ঈদের মতো বড় উৎসবে মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিষেক হলো। আপনার মতে অভিষেকটা কতটা ঠিকঠাক হলো?
সাবিলা নূর : আমার মতে, মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিষেক দুর্দান্ত এবং সুন্দর হয়েছে। কারণ, ‘তাণ্ডব’ ছবিটা দুর্দান্ত। দর্শক খুব সুন্দরভাবে ছবিটি গ্রহণ করেছেন।
প্রথম আলো :
মূলধারার এই বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব কখন এবং কীভাবে আপনার কাছে এসেছিল?
সাবিলা নূর : ঈদুল ফিতরের আগে ‘তাণ্ডব’ নিয়ে একটু একটু করে কথা হয়েছিল। এরপর আমি পরিচালক রায়হান রাফীর সঙ্গে বসেছি। গল্প শুনেছি। যেহেতু আমি আগে থেকে জানতাম, ‘তাণ্ডব’ সিনেমাটা হচ্ছে এবং এখানে আমাদের মেগাস্টার শাকিব খান আছেন, তাই গল্প শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি রাজি হয়ে যাই। আমার কাছে মনে হয়েছে, এত সুন্দর সুযোগটা আসলে হারানো মোটেও ঠিক হবে না। কারণ, এখানে মেগাস্টার শাকিব খান আছেন, রায়হান রাফীর সঙ্গে সিনেমা। সুন্দর দুটি গান আছে। তা ছাড়া যে প্যাকেজিং আলফা আই, এসভিএফ এবং চরকি—আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার জন্য খুবই সুন্দর একটা সুযোগ হবে।
এর আগে কতটি সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন?
সাবিলা নূর : এর আগে সিনেমায় অভিনয়ের ব্যাপারে কথা হয়েছে। সিনেমার জন্য আমার কাছে যেসব প্রস্তাব এসেছে, সব মিলিয়ে তখন নিজেকে প্রস্তুতও করিনি। মনে হয়েছে, আরেকটু সময় নিলে ভালো হবে। শিডিউল ও অন্যান্য বিষয় মিলে এবার করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাই ‘তাণ্ডব’ করা।
প্রথম আলো :
এই সিনেমার গল্প, চরিত্র ও কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সাবিলা নূর : এই সিনেমা আমার অভিনয়জীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চরিত্রের ব্যাপ্তি কম, সে ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল—চরিত্রটাকে কীভাবে আলাদা করা যায়। এত এত গুণী অভিনয়শিল্পী আছেন ‘তাণ্ডব’–এ। শাকিব খান তো আছেনই, সেই সঙ্গে জয়া আহসান, আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, সালাউদ্দিন লাভলু, ফজলুর রহমান বাবু, রোজী সিদ্দিকীদের মতো এত এত গুণী অভিনয়শিল্পীর মাঝখান থেকে নিশাত চরিত্রকে কীভাবে মনে রাখার মতো করা যায়—সেটার একটা চাপ তো ছিলই। চাপ বলতে, কাজের চাপ। সবচেয়ে বড় নার্ভাসনেস ছিল শাকিব খানের সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করব, অভিনয় করব, নাচব—দর্শক কতটুকু গ্রহণ করবেন। তাঁর একটা বিশাল সাফল্যের ইতিহাস আছে, বিগত যে কয়টা সিনেমা তিনি করেছেন, সব কটি দুর্দান্ত ব্যবসাসফল হয়েছে, দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন; সেটারও একটা মানসিক চাপ ছিল। কিন্তু প্রথম দিনের শুটিংয়ে আমার কাছে খুব সহজ মনে হয়েছে তাঁকে। সহশিল্পী হিসেবে শাকিব খান অত্যন্ত সহযোগিতাপরায়ণ ও আন্তরিক। একটিবারের জন্য তিনি উপলব্ধি করতে দেননি আমি তাঁর সঙ্গে প্রথমবার পর্দায় কাজ করছি—আমার জন্য পুরো অভিজ্ঞতা সুন্দর। টিমের যাঁরাই ছিলেন, সবাই সুন্দরভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। টেকিনিক্যাল টিমের যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে অবশ্য আগেও কাজ হয়েছে, যদিও রায়হান রাফীর সঙ্গে প্রথম কাজ ছিল।
বড় পর্দার কাজ নিয়ে আগে ভাবনাচিন্তা কেমন ছিল, এখন কীভাবে দেখেন?
সাবিলা নূর : আগে কিছুটা টেনশনের ছিল। বড় পর্দা আমার কাছে বড় একটা দায়িত্ব মনে হয়। তবে আমার কাছে ‘তাণ্ডব’–এর পরও সেই মানসিক চাপটা কাজ করবে। ‘তাণ্ডব’ দুর্দান্ত একটা ছবি। দর্শক ভালোবেসেছেন ছবিটি। পরবর্তী কাজে আরও টেনশন থাকবে যে ‘তাণ্ডব’–এর সাফল্যকে কতটা ছুঁতে পারছি এবং এটার সাফল্যকে ছাড়িয়ে যেতে পারছি কি না—পরবর্তী কাজে এই টেনশন কাজ করবে।
প্রথম আলো :
সিনেমায় অভিষেকের ব্যাপারটি আপনার সহকর্মীরা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা কীভাবে দেখেছেন?
সাবিলা নূর : আমার শুভাকাঙ্ক্ষী যাঁরা আছেন, তাঁরা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। সেই গান প্রকাশের পর থেকে তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, যাতে ভালো কাজ করতে পারি। সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
প্রথম আলো :
‘তাণ্ডব’ মুক্তির পর জীবনে কী পরিবর্তন এসেছে?
সাবিলা নূর : এবার সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলতে ব্যক্তিগত কোনো পরিকল্পনা না রেখে হলে হলে গিয়ে কাটল। নিজেকে যত বেশি সময় দিতে পারতাম, ততটা দিতে পারিনি।
আগামী দিনে সিনেমায় অভিনয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা হয়েছে বা এ নিয়ে নিজস্ব ভাবনাচিন্তা কী?
সাবিলা নূর : এখনো সেভাবে কথা হয়নি। তবে এ নিয়ে আমার আলাদা চিন্তা আছে। ‘তাণ্ডব’ একটা মানদণ্ড তৈরি করেছে। আমার অবশ্যই ‘তাণ্ডব’–এর মতো বা ‘তাণ্ডব’–এর চেয়ে ভালো কিছু যদি করতে পারি, তাহলে ভালো হয়। ভিন্ন রকম কোনো কিছু যেন করতে পারি।
প্রথম আলো :
সিনেমায় অভিনয় করলেন, ওটিটি ও টেলিভিশনেও কি সমানতালে কাজ করবেন?
সাবিলা নূর : আমার কাছে গল্প ও চরিত্র প্রাধান্য পাবে। এখন যেহেতু একধরনের দায়িত্ব চলে আসছে, তাই পরের সিনেমা এমন কিছু করতে চাই, যা দর্শকদের হতাশ করবে না। আমি আসলে মাধ্যমের কথা সেভাবে ভাবছি না। তবে ওটিটিতে যেহেতু অনেক ভালো কাজ হচ্ছে, গল্পের ভিন্নতায় কাজ হচ্ছে—সেখানে তো একটা ইচ্ছে আছেই। আর টেলিভিশনের কারণে আজ আমি এখানেই। টেলিভিশন নাটকের কারণে দর্শকের ভালোবাসা পাচ্ছি, পেয়ে আসছি—তাই টেলিভিশনকে ভুলে গেলে তো চলবে না। আমি কিন্তু দুই বছর ধরে টেলিভিশনে কাজ কম করছি। তাই এখনো বাছাই করে, ভালো লাগার মতো কিছু চরিত্র করার ইচ্ছাটাই থাকবে।
প্রথম আলো :
ফারিণেরও এবার ঈদে বাণিজ্যিক সিনেমায় অভিষেক হয়েছে। আপনার কি তা দেখা হয়েছে? যদি হয়, তাঁকে কেমন লেগেছে বড় পর্দায়?
সাবিলা নূর : এখনো দেখা হয়নি। ঈদে মুক্তি পাওয়া সব সিনেমাই দেখার ইচ্ছা আছে। প্রতিবারই ঈদের সময়টায় সিনেমা হলে গিয়ে ঈদের সিনেমা দেখি—তা বন্ধু হোক কিংবা পরিবার। এবার নিজের সিনেমা...আমি দেখছি, সবাই দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। শুনছি, ফারিণের অভিনয় নিয়ে কথা বলছে। সাদিয়া আয়মানেরও প্রশংসা হচ্ছে। প্রতিটি কাজই দর্শক দেখেছেন। আমি মনে করি, সবার জন্য এটা ভালো একটা বার্তা। আগামী দিনে আমরা ভিন্ন ভিন্ন জনরার ভালো ভালো কাজ করতে পারব। কারণ, এবার নানা ধরনের ছবি মুক্তি পেয়েছে। অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমাদের জন্য দারুণ একটা ইঙ্গিত।
আপনার অভিনীত সিনেমা কি স্বামী ও পরিবারের অন্যরা দেখেছেন?
সাবিলা নূর : প্রথম দিনই দেখেছে। যেদিন আমি দেখেছি, সেদিন সে–ও দর্শকের সঙ্গে দেখেছে। ও তো ভীষণ উপভোগ করেছে। বলেছে, শাকিব খানের অভিনয় তাঁকে মুগ্ধ করেছে। আমার স্বামী, মা–বাবা, বোন, বড় ভাই—সবাই আমাকে ভালোবাসা দেয়। কাজকে সমর্থন করে আসছে। নানা বিষয়ে সমালোচনাও করে। বলে যে এটা এভাবে না করে ওভাবে করলেও ভালো হতো। ‘তাণ্ডব’–এর ক্ষেত্রে ভালো লাগার পাশাপাশি কিছু পর্যবেক্ষণও দিয়েছে, যা আমাকে মোটিভেশন দেয়।
প্রথম আলো :
ছবি মুক্তির পর শাকিব খানের সঙ্গে কথা হয়েছে?
সাবিলা নূর : ঈদের দিন কথা হয়েছে। আমি তাঁকে বলেছি, পর্দায় যখন আপনার অভিনয় দেখেছি, সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। ভয়েজ মডুলেশন থেকে শুরু করে, দুই ধরনের চরিত্রের মধ্যে পার্থক্য আনা, নাচ, অ্যাকশন যাই করেছেন—তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। যতবারই পর্দায় শাকিব খান এসেছেন, চোখ সরছিল না। আমি তাঁকে এটা বলেছি। তিনি বলেছেন, তাঁর এ কাজটা পুরো টিমওয়ার্কের জন্য হয়েছে। আমাকে ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।