‘অভিনয় ছাড়ছি না, কখনোই ছাড়ব না’
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বায়োস্কোপে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ মাকাল। অনিমেষ আইচ পরিচালিত পাঁচ পর্বের এই ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন জিতু আহসান। গতকাল সোমবার ছিল এই অভিনেতার জন্মদিন।
প্রশ্ন :
জন্মদিন কেমন কাটল?
দিনটি আমার অভিনয়জগৎ ও ছেলেবেলার বন্ধুরা খুব ভালোভাবে মনে রাখে। ফেসবুকে তা আমি টের পেয়েছি। তাদের সবার ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। তা ছাড়া আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার ছেলে ও মেয়ের তাদের বাবার জন্মদিন নিয়ে উৎসাহ বেশি থাকে। আমার মেয়ে বিশেষ কেক বানিয়েছিল, বিকেলে তা কেটেছি। সন্ধ্যার পর পরিবারের সবাই একসঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম।
প্রশ্ন :
‘মাকাল’-এ আপনার চরিত্রটি কেমন?
এখানে আমার চরিত্র একজন হিন্দু পুরোহিতের। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। থাকেন একটি মন্দিরে। এই চরিত্রের মধ্যে একটা খেলা আছে, রহস্য আছে। গল্প শুনে নয়, চরিত্র শুনেই কাজটি করতে রাজি হয়েছিলাম। চরিত্রটি শোনার পর মনে হয়েছে, এটি করা যায়। কারণ, এমন চরিত্রে আগে অভিনয় করিনি। তা ছাড়া ভাবলাম, দীর্ঘ অভিনয়জীবনে নানা ধরনের চরিত্র ঝুলিতে থাকুক।
প্রশ্ন :
রহস্যটা কেমন?
পুরোহিত সাধুবেশে থাকলেও আড়ালে একজন ভয়ংকর খুনি। পুলিশ তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। মজার ব্যাপার, পুরো সিরিজে ওই পুরোহিত বাংলায় কথা বলেন না। হিন্দি, মাঝেমধ্যে টুকটাক ইংরেজিতে কথা বলেন।
প্রশ্ন :
তাহলে তো হিন্দি ভাষা আয়ত্ত করতে হয়েছে।
তা তো হয়েছে। আমি আগে থেকেই হিন্দি টুকটাক পারি। তবে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। কারণ, আমার ভাষা তো বাংলা।
প্রশ্ন :
২০১৭ বা ২০১৮ সালের পর আর আপনাকে নিয়মিত অভিনয়ে দেখা যায় না। কেন?
আগে যেসব পরিচালকের সঙ্গে নিয়মিত কাজ হয়েছে, তাঁরা এখন আর নিয়মিত কাজ করেন না। আর এখন যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে আমার খুব একটা পরিচয় নেই। তাঁদের কাছে গিয়ে কাজের বিষয়ে আলাপ–আলোচনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া এখন বয়স হয়েছে, রাত তিন-চারটা পর্যন্ত শুটিং করাও সম্ভব নয়। সবকিছু মিলিয়ে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে না। আবার অনেক সময় চিত্রনাট্য আসে, পড়ার পর দেখি, গল্প আছে কিন্তু রিপিট চরিত্র, মন টানে না। তবে কাজের শুরু থেকেই কিন্তু আমি বেছে বেছে কাজ করে এসেছি। গণহারে যে কাজ করেছি, এমনটা নয়।
প্রশ্ন :
আপনার সমসাময়িক লিটু আনাম, জয় এখন নিয়মিত অভিনয় করেন না। আবার শ্রাবন্তী, রিচিরাও অনেক দিন পর্দায় নেই। তাঁদের পথে হাঁটছেন কি?
ব্যাপারটা এমন নয়। আমি তো আগেই বলেছি, সেই শুরু থেকেই আমার কাজ ছিল সিলেক্টিভ। মানে মাসের ৩০ দিন আমি কাজ করিনি। শুরু থেকেই আমি অনেকটা শখের বসে কাজ করে এসেছি। এখনো সে ঝোঁকই আছে। একসময় শ্রাবন্তী, রিচিরা ঈদের সময় ২০–৩০টা করে নাটকে অভিনয় করত। আমি কিন্তু তখনো এত কাজ করিনি। তবে অভিনয় ছাড়ছি না, কখনোই ছাড়ব না।
প্রশ্ন :
শিশুশিল্পী হিসেবে ১৯৮৫ সালে ‘লাল বেলুন’, আর বড় হওয়ার পর ২০১৭ ‘গহীন বালুচর’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এরপর আর সিনেমা করেননি। কেন?
কেন করা হয়নি, এটা বলা মুশকিল। আমি বলব, হয়তো ব্যাটে–বলে মেলেনি। কারণ, আমি আগেই বলেছি, আমি একটু খুঁতখুঁতে। সম্ভবত ২০০৫ সালের ঘটনা। তখন এনটিভিতে আমার শেওলা ও ঝুট ঝামেলা নামে দুটি ধারাবাহিক প্রচারিত হচ্ছিল। ওই সময় দুটি বাণিজ্যিক ছবির কাজের প্রস্তাব পাই। গল্প শোনাতে আমার বাসায়ও এসেছিলেন গল্পকার। কিন্তু পরে আর করা হয়নি। আমার কথা হচ্ছে সিনেমা, নাটক—যা–ই করি না কেন, পরিবেশ–পরিস্থিতি বুঝেই করি। হয়তো সিনেমার বিষয়ে আমার জন্য এমন পরিবেশ এই সময়ের মধ্যে হয়নি, হচ্ছে না।
প্রশ্ন :
অনেকে এখন ওটিটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এখানে কাজের আগ্রহ কেমন আপনার?
কাজ করব না, এমন তো না। এখানে কাজের পরিবেশ ভালো। আমার সমসাময়িক ইন্তেখাব দিনার, কয়েক বছর আগেও টেলিভিশনে ওভাবে তাঁর কাজের ব্যস্ততা ছিল না। এখন তাঁকে নিয়ে দারুণ আলোচনা চলছে। ওটিটিতে তাঁকে ঘিরে পরিচালকের আগ্রহ বেড়েছে। দেশে ওটিটির যাত্রা শুরুর দিকে কয়েকটি কাজের প্রস্তাব ছিল কিন্তু পছন্দ হয়নি। এখন ওটিটির জন্য ভালো গল্প আসছে, ভালো চরিত্র আসছে, পরিচালক পর্দায় ভালো করে গল্প বলছেন। এখন এই মাধ্যমে কাজ করা হবে।
প্রশ্ন :
আপনার সহশিল্পীদের অনেকেই পরিচালনা করেন। আপনার ইচ্ছা আছে?
না, পরিচালনা করার ইচ্ছা নেই। শুরু থেকে অভিনয়টাই করে আসছি। পরিচালনার বিষয়টিতে একটা বাণিজ্যিক ব্যাপার আছে। এ জন্য চ্যানেলে চ্যানেলে দৌড়াদৌড়ির ব্যাপার আছে। এটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তবে যদি কখনো মনে হয়, তাহলে প্রযোজনার কাজটি করা যেতে পারে। ইচ্ছা আছে।
প্রশ্ন :
অভিনয়ের বাইরে বাকি সময় কীভাবে কাটে?
একটা ছোট্ট ব্যবসা আছে আমার। তা ছাড়া আমি তো বাবার একমাত্র ছেলে। বাবা মারা যাওয়ার পর পৈতৃক সম্পত্তি দেখভাল করতে হয়। বলা যায়, এসবে চাকরির মতোই সময় দিতে হয় আমাকে।