অভিনেত্রী চমককে নিষিদ্ধ ঘোষণা: যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি

সহশিল্পীর অনৈতিক সুবিধা চাওয়া ও মেকআপ রুমে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। সেই ঘটনায় প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী নিজ নিজ সংগঠনে অভিযোগ জানান। ১৩ আগস্ট এ নিয়ে তিন সংগঠন মুখোমুখি হয়। পরে বিষয়টি আলোচনায় মীমাংসা হয়। সে ঘটনায় আবার সাত দিন পর গত সোমবার ডিরেক্টরস গিল্ড সিদ্ধান্ত নেয়, অভিনেত্রী রোকাইয়া জাহান চমক তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ। এ ঘটনায় ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয়শিল্পী সংঘের মতের বিরোধ দেখা গেছে। এগুলো নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি হলেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম

অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিমছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন:

নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যকে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে, এটা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

এটা দুঃখজনক ব্যাপার। ডিরেক্টরস গিল্ড কোনো অভিনয়শিল্পীকে বহিষ্কার করতে পারে না। একটি পেশাদার কোনো সংগঠন অন্য সংগঠনের শিল্পী–কলাকুশলী বা কোনো ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে পারে না। তারা যৌথভাবে আলোচনায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কারণ, সংগঠন কোনো কোর্ট–কাছারি বা আদালত নয়।

প্রশ্ন:

১৩ আগস্ট যখন প্রথম তিন সংগঠনের মীমাংসা সভা হয়, সেদিন কি সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল?

সেদিন একটি শর্ত নিয়ে আপত্তি ছিল। সেটাও দু-একজনের, তারা বলেছিল, ‘চমককে নিষিদ্ধ করতেই হবে।’ আবার সবার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যেকোনো একটা করতে হবে। নিষিদ্ধ হলে নিষিদ্ধ। তিন বা ছয় মাসের জন্য সে কাজ করবে না। অথবা জরিমানা দেবে, ভুলের জন্য মাপ চাইবে যেটা আমরা পরিচালক ও প্রযোজকদের মতামত নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন বহিষ্কার হলে সে শুটিং শেষ করবে কীভাবে, জরিমানাই–বা কেন দেবে। তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হলো। সেটা চমকসহ অন্যরা মেনে নিল। পরে শুনছি ডিরেক্টররা মানবেন না। ইচ্ছামতো বহিষ্কার করা হলো।

প্রশ্ন:

সিনিয়র অভিনয়শিল্পী মাসুম বাসার, তাঁকে অসম্মান করা হয়েছিল, তিনিও চমকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন...

তিনি অভিযোগ করেছিলেন। পরে চমক তাঁর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে। সবার সামনে ভুলের জন্য ক্ষমা চায়। এতে মাসুম বাসার ভাইয়ের কোনো আপত্তি ছিল না। তিনি ক্ষমা করে দেন। ঘটনায় বাসার ভাই, আরশ, প্রযোজক, সেই পরিচালকের আপত্তি নেই, আছে শুধু ডিরেক্টরস গিল্ডের আপত্তি। কয়েকজনের আপত্তি। আমরা পাঁচ–ছয় বছর ধরে সংগঠন চালাচ্ছি। কখনো একটু মতের অমিল হয়েছে, কিন্তু বড় ধরনের কিছু হয়নি। সব সময় মেজরিটির পক্ষ নিয়েই রায় হয়েছে। একক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় নেই অভিনয়শিল্পী সংঘের।

‘সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বে পার্থক্য রয়েছে’– আহসান হাবীব নাসিম
প্রশ্ন:

শোনা যাচ্ছে চমককে তড়িঘড়ি করে অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্য করা হয়েছে?

না না, এটা ভুল তথ্য। তারা আরও কিছু ভুল তথ্য দিচ্ছে, সেটাও বিরক্তির কারণ। হুট করে আমাদের সংগঠনে সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই।

প্রশ্ন:

অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে মাসুম বাসার, আরশ, চমক একে অন্যকে নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘে অভিযোগ দিয়েছিলেন, সেখানে ডিরেক্টরস গিল্ডের কেউ কি কোনো অভিযোগ এনেছিলেন?

আমাদের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে যে সমস্যা, সেটা আমার তিনজনের সঙ্গে বসে সমাধান করেছি। শিল্পী শিল্পী সমস্যার সমাধান। এখানে নাটক যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটা নিয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের অভিযোগ। সেখানে পরিচালকের অভিযোগে কোথাও লেখা নেই চমককে নিষিদ্ধ করতে হবে, লেখা ছিল ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এখন চমক নাটকের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবে। ঘটনা এখানেই শেষ হওয়ার কথা। শুটিংয়ের এই ঘটনা নিয়ে আরও ১০ জ্যেষ্ঠ পরিচালক, অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কথা বলা যেত, মতামত নেওয়া যেত। সেটা আরও ভালো হতো।

প্রশ্ন:

যখন শুনলেন ডিরেক্টরস গিল্ড আপনাদের মতামতে রাজি নয়, তখন কি আপনারা তাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন?

আমরা চেষ্টা করেছি। প্রযোজক সংগঠনের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছি।

প্রশ্ন:

ডিরেক্টরস গিল্ডের কিছু সদস্য এটাও বলছেন, তড়িঘড়ি করে ১৪ আগস্ট রাতে আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে কারণে প্রেস রিলিজে পরিচালকদের কোনো নেতার স্বাক্ষর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি, এটা নিয়ে কী বলবেন?

এটা তাদের ভুল তথ্যের আরও একটি। সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁদের জানানো হয়েছে। তারা দুপুর পর্যন্ত বলেছে আসবে। হঠাৎ করে তারা নেই। অপেক্ষা করেছি। সন্ধ্যার পরও কেউ আসেনি। তখন আমরা দুই সংগঠন মিলে আগের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছি। তাদের না পেলে সিগনেচার কীভাবে নেব। আর এটা অনেক দিন ঝুলে ছিল। সেই কারণে ১০ দিন পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি সেখানেই শেষ করতে চেয়েছি।