কর্মের চেয়ে ভালোবাসা বেশি পেয়েছি: কুমার বিশ্বজিৎ

আজ জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের জন্মদিন। চিরসবুজ এই গায়কের আসল বয়স কত, তা আজও জানা যায়নি। দিনটি নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা এবং একই সঙ্গে সংগীতাঙ্গন নিয়ে নানা উপলব্ধির কথা জানালেন তিনি।

কুমার বিশ্বজিৎ
সংগৃহীত

শুভ জন্মদিন।
ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

আপনার বয়স কত, তা আজও জানা গেল না।

আমার ২৮ শেষ হয়ে এবার ২৯–এ পড়লাম। (হাসি)

কুমার বিশ্বজিৎ
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

জন্মদিন এলে কী উপলব্ধি হয়?

মনে হয়, জীবন থেকে আরেকটা বছর চলে গেল। জন্মদিন এলেই তাই ভয়ও লাগে, মৃত্যুর দিকে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার কথা মনে হয়। আগে হয়তো এই দিনে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। এই যে জামা পাচ্ছি, নানা ধরনের উপহার পাচ্ছি, কত কী! এখন তো কার কী লাগবে, ছেলের লাগবে, বউয়ের লাগবে, ভাইয়ের লাগবে—এসবের মধ্যেই তো আছি। তবে মানুষের ভালোবাসার তীব্রতা নতুন করে উপলব্ধি করি।

প্রশ্ন :

জন্মদিন এলে এমনও কি মনে হয়, একটা স্বপ্ন ছিল। পূরণ করতে চাই, কিন্তু বাস্তবায়িত হচ্ছে না?

স্বপ্ন তো মানুষের অনেক থাকে। স্বপ্ন না থাকলে তো মানুষ এগোতেও পারে না। তবে আমি কখনো অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন দেখিনি। যেটার সঙ্গে আমার প্রাপ্যতা কখনো মিলবে না, সেটা তো কখনোই নয়। নিজের প্রতি বিশ্বাস আমি রাখি, আছে, সব সময় ছিলও। কেউ আমাকে কিছু দিলেন, অকারণ অবজ্ঞা করলেন—তাতে কিছু যায় আসে না। আমার ভেতরের সবচেয়ে বড় শক্তিটা হচ্ছে আমার আত্মবিশ্বাস। আমি জানি, আমি সততার সঙ্গে কাজ করি, মিউজিক করি। আমি কখনো এটাকে এক্সপ্লয়েট করার চেষ্টা করিনি। যত দিন পর্যন্ত গানবাজনা করব, এক্সপ্লয়েট করার চেষ্টা করবও না। এই জীবনে অপ্রাপ্তি শুধু একটাই আছে, এখনো আমাদের সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও প্রসারিত করতে পারিনি। আমার মনে হয়, আমাদের আরেকটু ভূমিকা নেওয়ার দরকার ছিল। যেহেতু আমাদের প্রোডাকশন হাউসগুলোরও সেই বিচার, বুদ্ধি আর বিবেচনাও ছিল না। শিক্ষার কথাটা না–ই বা বললাম। সেভাবে আমাদের সৃষ্টিশীল কর্মের প্রচার করেনি বলে আমাদের গান আন্তর্জাতিকভাবে আরও ভালো জায়গায় যেতে পারেনি। সৃষ্টিশীল ভালো কর্মের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ও আছে। যত দিন যায়, নিজেকে তাই ততই অপরাধী মনে হয়, সংকীর্ণ মনে হয়। জীবনের এই প্রান্তে এসে মনে হয়, কিছু কিছু সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলো অপাত্রে চলে গেছে। তাই এসব গানকে নতুন করে শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি। ইতিমধ্যে ঘোষণাও দিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় কোরবানির ঈদেও একটা গান বের হচ্ছে, আশির দশকে গাওয়া সেই গান নতুন করে প্রকাশ করছি।

গান গাইছেন কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: সুমন ইউসুফ

প্রশ্ন :

কোন গান?

রিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা ‘প্রশ্ন তোমার, আমায় কোথায় রাখো, হৃদয় বলে, হৃদয়জুড়ে তুমি থাকো’। কানাডায় এই গানের শুটিং করলাম। নতুন সংগীতায়োজনে গানটি করেছি।

প্রশ্ন :

বলছিলেন একজীবনে ভালোবাসা কম পাননি।

নিঃসংকোচে বলতে চাই, আমার কর্মের চেয়ে ভালোবাসা বেশি পেয়েছি। সেটা আমজনতারই ভালোবাসা।

প্রশ্ন :

আমজনতার ভালোবাসার বিপরীতে প্রতিহিংসার কারণও কি হয়েছেন?

আমজনতার কাছ থেকে যে পরিমাণ স্বার্থহীন ভালোবাসা পেয়েছি, আমার পরিবার মানে শিল্পী পরিবারের কাছ থেকে তা পাইনি। এটা বলতে দ্বিধা নেই, প্রতিহিংসার কারণও হয়েছি।

প্রশ্ন :

কী কারণে এমনটা হয়েছে?

একে অপরের প্রতিযোগিতা থাকা ভালো। একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা ভালো। কিন্তু হিংসা থাকা ভালো নয়। হিংসা থেকেই এসব হয়। সংকীর্ণ মন থেকে এসব হয়।

প্রশ্ন :

আপনি এসব মোকাবিলা করেছেন কীভাবে?

ইগনোর, ইগনোর এবং শুধুই ইগনোর। কারণ আমি মনে করি, কর্মেই মানুষের পরিচয়। আমি যদি ‘পুতুলের মতো করে’ গানের কথা ধরি, গেয়েছিলাম সেই ১৯৮২ সালে, এখন ২০২২। ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। এত বছর তো আমি আমার কর্ম দিয়েই এগোচ্ছি। কেউ তো আমাকে দান বা দয়া করছেন না। আমি সব সময় এটা বিশ্বাস করি, কর্মটাই শেষ পর্যন্ত থাকবে। আমি যদি ভাই–ব্রাদার দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকি, পরনির্ভরশীল প্রতিভা হই, কে আমাকে কবে কাজ দেবে, এ–ও কবে ডাকছে, কেন ডাকছে না, নো। আমার কাজ মানুষই যখন চাইবে, আমার কাউকে লাগবে না। কাউকেই না।

প্রশ্ন :

কাজ করতে গিয়ে এসবের কারণে কি মাঝেমধ্যে কখনো হতাশ হয়ে পড়তেন? মানুষ ভালোবাসছে, কিন্তু যে অঙ্গনে কাজ করছেন, তাদের হিংসার শিকার হচ্ছেন।

এ ধরনের হিংসা, বাধা আমাকে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করে। শক্তি দেয়, সাহস জোগায়, নিজের প্রতি আরও সিরিয়াস হওয়া এবং কর্মের প্রতি দায়িত্ববান হতে বেশি শেখায়। এটা বরং আমার জন্য ইতিবাচক। আমি মনে করি, কারও মধ্যে প্রতিভা না থাকলে কেউ হিংসা করবেন না। বুঝতে হবে যাঁকে হিংসা করছেন, তিনি কিছু একটা। ওই হিংসাত্মক মানুষের কথায় মাথা না ঘামিয়ে কাজ দিয়ে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হয়। দেখা যায়, একটা সময় আপনাআপনি ওরা চুপ হয়ে যায় এবং আশপাশে ঘুর ঘুর করে।

প্রশ্ন :

বহুদিন পর চলচ্চিত্রের গানে আপনাকে পাওয়া গেল।

দীর্ঘদিন পর একটা ফিল্মিক গান গাইলাম। গলুই সিনেমার এই গান গেয়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। শাকিব খান তো দারুণ পারফর্ম করেছেন। আমার গাওয়া ‘মা’ গানে মনে হয় সর্বশেষ ঠোঁট মিলিয়েছিলেন শাকিব। ভালো কথা ও সুরের আরও গান গাইতে চাই।