প্রশ্ন :
কোথায় আপনি?
আমি বাসার বাইরে। হাঁটতে বের হয়েছি।
প্রশ্ন :
প্রতিদিন কি হাঁটেন?
সময় পেলে একটু বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে পার্কে গিয়ে হাঁটি। হাঁটতে ভালোই লাগে। আজকের (রোববার) আবহাওয়াটাও সুন্দর।
প্রশ্ন :
সাধারণত হাঁটেন কোথায়?
আমার বাসা তো বনানী। বনানী থেকে গুলশান পার্ক পর্যন্ত হেঁটে যাই। তারপর পার্কে কিছুক্ষণ হাঁটি। আবার হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে আসি।
প্রশ্ন :
হাঁটা কি শুধুই ভালো লাগা নাকি ফিটনেসের বিষয়ও আছে?
হাঁটলে শারীরিক ও মানসিক দুইভাবেই ভালো লাগে। যে রাস্তা দিয়ে আমি যাই, জায়গাটা আমার খুব পছন্দের। দুই পাশে গাছ, সবুজ। মাটিতে ফুল পড়ে থাকে। সব মিলিয়ে ভালো লাগে।
প্রশ্ন :
মাটিতে পড়ে থাকা ফুল কুড়ান নাকি?
শুধু কাঠগোলাপ আর শিউলি ফুল পেলে কুড়াই। শীতে শিউলি আর এমনিতে কাঠগোলাপ।
প্রশ্ন :
কোন ফুল আপনার বেশি পছন্দ?
সব ফুলই পছন্দ। তবে কাঠগোলাপের প্রতি আমার কী যেন একটা আছে। একটা মায়া–মায়া ব্যাপার আছে। এমনিতে গাছ থেকে আমি ফুল ছিঁড়ি না, কিন্তু কাঠগোলাপ পেলে চুরি করি।
প্রশ্ন :
হাঁটাহাঁটি করেন। জিমে যাওয়া হয় কি?
জিমে যাওয়া হয় না। আমার যেহেতু ক্ল্যাসিক্যাল নাচের ব্যাকগ্রাউন্ড, এটার একটা এক্সারসাইজ আছে, যা নিয়মিত করি। এতেই জিমের কাজ হয়ে যায়।
প্রশ্ন :
নাচের মানুষ অভিনয়ে ফোকাস হওয়ার কারণে নাচটা কি ছেড়ে দিলেন?
নাচের জন্য সময়ই পাই না আসলে। অভিনয়ের দিকে একটু বেশি কনসেনট্রেট করছি। নাচের প্র্যাকটিস ও-লেভেল এক্সামের আগপর্যন্ত করেছি। এরপর ব্যস্ততার করণে আর হয়ে ওঠেনি। এখন অভিনয়ের প্রতি নেশাটা বেশি মনে হয়।
প্রশ্ন :
নাচ কি ছোটবেলা থেকেই করতেন?
আড়াই বছর বয়সে নাচ শুরু। আম্মুর আগ্রহে আমাকে শুরুতে বাফায় (বুলবুল ললিতকলা একাডেমী) গানের ক্লাসে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু এক মাস পরে জানতে পারে, আমি গানের ক্লাসে না গিয়ে নাচের ক্লাসে যাই। তারপর আম্মু বলল, ‘দুইটাই করো।’ কিন্তু আমার হয়নি। তাই নাচটাই কনটিনিউ করেছি।
প্রশ্ন :
গান শেখা হয়নি। গান শুনতে তো ভালো লাগে নাকি?
গান শুনতে ভীষণ ভালো লাগে। হারমোনিয়াম বাজাতে পারি, তবলা বাজাতে পারতাম, এখন প্র্যাকটিস নাই। টুকটাক পারি।
প্রশ্ন :
কার গান বেশি শোনা হয়?
আমি সবার সব গানই শুনি। মুডের ওপর ডিফেন্ড করে। তবে বেশির ভাগ সময় ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার গান শোনা হয়। তাঁর কাভারগুলোও শোনা হয়। বাংলাদেশের মধ্যে অর্ণব, আমার বন্ধু আছে নিধিও, তাদের গান শুনি। ভারতে প্রতীক কুহাদ নামের একজন আছে, তাঁর গানও শোনা হয়।
প্রশ্ন :
এবার আসি শুক্লপক্ষ-এ। মুক্তির কয়েক দিন পার হয়েছে। পরিচিতদের মধ্যে যারাই শুক্লপক্ষ দেখেছে, আপনাকে কী বলেছে?
সবার কথার মধ্যে একটা মিল, ছবির শেষ দৃশ্যে আমার অভিনয়টা তাঁদের ভালো লাগছে। আলাদা করে যদি বলি, কেউ বলেছে ভালো লেগেছে, কেউ বলেছে ভালো লাগেনি। এটার একটা কারণ হচ্ছে, কিছু মানুষ হয়তো আমাকে সব সময় ন্যাচারালি এলোমেলো চুলে দেখতে অভ্যস্ত। শুক্লপক্ষতে দেখা যায়, লাবণী চরিত্রটি শুরুতে একটু পরিপাটি মেয়ে। ওটাতে অনেকে বলেছে, সুন্দর লেগেছে। বাট নায়িকা নায়িকা লাগছে। আবার কেউ বলছে, বৈচিত্র্য এসেছে। ভালোই হয়েছে।
প্রশ্ন :
ভালো কথা বললে তো ভালো লাগে। তো ভালো লাগেনি যে বলল, কেমন লেগেছে?
খারাপ কথা বললেও ভালো লাগে। আমি মনে করি, ওখান থেকেও সবার অপিনিয়ন নিতে পারি। আমার নিজের কাজ সম্পর্কে জানতে পারি। পরের কাজে ভুলগুলো থেকে নিজেকে শুধরে নিতে পারি।
প্রশ্ন :
প্রথম যখন শুক্লপক্ষ-তে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেন, কী ভেবে রাজি হয়েছিলেন?
প্রথমত, ভিকি জাহেদ ভাইয়ের থ্রিলার অনেক ভালো, সেটা আমি জানতাম। কিন্তু আমিই যে করব, পুরোপুরি শিওর ছিলাম না। তিনি আমাকে কনভিন্স করেন। আমাকে বলেছিলেন, ‘আপু, আমি একটা ভিন্নধর্মী কাজ করতে চাচ্ছি।’ যদিও আমার স্ক্রিপ্টটা পড়ে একটু ভালো লেগেছিল, তারপরও করব কি করব না, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। পরিচালক বলেছিলেন, ‘আপু, করা না করাটা আপনার ওপর। করতে না চাইলেও সমস্যা নাই। তবে করেও দেখতে পারেন। কারণ, গল্পটা আমার কাজের জন্য ইম্পর্ট্যান্ট। একজন শিল্পী হিসেবে আপনি যদি করে দেন, ভালো হয়। কাজটা ভালো হবে।’ ভাবলাম, করি। এমন না যে, আমার সব কাজই বেস্ট হতে হবে। আমার কাজের কারণে যদি আরেকজনের কাজ আগায়, তাহলে কেন করব না।
প্রশ্ন :
তার মানে আপনি তো বিশ্বাস করেন, জীবনে যা–ই করবেন, সব ভালো করা সম্ভব নয়?
এটা তো অবশ্যই। আরেকটা বিষয় বিশ্বাস করি, ইন্ডাস্ট্রির সবাই যদি সবার হাত ধরে আগাই, একজন আরেকজনকে হেল্প করি, তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটাই আগাবে।
প্রশ্ন :
বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরুর পর থেকেই এই চিন্তা ছিল আপনার মধ্যে?
প্রথমে ছিল না। করোনায় এই উপলব্ধি হয়েছে। বলতে পারেন, ধাক্কা খাওয়ার পর এই চিন্তা জন্মেছে। কোভিড আমাকে নতুন করে ভাবিয়েছে। আমার প্রথম ছবি ‘ন ডরাই’ মুক্তির পরপরই প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ! প্রথম সিনেমার যেসব সিনেমা হওয়ার কথা ছিল, সব বন্ধ হয়ে গেল। স্বাভাবিকভাবে আমার মতো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সবার মন খারাপ হতে লাগল। তখনই আস্তে আস্তে নিজেকে বদলে ফেললাম। একবার কাজ করার পর যখন অভ্যাস হয়ে যায়, এরপর যখন সামনে কাজ থাকে না, তখন অলমোস্ট একটা মানুষ ডিপ্রেস বা ডেসফারেট—যেটাই বলি না কেন, হয়ে যায়। আমারও তেমন কিছু হয়েছে। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আবার ওঠেও দাঁড়াই। ভাবতে থাকি, না, আমি পারব, আমরা পারব। এ রকম কিছু মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছি। আমার মনে হয়, এখন ভালো সময় আসছে। সামনেও ভালো কিছু হবে। এই যে, এখন দেখছি ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ ছবি দুটিকে সবাই সাপোর্ট করছে। আমার মনে হয়, সবাই যদি একত্রে চেষ্টা করে, তাহলে কেউ হারে না, ইন্ডাস্ট্রি হারে না। এখন যদি একটি–দুটি কাজ হাউসফুল হয়, তাহলে দর্শকের ছবি দেখার অভ্যাস তৈরি হবে। আমাদের অন্য কারও ছবিও যখন মুক্তি পাবে, তখনো দেখবে সবাই।
প্রশ্ন :
আপনি যখন ডিপ্রেশনে থাকেন, এটা কাটিয়ে ওঠেন কীভাবে?
একেক সময় একেকভাবে। মাঝেমধ্যে বালিশচাপা দিয়ে ঘুমিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে পার্কে দৌড়াতে যাই। মুভি দেখি। খুব বেশি হতাশ লাগলে ঘুরতে চলে যাই কক্সবাজার বা বিদেশে কোথাও।
প্রশ্ন :
ঘোরাঘুরির মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের জায়গা কোনটি?
কমফরট্যাবল যদি বলি একা একা ঘোরার মধ্যে, তাহলে আমার থাইল্যান্ড ভালো লাগে। কারণ, ওখানে আমি সবকিছু চিনি ভালো করে।
প্রশ্ন :
আর দলবদ্ধভাবে গেলে?
আমি একবারই শুধু দলবদ্ধভাবে ঘুরেছি, সেটা নেপালে। সেখানেও ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন :
সামনে ছবির কাজের খবর বলুন।
‘অন্তর্জাল’তো আছে। আরও কয়েকটা আছে, বলা মানা। (হাসি)
প্রশ্ন :
মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা নিয়ে আপনার ভাবনাচিন্তা কী?
মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় আমি অভিনয় করতে চাই, কিন্তু আমাকে কেউ নেয় না। এটা একদম সত্যি কথা। ন ডরাই দেখে সবাই হয়তো মনে করেছে, আমি মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিনয় করব না। কিন্তু আমি সব ধরনের কাজই করতে চাই।