মাহির সঙ্গে তিনি এই ভাষায় কথা বলেছেন, সেটা তো আমি জানতামই না: ইমন

নায়িকা মাহিয়া মাহিকে কেন্দ্র করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে ঢালিউড তারকা মামনুন ইমনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। রোববার রাত থেকেই দেশের এটি আলোচিত একটি ঘটনা। বিষয়টির বিস্তারিত জানতে আজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলো কথা বলে ঢালিউড তারকা মামনুন ইমন–এর সঙ্গে

প্রশ্ন :

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও আপনার মধ্যকার ফাঁস হওয়া ফোনালাপ কবেকার?

এটা সম্ভবত দেশে করোনার সংক্রমণের ঠিক আগমুহূর্তে। বনানীর একটি রেস্টুরেন্টে বসে তখন আমরা একটা চলচ্চিত্রের শুটিং পরিকল্পনা করছিলাম।

নায়িকা মাহিয়া মাহিকে কেন্দ্র করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে ঢালিউড তারকা মামনুন ইমনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে
কোলাজ : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এই প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কি আপনার নিয়মিত কথা হতো?

মুরাদ ভাইয়ের সঙ্গে এই ঘটনার আগে ওয়াজেদ আলী সুমন ভাইয়ের একটি সিনেমা নিয়ে কথা বলতে মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। এ ছাড়া এফডিসির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানেও দেখা হতো। তিনি যেহেতু আমাদের অঙ্গনের প্রতিমন্ত্রী, দেখা হতেই পারে। ফোনালাপে আগে আমি একদিন অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম, তখন তিনি ফোন দেন, যেটা আমি ধরতে পারিনি। কারণ, আড্ডায় থাকায় আমি তাঁর ফোন খেয়াল করিনি। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে ওই কারণেই তিনি বলেছেন, ফোন ধরোস নাই ক্যান। আমি বলেছি, খেয়াল করি নাই। মিস করে গেছি। ফোন যে ধরতে পারিনি, এটা স্পষ্ট বলা আছে।

প্রশ্ন :

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন রাত আনুমানিক কয়টা?

সম্ভবত ৯টা হবে। বনানীর একটি রেস্টুরেন্টে তখন মাহি, ডিরেক্টর, প্রযোজক মিলে সিনেমার পরিকল্পনা করছিলাম। এর মধ্যে কেউ একজন বলছিল, লকডাউন শুরু হয়ে যাবে, ছবির কাজ কী হবে, এসব। তবে তার আগে একদিন আমি ও মাহি রিহার্সাল করছিলাম, তখন মুরাদ ভাই ফোন করে বলেছিলেন, আয় তোদের খাওয়াই।

প্রশ্ন :

এর আগে কি কখনো ফোনে এই ধরনের কথা বলেছিলেন প্রতিমন্ত্রী? যেমন এরে নিয়ে আয়, ওরে নিয়ে আয়।

না না, এর আগে আমাকে এমন কথা জীবনেও বলে নাই। এরে নিয়ে আয়, ওরে নিয়ে আয়—এসব কথা কখনো বলেননি। তবে তাঁর সঙ্গে সর্বোচ্চ আমার ২-৩ বার কথা হইছে। এ রকম কথোপকথন জীবনে প্রথম। তা ছাড়া তিনি মন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী) মানুষ, ফোন দিলে তো আমি স্বাভাবিকভাবে ধরব এবং কথা বলব।

মাহিয়া মাহি
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রশ্ন :

কিন্তু তিনি কেন বললেন, মাহিকে নিয়ে আয়?

এটা দুষ্টামি করে বলছে, নাকি কী কারণে বলছে, তা আমি জানি না।

প্রশ্ন :

এটা দুষ্টামি করে বলেছে কি না, এই বিষয় নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে পরে আর কোনো কথা হয়নি?

না না, আর এ বিষয়ে কোনো কথাই বলিনি। পরে লকডাউন শুরু হলে আমি বাসায় ঢুকে যাই। তবে বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নয়ন শীর্ষক আলোচনা করতে একবার আমরা লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। সেদিন আমিসহ মাহি, নিরব, সাইমন ও বাপ্পী ছিলাম। এরপর তাঁর সঙ্গে ফোনালাপ জীবনেও হয়নি। তিনি তো আমার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, তিনি ফোন দিলে ধরতেই পারি। তবে আমি প্রস্তুত ছিলাম না এমন পরিস্থিতির। তিনি ফোন দিয়েছেন, আমি ধরছি। আমি নরমালি কথা বলছি।

প্রশ্ন :

প্রতিমন্ত্রীর এমন কথা কি আপনাকে আতঙ্কিত করেছিল?

মাহির সঙ্গে যে তিনি এই ভাষায় কথা বলেছেন, সেটা তো আমি জানতামই না। আজই শুনলাম, কী ভাষায় তিনি কথা বলেছেন!

প্রশ্ন :

কিন্তু তিনি আপনাকে তো বলল, মাহিকে বিভিন্ন সংস্থার নাম দিয়ে ভয় দেখিয়েছে?

এগুলো তো আমারে বলল, দুষ্টামি করছে। তখন আমি বলছি, এসব কিছু লাগবে না। আমি দেখছি। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা ভেবেই বলেছি কিন্তু। আমি বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি শুধু। এরপর কিন্তু আমরা মিটিং করি, সেখানে যাইনি। মাহি বলল, বাসায় চলে যাব, আমিও বাসায় চলে গেছি।

মাহি আমার কলিগ, অবশ্যই তাঁকে সম্মানটা করা উচিত ছিল
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এমন দুষ্টামি তিনি কি করতে পারেন?

কোনোভাবেই এ রকম দুষ্টামি তিনি করতে পারেন না। যা ঘটেছে, তা ঠিক হয়নি। একজন নারীকে সম্মান করা উচিত। মাহি আমার কলিগ, অবশ্যই তাঁকে সম্মানটা করা উচিত ছিল।

প্রশ্ন :

মন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের ধরন দেখে, অনেকে এ–ও বলছেন, তাঁর সঙ্গে আপনার সেই পর্যায়ের সম্পর্ক না থাকলে এমন কথা বলতে পারে না...

আমি ক্লিয়ার করে দিই। তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রী, আমাদের চলচ্চিত্রের সঙ্গে রিলেটেড। তাঁর সঙ্গে অনেকবারই দেখা হয়েছে ঠিকই। কথাও হয়েছে। শুধু আমার না, সব নায়ক-নায়িকার কাছে তাঁর ফোন নম্বর আছে। সবার সঙ্গে তাঁর ভালো রিলেশন। সবার সঙ্গে যা রিলেশন, আমার সঙ্গেও তাই রিলেশন। তিনি সবাইকে কিন্তু ফোন দেন, সেই সুবাদে আমাকেও কিন্তু ফোন দিয়েছেন।

প্রশ্ন :

আপনি বলছিলেন, সবার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। সবাইকে তিনি ফোন দিতেন। আপনার সঙ্গে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এমনটা কি অন্য কারও সঙ্গে ঘটেছে বলে জেনেছেন?

আসলে একজন প্রতিমন্ত্রী সম্পর্কে এই ধরনের ঘটনা তো প্রথম ঘটছে, যা সবার সামনে এসেছে। এর বাইরে আর কারও সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, তা আমার জানা নেই।

প্রশ্ন :

প্রতিমন্ত্রীর কথোপকথনের ভাষা ও ধরন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটা নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

এ রকম একটা ঘটনা অপ্রত্যাশিত, আমার জন্য বিব্রতকর। কারণ, আমাকে সমাজ ও পরিবার নিয়ে চলতে হয়। অনেকে আমাকে ফোন করে বিষয়টা খুলে বলার কথা বলছে, আমি বলব, খুলে বলার কিছু নেই। রেকর্ডে সবকিছু স্পষ্ট আছে। আমি আমার জায়গায় সব সময় নিট অ্যান্ড ক্লিন ছিলাম। আমরা কেউ এমনটা তাঁর কাছে আশা করিনি।

প্রশ্ন :

এত দিন আগের কথা হঠাৎ ফাঁস হলো কোথা থেকে। আপনার ফোনে কি রেকর্ডিংটা ছিল?

আমার মোবাইলে কখনো কোনো রেকর্ডিং অপশনই নেই। এই সিস্টেমটাই রাখিনি। কোথা থেকে এসেছে আমার কোনো আইডিয়া নেই। আমি কিন্তু বলিনি, ভাই আসেন, মজা করি, মাস্তি করি। আমি শুধু যেভাবে কাটিয়ে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন :

অভিযোগের তির তো আপনার দিকেও আসছে?

সাধারণ মানুষ তো আমার সঙ্গে আর মেশে না তাই বুঝবে না। ইন্ডাস্ট্রির ১০০ জন মানুষের মধ্যে ৯৯ জনই আমার ব্যাপারে সার্টিফিকেট দিতে পারবে, সবাই জানে আমি কী রকম। আমি কীভাবে কাজ করি। একটা ফোনালাপ, এই ফোনালাম ২-৩ বার শুনলে কিন্তু বোঝা যাবে আমি মন্ত্রীকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তিনি কী বলছেন, আর আমি কী বলছি, রেকর্ডিংয়ে তা স্পষ্ট। ওসব চিন্তা করলে আমার দিকে তির ছোড়ার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। আমি আমার জায়গা থেকে ক্লিয়ার ছিলাম।

প্রশ্ন :

আচ্ছা, তখন তো মাহিকে কী বলেছে শোনেননি কিন্তু আজ যখন রেকর্ডিং শুনলেন, সহকর্মীর প্রতি মন্ত্রীর এমন কথাবার্তায় কেমন লেগেছে...

আমি বিব্রত। আমার খুব খারাপ লাগছে। একজন সহকর্মীকে, নারীকে একজন মন্ত্রীর এভাবে বলাটা দুঃখজনক। এই ধরনের কথা হবে বুঝতে পারলে, আমি তো ফোনটাই দিতাম না। একজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনেক চাওয়া। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক কাজে তাঁদের দরকার হয়, কিন্তু এ ধরনের ভাষা তো আশা করি না।