প্রথম দেখেছিলাম এক টিকিটে দুই সিনেমা

পরাণ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচিত শরীফুল রাজ। ভাসছেন প্রশংসায়। ঢালিউডে তাঁর প্রথম ছবি আইসক্রিম মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। ছয় বছরের মাথায় চলচ্চিত্রে পেলেন বড় সাফল্যের দেখা। এই সাফল্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

শরিফুল রাজছবি: ফেসুবক থেকে

প্রশ্ন :

‘পরাণ’ ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যে প্রেক্ষাগৃহমালিকেরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। আপনার পরান কতটা তৃপ্ত?

এই ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে আমি পরিচিত নই। একটা সময় বাসায় কাউকে না জানিয়ে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতাম। আম্মার কাছে ধরাও খেয়েছি। আম্মা তো আমাকে স্কুলে নিয়ে যেত। যাওয়ার পথে বাংলা সিনেমার পোস্টার দেখলে মাথাটা ঘুরে যেত। সে জায়গা থেকে স্ট্রাগল করতে করতে এখন সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হলাম, আমার সিনেমা দেখা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে টিকিট ক্রাইসিস, মানুষের ভালো লাগা—এসবে আমি আসলে অনেক অনুপ্রাণিত। আবারও আমাদের দেশের মানুষ প্রেক্ষাগৃহমুখী হচ্ছেন, এটা শুধু আমার নয়, সব অভিনয়শিল্পীর জন্য অনেক বড় আশার জায়গা।

প্রশ্ন :

জীবনের প্রথম দেখা সিনেমা কোনটা ছিল, কোন প্রেক্ষাগৃহে?

(হাসি) এটা তো বলা যাবে না। প্রথম দেখেছিলাম এক টিকিটে দুই সিনেমা। মনে হয় ২০০৬–০৭ সালের দিকে। সিলেট বন্দরবাজারের একটা প্রেক্ষাগৃহে।

প্রশ্ন :

এক টিকিটে এক সিনেমা কোনটা ছিল?

ছোটবেলা থেকে অ্যাকশন সিনেমা খুব পছন্দ। নায়ক রুবেলের সিনেমা আমার খুব ভালো লাগত। যত দূর মনে পড়ে, প্রথম দেখেছি ‘বাংলার টাইগার’। এরপর মনে হয় ‘মরণ নিশান’।

শরীফুল রাজ

প্রশ্ন :

সিনেমা দেখার নেশা, নাকি কোনো শিল্পীকে ভালো লাগত বলে ছোটবেলা থেকে এভাবে ছবি দেখতেন?

কোনো শিল্পীর প্রতি নেশা থেকে নয়, সিনেমা দেখতে হবে, তাই দেখতাম। এখন মনে হয়, যখন আসলে সিনেমা দেখার নেশা ছিল, তখন ওই রকম করে সুস্থ ধারার ভালো কোনো সিনেমা দেখতে পারিনি। ভালো সিনেমা দেখার শুরুটা হয় মনের মাঝে তুমি দিয়ে। এরপর মনপুরা দেখেছি। এই ছবি দেখার পর মনে হয়েছে, দেশে ভালো সিনেমা হচ্ছে। তার আগপর্যন্ত কাটপিসনির্ভর সিনেমা বেশি দেখার ঝোঁক ছিল। কখনো বন্ধুরা মিলে। আবার কখনো চুরি করে দেখতে যেতাম। একা একাও প্রচুর ছবি দেখতাম।

প্রশ্ন :

একা দেখার সুবিধা কী?

সুবিধার বিষয় ভেবে নয়। যখন কলেজ বা স্কুলে পড়ি, সিলেট শহরে আট কি নয়টি প্রেক্ষাগৃহ ছিল। এসব প্রেক্ষাগৃহে বিভিন্ন ধরনের সিনেমা চলত। একটা তো ছিলই এক টিকিটে দুই সিনেমা চালানোর জন্য। বাকিগুলোর কোনোটিতে শাকিব খানের, কোনোটিতে রুবেলের। কোনোটিতে বাংলা সিনেমা, কোনোটিতে কাটপিস। সিনেমা চলতেই থাকত ননস্টপ।

শরিফুল রাজ ও তাঁর স্ত্রী চিত্রনায়িকা পরীমনি

প্রশ্ন :

ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন?


স্কুল বা কলেজের প্যান্ট–শার্ট পরিষ্কার করতে গিয়ে পকেটে কখনো সিনেমার টিকিট তো পেত। সেভাবে কিছু বলত না। আমার আব্বু–আম্মুরও সিনেমা দেখার ঝোঁক ছিল। সামনে যদি শাবানা ম্যাডাম বা রোজিনা ম্যাডাম দাঁড়ান, আম্মু তাহলে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। আব্বু যেমন অনেক পছন্দ করেন নায়ক আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, উজ্জল—তাঁদের নিয়ে এখনো কত যে গল্প করেন। গত শনিবার আব্বা ইলিয়াস কাঞ্চনের পাশে বসে সিনেমা দেখেছেন। একজন অ্যাক্টরকে দেখলে ছোটবেলায় আমার যে ফিলিংসা হতো, আব্বারও তা–ই হয়েছে। বাসায় এসে আব্বু আমাকে বলছিলেন, ‘জানো, আমার পাশে বসে ইলিয়াস কাঞ্চন সিনেমা দেখেছেন।’

প্রশ্ন :

কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে ঘুরেছেন। দর্শকের কোন কথাগুলো অনুপ্রাণিত করেছে?

একটা কথা চাউর আছে, আমাদের দেশে সিনেমা সিলেক্টিভ অডিয়েন্স দেখেন। আমি অবাক হলাম, সিনেমা দেখার আলাদা কোনো দর্শক নেই। তাঁদের কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই, তাঁরা বড়লোক, গরিব কেউ না—সবাই বাংলা সিনেমা, বাংলাদেশের শিল্পীদের সিনেমা দেখতে চান। এ দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী আছে, যারা পাগলের মতো বাংলা সিনেমা দেখতে চায়। কিছু মানুষকে পেয়েছি, জড়িয়ে ধরে ছাড়তে চান না। কেউ বলেছেন, ‘৩০ বছর পর সিনেমা দেখতে এলাম।’ কেউ কেউ আবার মেয়ে, স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে ছবি দেখতে এসেছেন। এক ভদ্রলোককে পেলাম, আমেরিকা থেকে এসে বাংলা সিনেমা দেখতে এসেছেন। এসব অনেক বড় পাওয়া। দর্শকেরাই পারেন বাংলা সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিতে। দর্শকদের শুধু ভালো মানের বিনোদনধর্মী সিনেমা দেখার সুযোগ করে দিতে হবে।

‘পরাণ’ চলচ্চিত্রে মিম ও রাজ
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনি কি ভেবেছিলেন ‘পরাণ’ এভাবে দর্শক গ্রহণ করবেন?

কোনো প্রত্যাশা নিয়ে সিনেমা করি না। এখন পর্যন্ত যতগুলো ছবিতে অভিনয় করেছি, স্ক্রিপ্ট ভালো লাগলে হ্যাঁ বলেছি। এরপর শুটিংয়ে গিয়ে আমার চরিত্রটা ঠিকঠাক করার আপ্রাণ চেষ্টা করি। এটা রায়হান রাফির (পরিচালক) ক্রেডিট, ও মনে হয় আমজনতার পালস ভালো বুঝে ফেলেছে। আমি বরাবরই পরিচালকনির্ভর আর্টিস্ট। পরিচালকের সঙ্গে বন্ধুত্ব লাগে। রাফির সঙ্গে ভালো বন্ডিং ছিল বলেই চরিত্রটা ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে পেরেছি।