পৃথিবীতে আসার উদ্দেশ্যটা সফল করতে পারিনি

রিয়াজ আহমেদছবি : প্রথম আলো

দীর্ঘ বিরতির পর অপারেশন সুন্দরবন ছবিতে রিয়াজকে পাওয়া গেল। অথচ একটা সময় চলচ্চিত্রে নিয়মিত ছিলেন এই নায়ক। পরে টেলিভিশন নাটকের চেনা মুখ হয়ে ওঠেন এই অভিনেতা। এখন অভিনয়ের বাইরে ভিন্ন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। গতকাল ছিল এই চলচ্চিত্র তারকার জন্মদিন।

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন।

ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

জন্মদিন কি ছোটবেলা থেকেই উদ্‌যাপন করতেন?

হতো না যে তা নয়। ভাইবোনেরা মিলে উদ্‌যাপন করত।

প্রশ্ন :

আপনারা কয় ভাই-বোন?

আমরা দুই ভাই, ছয় বোন। আমি সবার ছোট।

প্রশ্ন :

তার মানে অনেক আদরে বেড়ে উঠেছেন?

আদর-শাসন মিলিয়ে বেড়ে উঠেছি।

রিয়াজ আহমেদ
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

চলচ্চিত্রে যে নাম লেখালেন, পরিবার থেকে আপত্তি করেনি?

১৯৮৮ সালে আব্বা যখন মারা যান, তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। এরপর পরিবারের যেকোনো সিদ্ধান্তে আম্মার খালাতো ভাই কাজী আনোয়ার ইসলামের মতামত খুব গুরুত্ব পেত। এয়ারফোর্সে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর ববিতা আপার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তাঁরই একটি ছবির শুটিং দেখতে এফডিসিতে যাই। ওখানেই চিত্রনায়ক জসীম ভাই তাঁর জ্যাম্বস মুভিজের একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। আম্মাকে বলার পর তিনি রাজি ছিলেন না। এরপর আনোয়ার মামা আম্মার সঙ্গে কথা বলেন। আম্মাকে বলেন, ‘তুমি কি কখনো বাংলা সিনেমা দেখোনি?’ মা বলেছেন, ‘দেখেছি।’ ‘কার ছবি দেখেছো?’ ‘রাজ্জাক, উত্তম কুমার।’ মামা বললেন, ‘তুমি যদি রাজ্জাক ও উত্তম কুমারের ছবি দেখতে পারো, তাহলে তোমার ছেলে কেন ছবিতে অভিনয় করতে পারবে না?’ মামার যুক্তিতে আম্মা আর না করেননি। মামা বলেন, ‘ও যথেষ্ট ম্যাচিউরড, ওর মতো করে কাজ করুক।’  

‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির শুটিং রিয়াজ
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনার ভাইবোনেরা কী বলেছিলেন?

আম্মা বেঁচে থাকতে ভাইবোনদের মতামতের তোয়াক্কা করিনি। আম্মার মতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

প্রশ্ন :

অভিনয় শুরুর পর যখন পরিচিতি পাচ্ছিলেন, ভাইবোনেরা কী বলতেন?

যখন পরিচিতি পাচ্ছিলাম, আমার ধারণা সবাই এনজয় করেছে। আমাদের পরিবারে একমাত্র আমিই বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছি। অন্যরা সবাই অন্যান্য সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত।

‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবিতে পূর্ণিমা ও রিয়াজ

প্রশ্ন :

ববিতার সঙ্গে আপনার একটা সম্পর্কের কথা শোনা যায়।

ওটা দূরসম্পর্কের সম্পর্ক। তিনি আমার বাবার দিককার আত্মীয়।

প্রশ্ন :

কদিন আগে মুক্তি পেল ‘অপারেশন সুন্দরবন’। প্রচারে আপনাকে সেভাবে পাওয়া যায়নি।

আমরা যখন ছবি করি, পরিচালকের ওপর নির্ভর করে করি। ছবির প্রয়োজনে আমার আগামাথা পরিচালক যদি কেটে ফেলে দেন, আমি মনে করি পরিচালকের সেই অধিকার আছে। তবে আমার বেশ কিছু ভক্ত কষ্ট পেয়েছেন। এ কারণে আমার ভক্ত-দর্শকদের কাছে আমি দুঃখিত। ভবিষ্যতে চলচ্চিত্র করার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে সচেতন থাকব।

মৌরানী নাটকের দৃশ্যে মৌসুমী হামিদ ও রিয়াজ

প্রশ্ন :

তার মানে আপনার করা চরিত্রটি পরিপূর্ণ ছিল না?

এটা আসলে একান্তই পরিচালকের ওপর নির্ভর করে। ছবির ক্ষেত্রে পরিচালক ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ। চাইলে তিনি পুরোটাও ফেলে দিতে পারতেন। ছবিটা যেহেতু ভালো হয়েছে, এটা আমার জন্য আনন্দের। তবে চরিত্রের পরিপূর্ণতা না থাকায় অভিনয়শিল্পী হিসেবে কষ্ট পেয়েছি। তবে আমি যদি পরিচালক হতাম, তাহলে যতগুলো চরিত্র আনতাম, সব কটি সেভাবে বিন্যাস করতাম। সেটা যদিও আমার বিষয়। আমরা যখন একজন পরিচালকের অধীনে কাজ করি, তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই করি।

প্রশ্ন :

সামনে নতুন কোনো ছবি আসছে?

রেডিও নামে একটা ছবির শুটিং করা আছে। আরেকটা ছবিরও কাজ শেষ করেছি, নাম মুজিব: দ্য মেকিং অব নেশন। এর বাইরে আপাতত বলার মতো কোনো ছবি নেই।

প্রশ্ন :

চলচ্চিত্রে নিশ্চয় একটা স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন। সেই স্বপ্ন কে দেখিয়েছিল?

চলচ্চিত্রে কাজ করার স্বপ্নটা আমাকে দেখিয়েছিলেন সালমান শাহ। যশোরের নিরালা সিনেমা হলে সালমান শাহ ও মৌসুমী জুটির কেয়ামত থেকে কেয়ামত যখন দেখি, মুগ্ধ হই। আমি তখন বিমানবাহিনীর কাজ ছেড়ে দিয়েছি। সালমান শাহকে দেখার পর তাঁর গেটআপ, স্টাইল, কস্টিউম এবং টোটাল ছবিটা অন্য রকম একটা স্বপ্ন তৈরি করে। মনের মধ্যে স্বপ্ন তৈরি হয়।

প্রশ্ন :

জন্মদিন বিষয়টি আপনার কাছে কীভাবে ধরা দেয়?

জীবনের অর্ধশত বছর পার হয়ে গেল। মনে হয়, যতটুকু করার ছিল, ততটুকু করতে পারিনি। পৃথিবীতে আসার উদ্দেশ্যটা সফল করতে পারিনি। তবে যে যত অহংকারমুক্ত থাকবে, তার জীবন তত সুন্দর হবে। দিনের শেষে যেমন ৫০ বছর হয়েছে, তার মানে আমি মৃত্যুর দিকে ৫০ বছর এগিয়ে গিয়েছি। সব সময় ভাবি, সবাইকে মারা যেতে হবে, সে কারণে খুব বড় কিছু হয়ে গেছি, এই চিন্তা যেন আমার মধ্যে না আসে। আমি যেন খুব সাধারণ মানুষ হয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালোবাসায় জীবনটা পার করে দিতে পারি, জন্মদিনে এটাই আমার বেশি মনে হয়।

প্রশ্ন :

কোনো অপূর্ণ স্বপ্ন আছে কি?

স্বপ্ন নিয়েই তো বেঁচে থাকি। একটা ভালো ছবি বানাতে চাই। তবে স্বপ্নে সবচেয়ে প্রাধান্য হচ্ছে, আমার কন্যাকে বড় করে পৃথিবী ত্যাগ করার ইচ্ছা। মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করে, সঠিক শিক্ষা দেওয়ার পর যখন শক্তভাবে পথ চলতে শুরু করবে, তখন যেন আমার মৃত্যু হয়।