এসব নিয়েই আমার জীবন

১০ বছর পরে আবার দেওয়া হলো পশ্চিমবঙ্গের ‘আনন্দলোক পুরস্কার’। সেখানে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান। বর্তমান কাজ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে

জয়া আহসান

প্রশ্ন :

অভিনন্দন। আনন্দলোক সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার এটা আপনাকে কতটা অনুপ্রাণিত করবে?

সম্মাননা তো কাজের ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেই। কিন্তু এগুলো তো হিসাব কষে আসে না। যখন আসে খুব ভালো লাগে। দর্শক ভালোবাসার মতো কাজের এই অনুপ্রেরণা অবশ্যই ভালো লাগে।

প্রশ্ন :

দীর্ঘ ১০ বছর পরে এই সম্মাননায় সেরা অভিনেত্রী হিসেবে এই প্রাপ্তিটা কেমন লাগছে?

আনন্দলোক বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। এটা আনন্দবাজার গ্রুপের। শত বছর হয়ে গেল প্রায়। যেকোনো জিনিস যত পুরোনো হয়, সেটার ভার তত বেশি হতে থাকে। পুরস্কারটির জন্য যোগ্য সবাই মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাঁরা সবাই কলকাতার মানুষ। আমি তো ওখানকার মানুষ নই। বাংলাদেশের হয়ে সম্মানজনক পুরস্কারটি হাতে তুলতে পারলাম, দেশে নিয়ে এলাম। এ জন্য আমি পরিচালক অতুলদার কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রশ্ন :

‘বিনিসুতোয়’ সিনেমাটি আন্তর্জাতিকভাবেও সমাদৃত, দর্শকদের প্রশংসাও পেলেন, পেয়েছেন বিদেশের একাধিক সম্মাননা কিন্তু সিনেমাটি বাংলাদেশের দর্শক দেখতে পারছে না...

সিনেমাটি দেশের দর্শকদের দেখানোটা আমার হাতের নাগালে নেই। আর হ্যাঁ, আমরা অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছি। সিনেমাটির চরিত্র দর্শক পছন্দ করেছেন। সিনেমায় আমার চরিত্রে নানা ডিলেমা ছিল। আমার চরিত্রটিই বহু জীবন যাপন করে। গল্পে সে নানা চরিত্রে অভিনয় করে। যে কারণে চরিত্রটি আমাকে ক্রিয়েটিভ চ্যালেঞ্জিংয়ের মধ্যে ফেলেছিল। কলকাতার মুক্তি পাওয়ার পর একশ্রেণির দর্শকের প্রশংসা পাব ভাবিনি।

জয়া আহসান

প্রশ্ন :

সম্প্রতি আপনি ইরানি একটি সিনেমায় শুটিং করেছেন, সিনেমায় কীভাবে যুক্ত হলেন?

তাঁরা আমার কাজ দেখে বাংলাদেশে যোগাযোগ করেছিলেন। বলেছিলেন আমাকেই কাস্টিং করতে চান। পরে তাঁদের সঙ্গে বসলাম। বেশ ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন :

ইরানি সিনেমা তো আপনার পছন্দের। আপনার সিনেমাটি নিয়ে কিছু বলবেন?

ইরানি ছবি যেমন হয়, দহরম-মহরম নেই, ঘটনার ঘনঘটা নেই। মনে হবে জীবনটাকেই দেখতে পরছেন। সমাজে আশার আলো দেখানো গল্প, বেঁচে থাকার গল্প। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের পরিচালক তাঁর ইরানি ভাষায় কথা বলছিলেন। একজন অনুবাদ করে দিচ্ছিলেন। কাজটি করতে গিয়ে মনে হলো, সিনেমার জন্য ভাষা কখনোই সমস্যা নয়। অনেক সময় সাবটাইটেল ছাড়াও আমি সিনেমার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারি, এই সিনেমার শুটিংয়েই তাই হয়েছে।

জয়া আহসান

প্রশ্ন :

দেশ–বিদেশে সিনেমায় আপনার এত ব্যস্ততা, আবার সামাজিক কাজেও সময় দেন—নিজের জন্য সময় হয়?

শিল্পী ও মানুষ হিসেবে সামাজিক দায়িত্ব আছে, সেগুলো অবশ্যই করতে হয়। শুধু অভিনয় করব, হাততালি পাব, মানুষ বড় বড় কথা বলবে কিন্তু আমাকে দিয়ে যদি কোনো মানুষের উপকার না হয়, তাহলে কী লাভ হবে?

জয়া আহসান

প্রশ্ন :

কলকাতার দর্শকদের কাছে জয়া আহসান কয়েক বছর ধরে পরিচিত নাম। তাঁদের একজন হয়ে নিশ্চয় সহজ ছিল না?

আমাকে কাজের জন্য ধৈর্য ধরতে হয়েছে। আমি কাজ করেছি। আমার কাছে এটা ভালো লাগে যে কলকাতার মানুষের এমনিতেই বাংলাদেশিদের প্রতি অন্য রকম ভালো লাগা আছে, সত্য কথা। নিজের ঘরের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। তার মধ্যে কেউ কাজ পারলে তাঁরা আরও আপন করে নেন। তাঁদের প্রয়োজন হলে আপনাকে ডাকবেই, দর্শকেরাও মাথায় তুলে রাখেন। আমি কাজটার প্রতি সৎ থেকেছি। আমি পরিচিত হওয়ার জন্য কলকাতায় কাজ করি না। কলকাতার কাজগুলো দেখলে লক্ষ করবেন, আমার পপুলার ঘরানার কোনো কাজ নেই। দেশেও যে কাজ আমি মন থেকে করতে ভালোবাসি, কলকাতাতেও সেগুলোই করি।

আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড হাতে জয়া আহসান। ছবি: ফেসুবক থেকে

প্রশ্ন :

আপনি কি কলকাতা থেকে মাত্রই দেশে ফিরলেন?

হ্যাঁ, এই কথা বলতে বলতে বাসায় ঢুকছি। আর ঢাকায় নেমেই একটা প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলাম। কোভিড কালীন তিনি বেশ কটি ছবি এঁকেছেন। ডার্ক সিরিজ। সেটার প্রদর্শনীর সুযোগটা মিস করতে চাইনি। এখন বাসায়।

প্রশ্ন :

আপনি পোষা প্রাণী ও গাছকে খুবই ভালোবাসেন। অনেক দিন বাইরে ছিলেন। এসব ছেড়ে থাকতে...

গাছগুলো এখনই দেখতে যাব। আমি প্রাণ–প্রকৃতি দুটিই ঘরের মধ্যে রাখতে চাই। যেন একটু মানবিক মানুষ হয়ে থাকতে পারি। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা যায়। দেশের বাইরে থাকলেও ভিডিওতে কথা হয়, দেখি তাদের। আবার কিছু পথশিশু আছে, তাদেরকেও দেখেশুনে রাখতে হয়। যেখানেই থাকি, তাদেরও খোঁজখবর নিই। এসব নিয়েই আমার জীবন।

প্রশ্ন :

আপনাকে তো আড্ডায় বাইরে তেমন দেখা যায় না?

আমি তেমন একটা সোশ্যালাইজিং করি না, সোশ্যাল মানুষ আমি নই। এটা বলতে আড্ডাবাজিতে নেই। আমার আড্ডা বলতে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি দেখা, কোনো প্রদর্শনীতে যাই। কখনো পার্কে যাই। আমার পোষ্যগুলো নিয়ে সকালে ছাদে যাই, গাছগুলোর যত্ন নিই। তারপরে কাজে যাই। এসবই আমার ভালো লাগে। এসবে আমার রিলিফ।

বিনি সুতোয় ছবির গল্প শুরু হবে টেলিভিশনের এক রিয়েলিটি গেম শোর মধ্য দিয়ে।

প্রশ্ন :

কলকাতায় সময় কেমন কাটে?

কলকাতার সময়গুলো ভীষণ রকম বাজে ব্যস্ততায় কাটে। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে কাজে চলে যাই। কলকাতাও আমার বাড়ির মতো হয়ে গেছে। এখানেও নিচে কয়েকটি পোষ্য আছে, গাছ আছে, সেখানে সময় কাটাই।

প্রশ্ন :

আপনার প্রযোজনায় অনুদানের ‘রইদ’ সিনেমার কী অবস্থা?

পরিচালক বললেই আমরা শুটিংয়ের জন্য রেডি হবে। তিনি এখন হয়তো ‘হাওয়া’ সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।

প্রশ্ন :

অবশেষে আপনার ‘বিউটি সার্কাস’ সেন্সর পাচ্ছে?

এটা অনেক দিন ধরে আটকে আছে। এটা আর্টিস্ট হিসেবে কষ্টের। এতে অনেকের গাফিলতিও ছিল। সেই জায়গায় সরকার আরও ভালো। বাংলাদেশ সরকার অনুদানের জন্য অসম্ভব ভালো। তারা সুন্দর করে অনুদান দেয়, সময়মতো কাজটা চায়, অনুপ্রাণিত করে। সিনেমাটি আপডেট এখন ডিরেক্টর বলতে পারবেন। কেন এত দিন আসেনি।

জয়া আহসান

প্রশ্ন :

কোন কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন?

ভূতপরী’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’সহ সাত–আটি সিনেমা, বাংলাদেশেও ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘বিধবাদের কথা’, ‘নকশিকাঁথা জমিন’সহ একাধিক সিনেমার সামনে আসবে। গত দুই মাসে বড় দুটি সিনেমার শুটিং করেছি। এখন কিছুদিন বিশ্রাম নেব।

আরও পড়ুন