সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনে কষ্ট থাকবেই

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে আজ সোমবার তিনটি প্রদর্শনী হবে নৃত্যনাট্য ‘অদম্য’–এর। এই নৃত্যনাট্যের ভাবনা, চিত্রনাট্য, কোরিওগ্রাফি এবং শিল্পনির্দেশনা করেছেন পূজা সেনগুপ্ত। এটি নিয়ে গতকাল কথা বললেন তিনি।

পূজা সেনগুপ্ত

প্রশ্ন :

একই দিনে নৃতনাট্য ‘অদম্য’ পরপর তিনটি প্রদর্শনী কেন?

সময় বদলেছে। এখন টি–টোয়েন্টি ম্যাচ হচ্ছে। তাহলে ২০ মিনিটের প্রোডাকশন কেন নয়। এটাই ছিল প্রথম ভাবনা। আমার কাছে মনে হলো, যেটা আমি প্রকাশ করতে চাই, যদি অল্প সময়ে বলে ফেলা যায় বা অল্প সময়ে পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা নির্মাণ করে ফেলা যায়, সেটাই তো ভালো। এখন দর্শক দীর্ঘ সময়ের কিছু পছন্দ করেন না। সেদিক থেকে আমরা সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছি। এক দিনে একাধিক শো হলে আমরা টিকিট বিক্রি করতে পারি বেশি, দর্শক পাচ্ছিও বেশি—বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারছি। এটা আমাদের পেশাগত প্র্যাকটিসের জন্যও পজিটিভ। আমরা আসলে আমাদের পেশাদারত্বের চর্চাটা কোন লেভেলে করছি, শো করার জন্য এনার্জি কতটা, সেটাই যে আমরা রপ্ত করতে পারছি—এসব দিয়ে আমরা তা বোঝাতে চেয়েছি। এসব মিলিয়েই আমাদের এক দিনে তিনটি শো।

বঙ্গবন্ধু চরিত্রে কোরিওগ্রাফিতে পূজা সেনগুপ্ত
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এবারই প্রথম?

এর আগে ‘অনামিকা সাগরকন্যা’ ও ‘হো চি মিন’–এর এক দিনে দুটি করে শো করেছি। ওই প্রোডাকশনগুলো বড় ছিল। এটার যেহেতু দৈর্ঘ্য ছোট, মূল প্রোডাকশন ১৫ মিনিটের, সব মিলিয়ে ২০ মিনিট। তাই মনে হলো তিনটি শো করাই যায়।

প্রশ্ন :

সময় কম নাহয় মানলাম কিন্তু প্রস্তুতি কেমন?

একটি প্রোডাকশনের জন্য আমরা যখন রিহার্সাল করি, টানা ছয়বার রান থ্রো করি। মহড়ার একটি শো থেকে আরেকটিতে যেতে ১০ সেকেন্ডের একটা কিউ দিই, এর মধ্যে সবাই তৈরি হয়ে যায়। এভাবেই আমাদের ট্রেনিং হয়। আমার দলের সদস্যরা ১০ সেকেন্ডে যেকোনো সেটআপ রেডি করে ফেলতে সক্ষম। একটা পারফরম্যান্স শেষে আরেকটা পারফরম্যান্স শুরু হতে আমরা সময় খুব একটা পাইও না। এবারে শোর আগে একটানা নয়বার মহড়া করেছি। আমাদের স্ট্যামিনা টেস্ট করেছি। মহড়াকক্ষে যদি নয়টা রান করা যায়, তাহলে তিনটা শো স্বাচ্ছন্দ্যে করা যায় বলে আমরা মনে করছি।

পূজা সেনগুপ্ত
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

এটা তো টিকিট শো। কেমন সাড়া পেয়েছেন?

প্রথম আর শেষ শোতে বেশি সাড়া পেয়েছি। যেহেতু ওয়ার্কিং ডে, সেটাও আমরা ভেবেছি। আমাদের ৬০ ভাগ টিকিট বিক্রি ও বুকিং হয়ে আছে। বাকিটা ভেন্যু থেকে আসবে মনে করছি।

প্রশ্ন :

টিকিট শোয়ের ক্ষেত্রে শুধু শতভাগ টিকিট বিক্রি দিয়ে কি প্রোডাকশন খরচ ওঠে আসে?

আমাদের এই প্রোডাকশনটা এখন রি–স্টেজ করছি। কোভিড–পরবর্তী সময়ে আমাদের যে রেপার্টরি, সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আগের মতো দর্শক সমাগমের জায়গায় যেতে হলে প্রতি মাসে আমরা নিয়মিত শো করব, যদি মিলনায়তন পাই। আমাদের শোগুলো অতীতে যখন করেছি, অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছি। এবার আমরা টিকিট শো করেছি, নিজেদের উদ্যোগে কতটা পারি, সেটাও দেখতে চেয়েছি। যেহেতু আমরা একটা ডান্স ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্ন দেখি। আমরা নিজেরা যদি নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারি, সেটাই শক্তভাবে দাঁড়ানো হবে। আমরা চেয়েছি, দর্শকই হোক আমাদের সবচেয়ে বড় স্পনসর।

পূজা সেনগুপ্ত

প্রশ্ন :

পৃষ্ঠপোষকতা কি সব সময় আন্তরিকভাবে পান?

কাজ যদি ভালো হয়, মানসম্মত হয়, তাহলে স্পনসর পেতে সমস্যা হয় না।

প্রশ্ন :

প্রোডাকশন যে মানসম্মত, সেটা তো মঞ্চায়নের পর জানা যায়।

আমার প্রথম প্রোডাকশন ওয়াটারনেস–এর পৃষ্ঠপোষকতা পেতে কষ্ট করতে হয়। তারপরও আমরা স্পনসর পেয়েছি। এরপরই আসলে আমাদের আসলে কখনো অসুবিধা হয়নি।

পূজা সেনগুপ্ত

প্রশ্ন :

সার্বিক চিত্রটা কেমন। আমরা নাচের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে হতাশার কথাও শোনা যায়?

ব্যক্তিগতভাবে আমি হতাশ হওয়ার মানুষ নই। আমি যেহেতু শিল্পীর জীবন পছন্দ করেছি, সৃষ্টিশীল কাজ করাটাই আমার কাজ। সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনে কষ্ট থাকবে। কষ্ট থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি হয়। কষ্ট থেকে নতুন কিছুর জন্ম হয়। আমরা যদি একটা মানবশিশুকেও দেখি, অনেক কষ্ট থেকে একটা নতুন প্রাণের জন্ম হচ্ছে। আমি যে নতুন একটা প্রোডাকশন বানাচ্ছি, এটাও তো একটা প্রাণ, শিল্পের প্রাণ। অবশ্যই সেখানে কষ্ট থাকবে, সংগ্রাম থাকবে, আনন্দ থাকবে—সেটা আসলে পথচলারই একটা অংশ। সেই কারণেই হয়তো কখনো আমি হতাশ হইনি।