই বাবার ইনফ্লুয়েন্স। ছেলেরা অবশ্য বেশির ভাগ সময় মায়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তবে আমি টেটালটাই বাবার।

প্রশ্ন :

এটা নিয়ে মায়ের কোনো অভিমান ছিল...

না না, তখনকার সময় মা–বাবা সবই সমান ছিলেন। কিন্তু ইনফ্লুয়েন্সটা বাবার হয়ে গেছে আরকি। আমি বাবাকে খুব ফলো করতাম। সেই যুগে একটা স্টাইল ছিল, তাই না। বাবা যখন প্যান্ট, জুতা, কোর্ট, টাই—এসব পরতেন, আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম। সেই যুগে আমি দেখতাম, আব্বা লন্ডন থেকে স্যুট কিনে আনতেন। ওইগুলো দেখেছি। গত শনিবারও আমি লন্ডনের বাসা থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে জুতাটা নিজে পালিশ করেছি। আমার আব্বাও নিজে জুতা পালিশ করে, কাপড় ইস্তিরি করে পরতেন। আমি জুতা ছাড়া অন্য কিছু করতে পারি না। আমার বাবা খুব স্টাইলিশ ছিলেন। তারপর যখন প্যান্ট–শার্ট ছেড়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা শুরু করেন, তখনো ইস্তিরি না করে পরতেন না।

প্রশ্ন :

স্টাইলের বাইরে যদি আপনার ফিটনেসের কথা বলি...

ফিটনেস ব্যাপারটা জেনেটিক। আমি নিজে থেকে কিছুই মেইনটেইন করি না। আমাদের ফ্যামিলিতে সবাই ফিট। বাবাও খুব ফিট ছিলেন। তবে একটা জিনিস ছিল, আমি হাঁটতাম প্রচুর। আর হিরো যখন হলাম, প্রচুর এক্সারসাইজও করতাম। সোনারগাঁও হোটেলের হেলথ ক্লাব যখন চালু হলো, তখন থেকে আমি মেম্বার হলাম, নিয়মিত সাঁতার কাটতাম। এখন তো তেমন কিছুই করি না। তবে বাসায় ও ছাদে সুন্দর হাঁটার জায়গা আছে। সপ্তাহে ৫ দিন ২০-৩০ মিনিট নিয়ম করে হাঁটি।

রুনা লায়লা ও আলমগীর

প্রশ্ন :

আর খাবার?

আমি খাবার কন্ট্রোল করি না। সবচেয়ে পছন্দের খাবার গরুর মাংস। রুনা (রুনা লায়লা) মাঝেমধ্যে আমার পছন্দের গরুর মাংস রান্না করে। খুব ভালো রান্না করে। আমিও বেশ মজা করে খাই।

প্রশ্ন :

নিজে রান্না করতে পারেন?

রান্না আমি একদমই পারি না।

আরও পড়ুন