বাস্তবে প্রেমের টানে তো প্রেমিকা বিদেশ থেকে চলে আসছে

আজ ১১ মার্চ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী বাপ্পারাজ এর জন্মদিন। বাবা দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়ক রাজ রাজ্জাকের পরিচালনায় ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে অভিনয়ে আসেন বাপ্পারাজ। জন্মদিনে মুঠোফোনে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কথা হলো আরও নানা প্রসঙ্গে। দেশের চলচ্চিত্রের এই নায়কের সঙ্গে আলাপ তুলে ধরা হলো প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য।

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন।

ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

দিনটি কেমন কাটছে?

এই তো ভালোই। খারাপ কাটার তো কোনো সুযোগ নেই।

বাপ্পারাজ

প্রশ্ন :

আপনার বয়স কত হলো?

বললেই–বা আর কী হবে। বয়স বলেও তো লাভ নেই। আমাকে কেমন দেখা যায়, সেটাই বড় বিষয়।

প্রশ্ন :

কেমন দেখায়?

আমার তো এখন ৩৪ অথবা ৩৫ বছর মনে হয়।

প্রশ্ন :

মাত্র?

হ্যাঁ, মাত্র।

প্রশ্ন :

তার মানে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন এলেন?

তা না। আসছি তো অনেক আগে। কেন জানি মনে হয়, বয়সটা ৩৪–৩৫ বছরে এসে ফিক্সড হয়ে গেছে। এই আরকি।

প্রশ্ন :

এখানেই ফিক্সড হলো? আর আগেও না কেন, পরেও না কেন?

আমাকে যেমন দেখায়, তাতে ৩৪–৩৫ বছরের মতো মনে হয়। হয়তো এর আগে–পরে হলে মিলবে না। (হা হা)। যে বয়সের সঙ্গে মিলল, সেখানে এসে হ্যাং হয়ে গেছে আরকি।

প্রশ্ন :

জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন?

আমি তো কোনো ডে–ই সেলিব্রেট করি না। নিজেরটাও না, অন্য কারোটাও না। (হাসি)। এসব থেকে এমনিতে বিরত থাকি। ছোট ভাই সম্রাটের পিচ্চিটার করতে হয়।

প্রশ্ন :

ভালো লাগে না বলেই করেন না? নাকি অন্য কোনো ইস্যু?

ভালোই লাগে না। আমার তো মনে হয়, এ ধরনের উদ্‌যাপন একটা ইস্যু। অনেককে তো বলতে শুনি, তুমি আমার বার্থ ডে ভুলে গেলা! তো, ভুলে গেছি তো কী হয়েছে? জন্মদিন এলেই কী বা না এলেই কী।

বাপ্পারাজ

প্রশ্ন :

একটা বছর পার হয়ে যাওয়াকে একেকজন একেকভাবে দেখেন। আপনি কীভাবে দেখেন?

আমি ইচ্ছা করলেও এই দিনটাকে আটকাতে পারব না। উদ্‌যাপন করলেও সেটার কোনো বেনিফিট খুঁজে পাইনি। তাই এসবে মোটেও আগ্রইী না। বেকার কাজকর্মের মধ্যে আমি খুব কমই যাই। এসব কাজ আমার কাছে স্ট্রেইট আনপ্রোডাকটিভ মনে হয়।

প্রশ্ন :

আপনার বাবা নায়ক রাজ রাজ্জাকের কারণে নিশ্চয় আপনাদের বাসায় এই দিনগুলোর উদ্‌যাপন একটু বড় পরিসরে হতো?

আব্বার চারপাশে কিছু তোষামোদকারী ছিল, তাদের খাওয়ানোর ইস্যু থাকত। চলচ্চিত্রের একটা গ্রুপকে লালন–পালনের জন্যও করতে হতো। সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে এসব করতে হতো। তাঁর জায়গা থেকে এগুলো তাঁকে করতেই হতো। শুনতে খুব রুড শোনালেও এটাই বাস্তবতা। তবে আব্বারও এসবে খুব একটা আগ্রহ দেখতাম না। কিছু ব্যাপার থাকে না, সমাজে থাকলে এসব করতে হয়—তাই করতে হয়েছে।

প্রশ্ন :

কেউ কেউ বলেন, জন্মদিন এলে তাঁদের মৃত্যুর কথাও চিন্তা হয়। আপনার উপলব্ধি কি হয় মৃত্যু নিয়ে?

মৃত্যু চিন্তা করে লাভই কী। ওটা তো সময় হলেই আসবে। চিন্তা করে তো আর ওটাকে ঠেকিয়ে দেওয়া যাবে না। কোনো অপশন যদি থাকত, তাহলেও হয়তো ভাবা যেত। চেষ্টা করতাম, কসরত করতাম, ফন্দিফিকির বের করার চেষ্টা করতাম। যেটা আমার হাতেই নেই, সেটা নিয়ে ভেবে কী লাভ। মৃত্যু তো অবধারিত, ওটা আসবেই। এখন কেউ যদি বলে, মৃত্যুচিন্তা করলে ভালো কাজ করবে। আমি মনে করি, যে ভালো কাজ করার, সে এমনিতে করবেই। যে না করার, সে যতই মৃত্যুচিন্তাই করুক, বদমাশি করবেই—এ রকম বহু নজির আছে। আমি মরব, এই চিন্তা করে কেউ ভালো কাজ করবে, এটা ভুয়া। এসব আবেগের কথা।

প্রশ্ন :

আপনার কাছে জীবন কী?

জীবন মানেই যন্ত্রণা।

রাজ্জাকের সঙ্গে ছেলে বাপ্পারাজ।

প্রশ্ন :

চলচ্চিত্রে আপনাকে ব্যর্থ প্রেমের সফল নায়ক বলা হয়। এটা নিয়ে কী বলবেন?

আমি ওই জায়গায় বেস্ট ছিলাম বলেই সবাই এমনটা বলে থাকেন। আমি ১০০ ছবির মধ্যে ১০–১৫টায় ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করেছি। বাকিগুলো তো নরমাল চরিত্র করেছি। এত ছবির মধ্যে ওই ১০–১৫টা যখন সবকিছু ছাপিয়ে গেছে, লোকে মনে করে, এই ব্যাটা বুঝি ওটাই—ওটাই তো একজন শিল্পীর সফলতা।

প্রশ্ন :

এটা নিয়ে কোনো মনোবেদনা আছে?

মনোবেদনা থাকারই বা কী আছে। কজনই এমনটা পারে। আমি পারেছি। সফল হয়েছি। আমার ছবিতে হিরো থাকা অবস্থায় স্যাক্রিফাইজ করে ওকে টপকে গেছি, এটা আমার ক্রেডিট না?

প্রশ্ন :

আপনার বাস্তব জীবনটা কি এ রকম স্যাক্রিফাইজিং?

আমি হাত ওপরে রাখতেই ভালোবাসি। হাত পাততে ভালোবাসি না। পাতব কেন? এটা আমার জীবনেও আছে, ছবিতেও আছে। (হাসি)

দুই সন্তান বাপ্পারাজ ও সম্রাটের সঙ্গে রাজ্জাক

প্রশ্ন :

বাস্তব জীবনে কি প্রেমে ব্যর্থ হয়েছেন?

না, একদমই না। বাস্তবে আমি সফল প্রেমিক। আমার জীবনে তো একটা সাংঘাতিক কাহিনি আছে। আমার প্রেমের কাহিনি তো কেউ জানেই না। বাস্তবে প্রেমের টানে তো প্রেমিকা বিদেশ থেকে চলে এসেছে। এরপর বিয়ে করেছি। তাই বলতে পারি, প্রেমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল।

প্রশ্ন :

এবার সিনেমা প্রসঙ্গ। চলচ্চিত্রে কাজ করা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

আমি তো চলচ্চিত্র ছেড়ে যাইনি। অনেককে বলতে শুনি, আমি সিনেমা ছেড়ে চলে গেছি। আবার পরদিন দেখি, ফেসবুকে মহরতের ছবি দিয়ে বলছে, আবার ফিরে আসছি দর্শক অনুরোধে। দর্শক কি ওই শিল্পীর বাসায় গিয়ে অনুরোধ করছেন, নাকি মিছিল করেছেন। এ রকম অনেকে বলেন। আমার কথা হচ্ছে, ছেড়ে দিলে চুপচাপ চলে যান। এখানে ঘোষণা দেওয়ার কী আছে। ঢোল পেটানোর কী আছে। আমি যে কাজ কমিয়ে দিচ্ছি, কাউকে বলছি? আবার যদি কখনো ডাক পাই, অভিনয় করব। ছেড়ে যাওয়ার কী আছে। গল্প ভালো লাগলে আবার শুরু করব।