আমার নিজের ওপরই কিছুটা অভিমান ছিল: বালাম
দীর্ঘ তিন বছরের বিরতি শেষে ‘চুপচাপ চারদিকে’ গান দিয়ে ভালোবাসা দিবসে ফিরেছেন সংগীতশিল্পী বালাম। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তাঁর ৮০ থেকে ৯০টির মতো গান। ২৬ মার্চ ও ঈদে একাধিক গান মুক্তি পাবে। ক্যারিয়ারের বাঁকবদল, গানে নিয়মিত হওয়াসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি
প্রশ্ন :
সর্বশেষ ২০১৯ সালে ‘তুমি রূপকথায়’ গানের পরে তিন বছরের বিরতি কেন?
মাঝেমধ্যে বিরতি হয়ে যায়। আমার স্ত্রী ২০১০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর গান থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। আর এর মধ্যে সিডি ক্যাসেট থেকে ডিজিটাল দিকে রূপান্তর ঘটল, নতুন প্ল্যাটফর্ম এল, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, এটা–সেটা। আমি একটু ইন্ট্রোভার্ট মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাকটিভ থাকতাম না। এসব মিলিয়ে নতুন করে দর্শকের সামনে গান মুক্তি দিতে আগ্রহ পেতাম না।
প্রশ্ন :
তাহলে কোনো অভিমান নেই?
তেমন নয়। আমার নিজের ওপরই কিছুটা অভিমান ছিল। আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাকটিভ ছিলাম না বলে একবার ফ্যান পেজ হ্যাক হয়ে গেল, আমি পিছিয়ে গেলাম। এখন নতুন পুরোনো সবাই সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাকটিভ। তখন মনে হলো, নিজের ওপর থেকে অভিমান সরিয়ে ফিরব। কিন্তু গান করব না, এই শব্দটা মাথায় কখনোই আসেনি। যত দিন প্রাণ থাকবে, তত দিন গান করে যাব।
তখন মনে হলো, নিজের ওপর থেকে অভিমান সরিয়ে ফিরব। কিন্তু গান করব না, এই শব্দটা মাথায় কখনোই আসেনি। যত দিন প্রাণ থাকবে, তত দিন গান করে যাব।
বিরতির তিন বছর কীভাবে কাটিয়েছেন?
আমি গান থেকে এক মিনিটের জন্যও দূরে থাকিনি। এই সময়ে ৪০/৫০টি সুর করেছি। কোনোটা শেষ করেছি। কোনোটা অর্ধেক কাজ করেছি। কিছু গানের কম্পোজিশন করেছি। সব মিলিয়ে ৮০/৯০টির মতো গান নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমার হার্ডড্রাইভ ভরা শুধু গান আর গান। এগুলো এখন নিয়মিতভাবে আমার চ্যানেলে মুক্তি পাবে।
প্রশ্ন :
কেন মনে হলো ভালোবাসা দিবসে ‘চুপচাপ চারিদিকে’ গান দিয়ে ফিরবেন?
ফেসবুকে একটু রেসপন্স করলেই ভক্তরা আমাকে অনেক ভালোবাসা দেন। এই সময়ে আমি যেখানেই গিয়েছি, ভক্তদের কাছে শুনতে হয়েছে, ‘প্লিজ বালাম ভাই, আপনি গান করেন’, ফেসবুকে ভক্তরা মন্তব্য করে লিখেন, ‘কামব্যাক, ক্যামব্যাক বালাম ভাই’,—এই ব্যাক শব্দটা এবার খুবই নস্টলজিক করে দিয়েছে। পরে মনে হলো, ভক্তরা আমাকে বালাম বানিয়েছেন, তাঁরাই সবার ঊর্ধ্বে, তাঁদের গান দিতে হবে। আর ভালোবাসা দিবসটা আমার জন্য ইমোশনাল একটা মোমেন্ট। আমার স্ত্রীর সঙ্গে এই দিন সন্ধ্যায় প্রথম পরিচয় হয়। যে কারণে মনে হলো, রোম্যান্টিক গানটি দিয়ে ভালোবাসা দিবসে ভক্তদের কাছে ফিরব।
ভালোবাসা দিবসটা আমার জন্য ইমোশনাল একটা মোমেন্ট। আমার স্ত্রীর সঙ্গে এই দিন সন্ধ্যায় প্রথম পরিচয় হয়। যে কারণে মনে হলো, রোম্যান্টিক গানটি দিয়ে ভালোবাসা দিবসে ভক্তদের কাছে ফিরব।
প্রশ্ন :
গানটি ভক্তরা কীভাবে নিয়েছেন?
দর্শকেরা পছন্দ করেছেন। গানটি নিয়ে কথা বলছেন। তবে গানটি কে কতটা শুনছেন, তার চেয়ে ইমপর্টেন্ট, আমি ব্যাক করেছি। এটা ভক্তদের জানানো।
প্রশ্ন :
স্ত্রীকে গানের মডেল বানানোর পরিকল্পনা এল কীভাবে?
আমার স্ত্রী আগে টুকটাক কিছু বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছে। সে বেছে বেছে কাজ করে। আমার ইচ্ছা ছিল, আমার গানে তাকে মডেল করব। এই গানটাকে কিছুটা আমাদের জীবনের গল্প বলা যায়। আবার নতুন যাঁরা প্রেমে পড়েন, তাঁদের অনুভূতিগুলোও গানে রয়েছে। গানে আমাদের গল্প কিছুটা থাকার কারণে মডেল হিসেবে তার কথাই বেশি আসছিল। শুটিংয়ের আগের দিন রাতে তাকে একটা সারপ্রাইজ দিলাম। বললাম, ‘আমার গানের মডেল হবা?’ সে প্রথমে ফান মনে করেছে। যখন বললাম, ‘ভালোবাসা দিবসে আমাদের দেখা হয়েছিল। চলো, দুজন মিলে মডেল হই।’ তখন তো খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
প্রশ্ন :
‘একমুঠো রোদ্দুর’, ‘কী নেশা’, ‘পৃথিবীর যত সুখ’, ‘একাকী মন আজ নীরবে’, ‘লুকোচুরি’–সহ আপনার সাড়াজাগানো গানের আলাদা শ্রোতা রয়েছে, আবার এর মধ্যে নতুন দর্শক তৈরি হয়েছে। সেখানে আপনি নতুন প্রায় এক শো গান নিয়ে কাজ করছেন, এই গানগুলোতে কী ধরনের পরিবর্তন থাকবে?
আমার পুরোনো ভক্তরা এখন বলেন, ‘বালাম ভাইয়ের আগের গান শুনতে চাই।’ সেই ধরনের গান এখন করলে নতুন জেনারেশনের ভক্তদের ইগনোর করা হবে। নতুনদের প্রতি অন্যায় হোক, চাই না। তাহলে অনেকেই বলবেন, নতুনদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছি না। আমি শুধু শিল্পী নয়, সংগীত পরিচালকও। যে কারণে গানের ভেরিয়েশন, মিউজিক, সাউন্ড নিয়ে চিন্তা করি। আগামীতে যে গান আসবে, সেখানে অনেক গান আছে এই সময়ের দর্শকের সঙ্গে যায়। আমার মেলোডি গান থেকে বের হয়ে ভিন্ন ধরনের গান করছি। ধৈর্য ধরে শুনলে আগের দর্শকও গানগুলো পছন্দ করবেন। সব জেনারেশনকে নিয়েই আমি এগোতে চাই। এটাও ভাবছি, সবাইক সন্তুষ্ট রাখাও কঠিন।
প্রশ্ন :
আপনার গানের সবচেয়ে বড় সমালোচক কাউকে পেয়েছেন?
আমার গানের সবচেয়ে বড় ভক্ত ও সমালোচক আমার স্ত্রী। আমি যেকোনো ধরনের গান করলেই তাকে আগে শুনিয়ে নিই। ৯৯ ভাগ গানেরই সে প্রশংসা করে। আবার গঠনমূলক সমালোচনা করে।
প্রশ্ন :
তরুণদের গান শোনা হয়?
আমি এফএম–এ অনেক গান শুনি। অনেকের নাম জানা হয়। নতুনদের গান ভালো লাগে। অনেকেই মিউজিক, সুর, সংগীত এক্সপেরিমেন্ট করেন। অনেকের গানে আবেগ–ইমোশন থাকার কারণে ভালো লাগে।
প্রশ্ন :
দূরে থাকার পর উপলদ্ধি কী হলো?
আমি সব সময় চিন্তা করতাম, বিরতির পরে শুরুটা করব কীভাবে। শুরু করলে সেটার ধারাবাহিকতা রাখার একটা ব্যাপার থাকে। এখন আর তিন মাস ছয় মাস পরে নয়, নিয়মিত গান নিয়ে আসব। আর মনে হলো বালামকে এখনো ভক্তরা মিস করেন। মিস করা ভক্তরাই আমার ফেরার অনুপ্রেরণা। এটা আমার অনেক বড় প্রাপ্তি। তাঁদের জন্য আমাকে গান করে যেতে হবে।
আমার গানের সবচেয়ে বড় ভক্ত ও সমালোচক আমার স্ত্রী। আমি যেকোনো ধরনের গান করলেই তাকে আগে শুনিয়ে নিই। ৯৯ ভাগ গানেরই সে প্রশংসা করে। আবার গঠনমূলক সমালোচনা করে।
প্রশ্ন :
ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?
আমি এখন সামনে এগোতে চাই। টানা গানগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকব। ২৬ মার্চ ‘জাগো বাংলাদেশ জাগো’ শিরোনামে একটি গান শ্রোতাদের দিব। ঈদে ভক্তরা বেশ কটি গান পাবেন। সামনে বিভিন্ন শিল্পীকে দিয়ে ফিচারিং করব। শুধু আমার ইউটিউব চ্যানেলেই নয়, পছন্দ হলে সবার সঙ্গে গান করব। সিনেমায় গান করা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা মানে সবকিছুর কানেকশন থেকে দূরে থাকা। যে কারণে স্টেজ শো থেকে কিছুটা দূরে থাকা। কারণ, সবাই ডাকার আগে ধারণা করেন, বালাম ভাই কি গান করবেন, নাকি করবেন না। এখন আমি স্টেজে নিয়মিত হতে চাই।