বিয়ের দৃশ্যের আগে থেকেই আমি কাঁদছিলাম

টাপুর এই মুহূর্তে রয়েছেন ভারতের দার্জিলিং। সেখানে পড়াশোনা করলেও দুই সপ্তাহ ধরে মন পড়ে আছে দেশের সিনেমা হলে। এই টাপুর দেশান্তর সিনেমার নায়িকা। তাঁর প্রথম সিনেমা ১১ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে। অভিনয় ক্যারিয়ার ও নানা অভিজ্ঞতার কথা ভাগাভাগি করলেন তিনি

টাপুর দেশান্তর সিনেমার নায়িকা

প্রশ্ন :

সিনেমার প্রচারে তোমাকে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমি তো দেশে নেই। ২০১৬ সাল থেকে দার্জিলিংয়ে ড. গ্রাহামস্ হোমস্ স্কুলে পড়ছি। এবার ক্লাস টেনে। সিনেমা মুক্তির আগে থেকেই এখানে রয়েছি। ডিসেম্বর ছাড়া ছুটি নেই। এ জন্যই দেশে থাকতে পারিনি। ইউনিটের সবাই এটা জানেন।

প্রশ্ন :

প্রথম সিনেমা। দর্শকদের সঙ্গে দেখতে ইচ্ছা করছে না?

দার্জিলিং নয়, দুই সপ্তাহ ধরে আমার মন পড়ে আছে সিনেমা হলে। খুব মিস করছি। অনেক কষ্ট, আফসোস হচ্ছে। তবে সবার কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছি। যাঁরা প্রশংসা করেছেন, তাঁরা ভাবতেই পারেননি আমি এত ভালো করেছি। আম্মা বললেন, অনেকেই নাকি বলেছেন, বয়সের চেয়ে আমাকে অনেক বড় ও পরিণত মনে হয়েছে।

প্রশ্ন :

সরাসরি কেউ প্রশংসা করেননি?

আমার তো আম্মা-আব্বু ছাড়া তেমন কারও সঙ্গে কথা বলা হয় না। এখানে থেকে কথা বলার খুব একটা সময় পাই না। শুক্র-শনিবার অল্প কিছু সময় পাই। তখন আমার সিনেমা দেখে কে কী বলেছেন, সেগুলো আম্মা বলেন। এভাবেই জেনেছি, গল্প অনুযায়ী আমার অভিনয়, চরিত্র, সংলাপ বলা, বাচনভঙ্গি—সবাই খুবই পছন্দ করেছেন। খুব খুশি লেগেছে।

দেশান্তর সিনেমার দুই শিল্পী টাপুর ও মৌসুমী

প্রশ্ন :

ধরাবাঁধা সময়ের মধ্যে শুটিংয়ে সময় দিয়েছ কীভাবে?

সিনেমার শুটিং হয় করোনার মধ্যে। তখন দেশে ছিলাম। পরিচালক (আশুতোষ) সুজন আঙ্কেল আগেই আমাকে ফেসবুকে দেখেছিলেন। পরে একদিন অফিসে যেতে বলেন। জানান, আমাকে অভিনয় করতে হবে। বাবা-মাকে বললাম, করতে চাই। তাঁরা রাজি হলেন। এরপর রিহার্সাল শুরু করি। আগে থেকেই নাটকে অভিনয় করতাম, সে জন্য তেমন সমস্যা হয়নি। দুই মাস শুধু চরিত্রের মধ্যে ঢুকে থাকার চেষ্টা করেছি। অভিনয় কঠিন, এটা মনে হয়নি। করোনাই আমাকে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।

টাপুর

প্রশ্ন :

‘দেশান্তর’-এর একটি দৃশ্যে তোমাকে বিয়ে করতে দেখা যায়। দৃশ্যটির সেই কান্না নাকি সত্যিকারের ছিল?


হ্যাঁ, বিয়ের দৃশ্যের আগে থেকেই কাঁদছিলাম। দৃশ্যটি পরিচালক আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এ জন্য কিছু খাওয়া নিষেধ ছিল। রুম থেকে বের হইনি। বিয়ের শাড়ি পরে রুমে ছিলাম। প্রচণ্ড গরমে ঘামছিলাম। মানসিকভাবে প্রস্তুতি ছিল। তখন পুরো পরিবেশের কারণে আমি কাঁদছিলাম। ওভাবেই শুটিং শেষ করলে সবাই বলল, খুবই ভালো করেছি। তখন মনে হয়েছিল, মামা-মায়ের কাছ থেকে অভিনয় শেখাটা সফল হয়েছে।

প্রশ্ন :

একটি দৃশ্যে গাছ থেকে লাফ দিতে হয়, আগে থেকে পারতেন?

আগে আমি কখনোই গাছ থেকে লাফ দিতে পারতাম না। শুটিংয়ের সময় গাছ থেকে লাফ দেওয়া শিখেছি। ভয় লাগছিল কিন্তু পেরেছি। এ জন্য সবাই সহায়তা করেছেন।

প্রশ্ন :

আপনার নায়ক ছিল ইয়াশ রোহান, তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে কেমন লেগেছে?

ইয়াশ ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না। শুটিংয়ের মাধ্যমেই পরিচয়। তিনি অনেক সিনিয়র ও ভালো অভিনেতা। অনেক সময় তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিতেন, কীভাবে অভিনয় করতে হবে দেখিয়ে দিতেন, আমাদের বোঝাপড়া ভালো ছিল। পর্দায় আমাদের দেখেও সবাই পছন্দ করেছেন।

প্রশ্ন :

তোমার অনুপ্রেরণা কারা?

আমার মা অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা, বাবা পরিচালক সতীর্থ রহমান। তাঁরাই আমার আদর্শ। মাকে দেখে শৈশব থেকেই আমার অভিনয় ভালো লাগে। তখন আমার মনে হতো, ইশ্, আমি যদি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারতাম। একদিন বাবাকে বললাম। পরে বাবার হাত ধরেই অভিষেক হলো। এখন অভিনয়ের সঙ্গে থাকতে চাই।

প্রশ্ন :

ভবিষ্যতে কী করতে চাও?

মাকে দেখে শৈশব থেকেই আমার অভিনয় ভালো লাগে। তখন আমার মনে হতো ইশ্‌, আমি যদি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারতাম, তাহলে কেমন লাগত। একদিন বাবাকে বললাম। পরে বাবার হাত ধরেই অভিষেক হলো। এখন অভিনয় বা মিডিয়া লাইনের সঙ্গে থাকতে চাই। ক্যামেরার পেছনের কাজগুলোও ভালো লাগে।

প্রশ্ন :

তাহলে নির্মাতা হওয়ার ইচ্ছা আছে?

আমার ইচ্ছা আছে। নির্মাণকাজ ঘরের মধ্যেই দেখেছি। তখন থেকেই মনে হয়েছে, পরিচালনার কাজটাও উপভোগ করা যায়। কোনো কিছু সৃষ্টি, সেটা দিয়ে দর্শকদের রেসপন্স পাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার।

টাপুর, টুপুর দুই বোন

প্রশ্ন :

তাহলে আপাতত সিনেমাটি দেখা হচ্ছে না!

ডিসেম্বর পর্যন্ত যদি কোনো হলে সিনেমাটি দেখানো হয়, তাহলে দেখতে পারব। তা না হলে অনেক বড় কিছু মিস করব। যেখানেই সিনেমাটি চলুক, দেখব। নিজেকে বড় পর্দায় দেখার লোভ কার না থাকে। সেই দিনের জন্যই এখন অপেক্ষা।