আবারও আড়ালে চলে যাচ্ছেন?
কুসুম সিকদার : কোথায়, আড়ালে যাচ্ছি! না তো, এটা আপনার কেন মনে হলো?
প্রথম আলো :
বলেছিলেন, আড়ালে গেলে সহজে কারও ফোন ধরেন না। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর ফোন ধরলেন...
কুসুম সিকদার : ও আচ্ছা (হাসি)। না না, আমি আড়ালে যাইনি। লেখালেখির মধ্যে ব্যস্ত ছিলাম। ফোন দূরে ছিল। যে কারণে বুঝতে পারিনি। আপাতত আর আড়ালে যেতে চাই না। সামনে বেশ ব্যস্ততা। আড়াল ভেঙে সামনেই আছি (হাসি)।
মাঝেমধ্যে কেন আড়ালে যান?
কুসুম সিকদার : একাকিত্বের কারণে মাঝেমধ্যে এমনটা বোধ করি। নিভৃতচারী হয়ে যেতে ইচ্ছা করে। যে কারণে আড়ালে গেলে আড়ালেই থাকার চেষ্টা করি। সবকিছু থেকে দূরে থাকি। সাধারণ একজন কুসুম হয়ে থাকার চেষ্টা। নিজের ভেতর নিজেকে খোঁজার চেষ্টা।
প্রথম আলো :
প্রকাশ্যেও আপনাকে খুব একটা দেখা যায় না...
কুসুম সিকদার : আমি কিন্তু বলেছি, কখনো কখনো আড়ালে থাকতে ইচ্ছা করে। এর মানে এই নয়, আমি প্রকাশ্যে আসি না। নানা আয়োজনে, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বের হতে হয়। তখন দর্শকদের ভালোবাসা বুঝতে পারি। এটাই আমার কাছে বড় আশীর্বাদ। বাইরে বের হলেই দর্শক চিনতে পারে, তাদের সত্যিকারের ভালোবাসা পাই। এটাই তো কাজ করে যাওয়া, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
প্রথম আলো :
ভক্তদের সত্যিকারের ভালোবাসা কীভাবে বোঝেন?
কুসুম সিকদার : আমার কাজ সবাই দেখে বা পছন্দ করে, তা কিন্তু নয়। তবে আমার কাজের আলাদা একটি দর্শকশ্রেণি রয়েছে। যারা আমার কাজ নিয়ে কথা বলে। তাদের অনেকেই মন থেকে আমাকে ভালোবাসে। কেউ মন থেকে ভালোবাসলে বোঝা যায়। তাদের ভালোবাসা বুঝতে পারি।
হলের পর দর্শক এখন ওটিটিতেও ‘শরতের জবা’ দেখছেন।
কুসুম সিকদার : সিনেমাটি আইস্ক্রিনে মুক্তির পরই পাইরেসির শিকার হলো। এটা নাকি দেশ–বিদেশের বেশ কিছু সাইটে এখন দেখা যায়। যুক্তরাজ্য, নিউইয়র্কের কিছু বাংলা টেলিভিশনে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়। কিছু সার্ভার থেকে সিনেমাটি সরাসরি দেখা যায়। অনেকেই জানিয়েছেন, সেসব সার্ভারে সিনেমাটি নাকি ট্রেন্ডিংয়ে ভারত–বাংলাদেশের সিনেমার মধ্যে ২ নম্বরে ছিল। এটা ভেবে একটু ভালো লাগে।
প্রথম আলো :
পাইরেসিও তাহলে মন ভালো করে!
কুসুম সিকদার : প্রযোজক হিসেবে এটা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। নেতিবাচক একটা ধারণা তৈরি করে দিয়েছে। আমার কষ্ট দেখার তো কেউ নেই। তখন নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছি, ভালো কাজ হলে পাইরেসি হবেই। একই সঙ্গে শিল্পী হিসেবে চাওয়া ছিল, সিনেমাটি সবাই দেখুক। দর্শকদের কাছে যাচ্ছে, এটাই সুখবর।
প্রথমবার প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে অভিজ্ঞতা কেমন?
কুসুম সিকদার : প্রথমত, প্রযোজক হিসেবে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। লগ্নির পুরোটা ওঠেনি। এখনো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাকা ওঠা বাকি। এর মধ্যেই ওটিটিতে মুক্তির পর সিনেমাটি পাইরেসি হলো। ঘটনাটা মন খারাপ করে দিল। একা সিনেমা মুক্তি দেওয়ার কাজটাও প্রযোজক হিসেবে অনেক কঠিন ছিল। দ্বিতীয়ত, প্রথমবার সিনেমা পরিচালক হিসেবে আমার অর্জন অনেক। আমি যদি পরিচালনা শিখতে দেশের বাইরে যেতাম, তাহলে এক–দেড় কোটি টাকা লাগত। হাতে–কলমে কিন্তু নির্মাণ শিখতে পারতাম না। বড় জোর একটি সার্টিফিকেট পেতাম। সেখানে আমি সফলভাবে পরিচালক হিসেবে হাতে–কলমে নির্মাণ শিখেছি।
প্রথম আলো :
তাহলে পরের সিনেমায় আর কোনো ভুল করতে চান না?
কুসুম সিকদার : সর্বশেষ আট বছর আগে ‘শঙ্খচিল’ সিনেমায় কাজ করেছিলাম। তারপর প্রথম সিনেমা নির্মাণে এসে বুঝতে পারলাম, সিনেমায় ব্যাপক একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। সেখানে প্রথম সিনেমার প্রযোজক–পরিচালক হিসেবে অনেক কিছু জানা–বোঝার চেষ্টা করেছি। কিছু জায়গায় ভুল করেছি। সেগুলো থেকেই শিক্ষা নিয়ে পরের সিনেমায় অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে চাই।
প্রথম আলো :
পরবর্তী সিনেমা নিয়ে কী ভাবছেন?
কুসুম সিকদার : আমি তো দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। পরিচালক হিসেবে দ্বিতীয় সিনেমার চিত্রনাট্য লেখা শেষ। নাম এখনো চূড়ান্ত করিনি। পরিস্থিতি বুঝেই সিনেমার কাজ এগিয়ে নিতে চাই। এখানেও আমি প্রযোজক হিসেবে থাকব। একই সঙ্গে যাঁরা শিল্পকে ভালোবাসেন, তাঁদের মধ্য থেকে সহপ্রযোজক কাউকে নেব। শিল্পের সঙ্গে কারও ভালোবাসা, প্রেম না থাকলে কাজে ভালো বনিবনা হয় না।
প্রায়ই দেখা যায় নতুন ছবি পোস্ট করেন। এ সময় অনেকে ছবি পোস্ট করে আলোচনায় থাকতে চান...
কুসুম সিকদার : আলোচনায় আসার জন্য ছবি তুলি না। ছবি তুলতে ভালো লাগে। ঘুরতে গেলে বা কোথাও গেলে চট করে ছবি তোলা হয়। আমার ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার আছে। যখন আড়ালে থাকার চেষ্টা করেছি, অভিনয়ে একটু বিরতি ছিল, তখনো কিন্তু ছবি পোস্ট করেছি। আসলে দেশের প্রতিটা ঋতুর আলাদা একটি সৌন্দর্য আছে। শরৎ আমার ছবি তোলার জন্য পছন্দের সময়। যে কারণে ছবি তোলা হয়, সেগুলো পোস্ট করি। ভক্তদের কাছ থেকে সুন্দর সুন্দর প্রতিক্রিয়া পাই, এটাও ছবি পোস্ট করার অন্যতম কারণ।