সেই সময়ে ১০ টাকা মেরে ৯০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার করেছি

রাজশাহীতে ‘ক্যাম্পাস’ ধারাবাহিক নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন রওনক হাসান। অন্যদিকে প্রথমবার বিটিভির নাটক পরিচালনা করলেন তিনি। ‘নকশিকাঁথার জমিন’, ‘নয়া মানুষ’ সিনেমা রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। এসব প্রসঙ্গে নানা অভিজ্ঞতা বিনোদনের সঙ্গে ভাগাভাগি করলেন এই অভিনেতা।
রওনক হাসান। ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

ঢাকার বাইরে ‘ক্যাম্পাস’ নাটকের শুটিং কেন করছেন? ঢাকাতেই তো বেশির ভাগ ধারাবাহিকের শুটিং হয়?

গল্পটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের। তাদের সংকট, প্রেম, বিরহের গল্প, হতাশাসহ সমসাময়িক অনেক প্রসঙ্গ এখানে উঠে আসবে। ভিন্ন একটা লোকেশন, ভিন্ন একটা গল্প দর্শকদের ভালো লাগবে। আমি এখানে শিক্ষক। শুটিং করে আমার মনে হয়েছে ভিন্নতা আনতে ঢাকার বাইরে আরও বেশি গল্পের শুটিং করা উচিত। যদিও এখানে বড় ফ্যাক্টর বাজেট।

প্রশ্ন :

এত পরে কেন বিটিভির নাটক পরিচালনা করলেন? বিটিভিতে অভিনয়ের চেয়ে কি পরিচালনায় আগ্রহ কম ছিল?

বিটিভি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। সেখানে অভিনয়ের মতোই আমার পরিচালনায় আগ্রহ ছিল। ‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল’ দিয়ে সেটা পূরণ হলো। এটা অনেক সম্মানের। আমি অনেক আগে একবার বিটিভিতে প্রচারের জন্য নাটক জমা দিয়েছিলাম। সেটা প্রিভিউ লিস্টে একসময় এক নম্বরে ছিল। পরে দেখি নম্বর একের পর এক পিছিয়ে যাচ্ছে। তখন নাটকটি উঠিয়ে নিই। কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। এবার যখন মাহফুজা আপা (বিটিভির জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার) গল্প দেখে ডাকলেন, পরিচালনার কথা বললেন, তখন মনে হলো কাজ করা যায়। এ জন্য নাটকের প্রযোজক মাহফুজার রহমান ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা।

রওনক হাসান। ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

বিটিভিতে তালিকাভুক্ত অভিনয়শিল্পী হয়েছেন কবে?

১৯৯৮ সালে আমি প্রথম তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ার জন্য আবেদন করি। তখন আমি অডিশন দিয়ে পাস করিনি। বিটিভির অভিনেতা হতে ২৪ বছর লেগেছে। গত বছর পাস করেছি। অডিশন বোর্ডে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এস এম মহসিন স্যার, শহীদুজ্জামান সেলিম ভাই। আমাকে স্ক্রিন টেস্ট দিতে হয়েছে। তাঁরা আমাকে তিনবার অভিনয় করে দেখাতে বলেছেন। তিনবার অভিনয় করার পরে আমার আক্ষেপ ছিল, জীবনে কোথাও একটু সুবিধা পেলাম না। সব জায়গায় আমাকে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম পারিশ্রমিক কোথায় থেকে পেয়েছিলেন?

বিটিভির একটি মাইম ড্রামায় অভিনয় করে। রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন ছিল সেটা। সেই মাইম ড্রামায় অনেক অভিনয়শিল্পীর মধ্যে আমিও ছিলাম। ১৯৯৭ সালের ঘটনা এটা। পরিচালক ছিলেন শাহাদত হোসেন নিপু। সেদিন ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে মায়ের জন্য কাঁচাবাজার করে বাসায় গিয়েছিলাম। আমার কাছে এটা অনেক বড় ব্যাপার ছিল। তখন ১০০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার করতাম।

‘জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল’ নাটকের দৃশ্যে রওনক ও শামীমা তুষ্টি
ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

কাঁচাবাজার করার কারণ কী ছিল?

আমি জানতাম মা এতেই সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। মা অভিভূত হলেন। তখন আমি চাকরিবাকরি ছেড়ে দিয়ে অভিনয় করছি, এটা নিয়ে আশপাশের মানুষ আমাকে নিয়ে মায়ের কাছে অনেক রকম কথা বলতেন। তখন অনেক পরিবার মনে করত, নাটক করা মানে নষ্ট হয়ে যাওয়া। কিন্তু আমার মা–বাবা সমর্থন দিয়েছেন। এর মধ্যেও তখন অনেকেই মাকে বলতেন, ‘তোমার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে।’ এমন অনেক কথাই মা শুনে বিছানায় কাঁদতেন। যে কারণে এই কাঁচাবাজার অন্য রকম ব্যাপার ছিল।

প্রশ্ন :

আপনার বাজার করার কথা মনে আছে?

আমি নিয়মিত বাজার করেছি। তখন এইট, নাইন–টেনে পড়ি। বাসা থেকে ১০০ টাকা দিত। সেটা অনেক টাকা। সেই সময়ে ১০ টাকা মেরেও ৯০ টাকায় ব্যাগভর্তি বাজার করেছি। দরদাম করে যেখানে কম পেতাম, সেখান থেকে কিনেছি। তখন ১০–১২ টাকা দিয়ে রাজার মতো চলতাম। হাত খরচ হয়ে যেত। অপেক্ষায় থাকতাম বাজার করার জন্য।

রওনক হাসান। ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

এখন নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন, পেছনে তাকালে কী মনে হয়?

অভিনেতা হিসেবে আমি আমার জায়গায় সফল। নিয়মিত নাটক, সিনেমা করছি। পরিবারের দায়িত্ব পালন করছি। দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছি। সিনেমা, ওটিটিতে কাজ করছি। সেগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে। আকরাম খানের ‘নকশিকাঁথার জমিন’। সোহেল রানা বয়াতির ‘নয়া মানুষ’ চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আরও দুটি চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ। ডাবিং করব। একটি ওটিটির শুটিং শুরু হবে। একজন অভিনেতা হিসেবে চরিত্রের ক্ষুধা আছে কিন্তু আমি ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি।