বিদায়ী বছরের শেষ দিনে মুক্তি পেয়েছে ‘রাত জাগা ফুল’ ছবিটি। এটি অভিনেতা মীর সাব্বির পরিচালিত প্রথম সিনেমা। ছবিটি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনেতা।
প্রশ্ন :
‘রাত জাগা ফুল’ নিয়ে কেমন প্রত্যাশা ছিল, কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
প্রত্যাশা ছিল ছবিটি দর্শককে দেখানো। দর্শকেরা দেখলেই হবে। একজন দর্শকও যদি হলে গিয়ে ছবিটি দেখেন, তা–ও ভালো। কিন্তু মুক্তির পর সেই প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। আমি বলব না যে হলে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় ছিল। কিন্তু যাঁরাই দেখছেন, হল থেকে বের হওয়ার পর দেখেছি, প্রত্যেকের মুখে প্রশান্তির হাসি। এটিই আমার ভালো লাগা। আমার সিনেমা বলে বলছি না। এই ছবি দেখে একজন দর্শকও ফেসবুকে বা অন্য কোথাও বাজে মন্তব্য করেননি। সবাই বলেছেন যে অনেক দিন পর একটি ছবি দেখে চোখের আরাম হয়েছে, মনের আরাম হয়েছে। এই কথা শোনার পর পরিচালক হিসেবে আমার আর কিছু বলার আছে, বলেন? ছবির নানান ধরনের সংলাপ মানুষ পছন্দ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। মানুষ সিনেমা তো দেখছেনই, আবার সংলাপগুলোও ভালোবেসে পোস্ট করছেন। আমাকে অনেক বেশি আবেগপ্রবণ করেছে এসব ঘটনা। সবকিছু ঠিক থাকলে তৃতীয় সপ্তাহেও চলবে সিনেমাটি।
প্রশ্ন :
পরপর বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছবি নিয়ে আলোচনাও দেখা গেছে। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় বেশির ভাগ হল থেকে নেমে গেছে ছবিগুলো। এই পরিস্থিতিতে ‘রাত জাগা ফুল’ আপনাকে ভাবাচ্ছে না?
আমি আশাবাদী মানুষ। আমি আশা করছি, আমার ছবিটি দর্শক কন্টিনিউ করবেন, করছেনও। আমি মনে করি, ভালো সিনেমায় যেসব উপাদান থাকে, কিছুটা হলেও তা আমার ছবিতে আছে। হলে উপচে পড়া ভিড় না থাকলেও গত এক সপ্তাহে ছবিটি নিয়ে সেই আস্থা পেয়েছি আমি। জীবনের শুরু থেকেই অনেক পরিশ্রম করে কাজ করেছি, এখনো করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন :
এই সিনেমার নির্মাণ থেকে শুরু করে মুক্তির আগপর্যন্ত প্রচারের ভিন্ন ধরনের কৌশল দেখা গেছে। ছবিসংশ্লিষ্ট গানের তারকা থেকে শুরু করে দেশসেরা অনেক অভিনয়শিল্পীও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবির প্রচারে যুক্ত হয়েছেন।
জীবনে ঠেকে ঠেকেই শিখি আমরা। পরিকল্পনা করে প্রচারে একটা সিনেমা অনেকখানি এগিয়ে যায়। আমি দেশ-বিদেশের সিনেমার মার্কেটিং দেখেছি। কলকাতা, মুম্বাই, তুর্কিসহ নানা দেশে সিনেমাকে দর্শকের কাছে নিয়ে যেতে নানাভাবে প্রচার করে। কিন্তু আমাদের এখানে সিনেমায় বাজেট সমস্যাসহ নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে। সিনেমা বানালেই তো হবে না। দর্শককে দেখাতে হবে, নিজেরা দেখতে হবে। এ জন্য দর্শকের কাছে সিনেমাটি নিয়ে যেতে হবে। না জানলে হলে দর্শক আসবেন কীভাবে? এখন তো সিনেমার প্রচারে মাইকও ব্যবহার করা হয় না। ঢোল পিটিয়ে সিনেমার প্রচারও নেই। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই সক্রিয়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সিনেমার খবরাখবর দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারে। আমি মনে করি, এখন সোশ্যাল মিডিয়াই সিনেমার মাইক। ওই মাইকই এখানে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন :
সরকারি অনুদানের টাকায় একটি ভালো সিনেমা বানানোর চ্যালেঞ্জ কতখানি?
আমি ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে কোনো আপস করিনি। এ জন্য অনুদানের টাকার সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। শুটিংয়ের সময় আমাকে অনেকেই বলেছেন, অনুদানের বাইরে আমি যে বাড়তি টাকা খরচ করছি, তা ঘরে ফিরবে কি না...। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, গত ২০–২২ বছর অভিনয় করে মিডিয়া থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছি। এখন মিডিয়াকে কিছু দিই না!
প্রশ্ন :
কিন্তু সিনেমার সঙ্গে বাণিজ্যের সম্পর্ক। প্রযোজকের টাকা ফিরে আসতে হবে। তাহলে এই ছবি থেকে বাণিজ্যের বিষয়টি আপনার মাথায় নেই?
অবশ্যই আছে, থাকবে। আমি বলছি, বাণিজ্য হলে আমি খুশি হব। বাণিজ্য না হলেও অখুশি হব না। আমি মনে করব, বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এটা আমার উপহার।
প্রশ্ন :
কখন মনে হলো সিনেমা নির্মাণ করবেন?
২০০৬ সালে আমি যখন নাটক প্রযোজনা করি, তখন থেকেই সিনেমা বানানোর স্বপ্ন বুনেছি। সে সময় মনে করেছি, সিনেমা বানাব। অনেক গুণী শিল্পী আমার পরিচালনায় কাজ করেছেন। তাঁরা বলতেন, ‘সাব্বির, তুই সিনেমা বানা। ভালো করতে পারবি।’ তাঁদের কথায় আমি সিনেমা বানানোর জন্য আরও বেশি উৎসাহিত হলাম। একটা দীর্ঘ সময় পর অনুদানের ছবির জন্য আবেদন করলাম। পেয়েও গেলাম।
প্রশ্ন :
২০০৬ সালে স্বপ্ন দেখা, ২০২১ সালে এসে সিনেমা বানানো। সিনেমার এই মন্দাকালে ঝুঁকি মনে হয়নি?
জীবনের কোথায় ঝুঁকি নেই? রাস্তাঘাটে, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে কি ঝুঁকি নেই? ঝুঁকি থাকবেই। আমি মনে করি, ঝুঁকি ও প্রাপ্তি—এই দুই নিয়েই জীবন। সময়টা ব্যাপার না। পথ চলতে হলে ভুল হবে, আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। আবার স্বপ্ন দেখতে হবে। আমার এই সিনেমার নির্মাণটা এভাবেই।
প্রশ্ন :
ছবিটিতে আপনি অভিনয়ও করেছেন। দুটি কাজ সমন্বয় করলেন কীভাবে? সমস্যা হয়নি?
আমি যেটা করেছি, শুটিংয়ের আগে পুরো ছবির পরিকল্পনাটা সাজিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমি সিনেমাটিকে কীভাবে নির্মাণ করব, সেটার জন্য পরিচালকের চোখ হলো ক্যামেরা। সে ক্ষেত্রে ক্যামেরাম্যান একটা বড় ভূমিকা পালন করেন। আমার দ্বিতীয় যোদ্ধাই হলেন ক্যামেরাপারসন। আমি যখন ক্যামেরার সামনে থেকেছি, আমার চোখে দৃশ্যটি কেমন হবে, তা আগেই ক্যামেরাম্যানকে বলা থাকত। পরে মনিটরে দেখে নিতাম। আমার মনের মতো না হলে আবারও শট দিয়েছি। এভাবেই করা। সমস্যা হয়নি।
প্রশ্ন :
নিয়মিত বানাবেন সিনেমা?
হ্যাঁ, নিয়মিতই করব। বেশ কটি গল্প প্রস্তুত আছে। দ্বিতীয় সিনেমা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। নামও ঠিক করেছি। পরে এটা নিয়ে কথা বলা যাবে।