আমার একটা কষ্ট আছে...

৮ মে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘ফ্যাঁকড়া’। এতে অভিনয় করেছেন নিশাত প্রিয়ম। কাজ করেছেন আরও একটি ওয়েব সিরিজ ও অ্যানথোলজি সিনেমার। শুটিং করছেন ঈদের নাটকের। এসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন

প্রথম আলো:

সিরিজের নাম ‘ফ্যাঁকড়া’ রাখার যৌক্তিকতা কী?

নিশাত প্রিয়ম : সিরিজটির চিত্রনাট্য পেয়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। পুরো গল্প যখন পড়লাম, স্ক্রিপ্টজুড়ে দেখছি ফ্যাঁকড়ামি চলছে। আমরা শুটিং করি গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে, যে সময়ে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই অস্থিতিশীল। আন্দোলন, কারফিউ চলছিল। দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও ছিল—প্রচুর বৃষ্টি ও বন্যা হয়েছে। বলতে গেলে, একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে শুটিং করেছি। শুটিং করতে গিয়ে পুরোটা সময় কোনো না কোনো ফ্যাঁকড়ামির মধ্যে পড়েছি, যার কারণে মনে হয় একদম পারফেক্ট নাম।

‘ফ্যাঁকড়া’য় আছেন নিশাত প্রিয়ম। নির্মাতার সৌজন্যে

প্রথম আলো :

এখন তো কনটেন্টের ছড়াছড়ি। আপনার কেন মনে হয় ‘ফ্যাঁকড়া’র প্রতি মানুষ আগ্রহ বোধ করবেন?

নিশাত প্রিয়ম : আমি নিজেও অনেক ওয়েব সিরিজে কাজ করেছি। পাশাপাশি বেশ ভালো ভালো ওয়েব সিরিজ হচ্ছে। প্রতিটি সিরিজে একটা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু থাকে, যেটার ওপর নির্ভর করে পুরো গল্প এগিয়ে যায়, শেষ হয়। এটা এমন একটা সিরিজ, যেখানে গল্পটাই হিরো এবং এখানে প্রতিটি উপাদান দর্শক পাবেন। ভালোবাসা, সংকট, প্রতিশোধ, আপস অ্যান্ড ডাউন, বন্ধন, রোমাঞ্চ, এমনকি সহিংসতাও আছে। আমরা যে সাতজন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছি, সবারই পেছনের একটা গল্প আছে। প্রত্যেকের জায়গা থেকে সংকট আছে, চাওয়া আছে; সে জায়গা থেকে সবাই মিলে গল্পটা এগিয়ে নিয়েছে। যার কারণে দর্শকেরও বিরক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। দর্শক খুবই পছন্দ করবেন সিরিজটি। এটাও আমাদের সার্থকতা, যাঁরা সিরিজটি দেখেছেন, একটা পর্ব শেষ হতে না আরেকটার ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে একটা রোমাঞ্চ কাজ করছে; কী হবে, তা নিয়ে কথা বলছেন। যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা এ–ও বলছেন, এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল! তাই বলব, নিঃসন্দেহে প্রত্যেকের ‘ফ্যাঁকড়া’ দেখা উচিত।

প্রথম আলো:

‘অদৃশ্য’ সিরিজের অনেক পরে ‘ফ্যাঁকড়া’য় কাজ করলেন। খুব সময় নিয়ে কাজ করলেন কি?

নিশাত প্রিয়ম : এক বছর পর মুক্তি পেল ‘ফ্যাঁকড়া’। মাঝখানে বঙ্গতে ওয়েব ফিল্ম ‘সেকশন ৩০২’ করেছি। এ ছাড়া মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘সিটি লাইফ’ ধারাবাহিকটি এক বছর ধরে প্রচারিত হচ্ছে। ব্যক্তিগত কারণে মাঝখানে ছোট্ট একটা বিরতি ছিল, তাই কাজ একটু কম করা হয়েছে। টানা কয়েক মাস দেশের বাইরেও ছিলাম।

প্রথম আলো :

সামনে তো ঈদ, এ উৎসবের জন্য কী কাজ করলেন?

নিশাত প্রিয়ম : আরেকটা সিরিজের কাজ করছি। একটা অ্যানথোলজিতেও কাজ করেছি। বেশ কয়েকটা নাটকে অভিনয় করেছি। কবে, কখন প্রচারিত হবে, তা বলতে পারছি না; পরিচালকেরা এসব ভালো বলতে পারবেন।

প্রথম আলো:

নিশাত প্রিয়ম : ছোট পর্দায় যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদের বড় পর্দায় কাজের একটা স্বপ্ন থাকে। আপনার কি তেমন কোনো স্বপ্ন আছে?

নিশাত প্রিয়ম : অবশ্যই আমরা যারা কাজ করছি, তাদের স্বপ্ন হচ্ছে বড় পর্দায় কাজ করব। আমারও তা–ই। আমিও এ রকম একটা গল্পের অপেক্ষায় আছি, যেটা পেলে মনে হবে আমি অবশ্যই সিনেমায় অভিনয় করতে চাই।

নিশাত প্রিয়ম। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

ভক্তরা অনেক কিছু জানেন আপনার সম্পর্কে, কিন্তু এমন একটা কিছু বলেন, যেটা খুব কম লোক জানেন...

নিশাত প্রিয়ম : আমি পরিবারকেন্দ্রিক। শুটিং থাকলে কাজ করি, শুটিং না থাকলে পরিবারে সময় দিই। পাশাপাশি আমি খেতে খুব ভালোবাসি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন খাবারের স্বাদ নিতে ভালো লাগে। সেটা অনেক ধরনের খাবারই হতে পারে। নির্দিষ্ট খাবার যে খেতে হবে, তা কিন্তু নয়।

প্রথম আলো:

কেউ বলেন ভালো অভিনয় করেছি, কেউ বলেন করতে পারিনি। আপনার কাছে ‘ভালো অভিনয়’ মানে কী? ক্যামেরার সামনে ‘সত্য’ তুলে আনার প্রক্রিয়াটা কেমন লাগে আপনার?

নিশাত প্রিয়ম : আমার কাছে মনে হয়, প্রতিটি কাজ থেকে কিছু না কিছু শিখছি। আরও অভিজ্ঞতা হচ্ছে। অভিনয় তো ইটস অল অ্যাবাউট রিঅ্যাকশন। যে স্ক্রিপ্ট আমি পাচ্ছি, এটার পেছনের গল্পটা কী, তা জানা জরুরি। এই যেমন চরিত্রটা কেমন, তার দৈনন্দিন কাজকর্ম কী, কীভাবে হাঁটে, কীভাবে চলে, তার জীবনে সংকট কী, অর্জন কী—অনেক কিছু ম্যাটার একটা চরিত্র ফুটিয়ে তোলায়। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেন, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। আমার কাছে যখন কোনো একটা কাজ আসে, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারদের জিজ্ঞেস করি, আমার চরিত্রে পেছনের গল্পটা কী, দর্শন কী, যে কাজটা করব, সেটার উদ্দেশ্য কী বা ব্যক্তিগতভাবে ওই চরিত্রের ধরনটা কেমন। সে ক্ষেত্রে বই পড়া যেতে পারে, মুভি ও সিরিজ দেখা যেতে—এভাবে একটা চরিত্র বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যেতে পারে। আমার মনে হয়, এখনো শিখছি, আজীবন শিখেই যাব।

নিশাত প্রিয়ম। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

এই যে বছর দশেক ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন, কখন আপনার মনে হয়েছিল, ‘আমি অভিনয়ের জন্যই জন্মেছি?’

নিশাত প্রিয়ম : আমার মনে হয়, আজীবন অভিনয় করে যেতে চাই। আজীবনই ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে চাই। আমার কাছে মনে হয়, অভিনয় অঙ্গন আমার দ্বিতীয় বাড়ি।

প্রথম আলো:

সবার জীবনে শৈশবে নানান ঘটনা ঘটে থাকে। আপনার জীবনে এমন কোনো ঘটনা কি আছে, যা শিল্পী হওয়ার পথ সুগম করেছে?

নিশাত প্রিয়ম : শৈশবে আমাদের যেটা হতো, বাসায় সবাই একসঙ্গে বসে নাটক দেখতাম। তখন আমি অনেক ছোট, অনেক কিছু মনেও নেই; তবে শুনেছি, নিয়ম ছিল প্রতি সপ্তাহে বাসার সবাই একসঙ্গে নাটক দেখা। মা ও বোনের কাছে ‘অয়োময়’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘বহুব্রীহি’ একসঙ্গে বসে দেখার গল্প শুনেছি। শিল্পী সরকার অপু দিদি অভিনীত ‘আনোয়ারা’ তো মায়ের ভীষণ প্রিয় নাটক। আমি যখন বড় হতে থাকলাম, তখন ‘এফএনএফ’, ফারুকী (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) ভাই যেসব কাজ করেছেন, সেগুলো টানত আমায়। ‘ব্যাচেলর’ দেখেছি। অবাক লাগত, একটা মানুষ এতগুলো চরিত্র কীভাবে ফুটিয়ে তোলেন! ওই টান থেকে মনে হতো, আমি অভিনয় করতে চাই। আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, আমাদের বাড়িতে অনেক বই আছে। ভাই, বোন, বাবা—সবারই বই পড়ার অভ্যাস। এখনো আমাদের বাসায় শংকর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল—সবারই বই রয়েছে। ছোট থেকে বড়—সবারই বই পড়ার অভ্যাস। অনেক কাজও দেখা হতো। সেখান থেকে আমার চরিত্র হয়ে ওঠার ইচ্ছা হতে থাকে। পরিবারের সবার একসঙ্গে নাটক-সিনেমা দেখার পাশাপাশি এত বই পড়া আমাকে শিল্পী হতে অনেক বেশি হেল্প করেছে।

নিশাত প্রিয়ম। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

ধরা যাক, আপনি এক দিনের জন্য অন্য কোনো তারকা হয়ে যেতে পারবেন; তাহলে কাকে বেছে নেবেন?

নিশাত প্রিয়ম : আমি আজীবন নিশাত প্রিয়মই থাকতে চাই, এভাবে থেকে মরে যেতে চাই।

প্রথম আলো :

মাঝেমধ্যে কি নিজে নিজের অভিনয় দেখে ‘উফ্‌...এটা আমি কী করলাম’ মনে হয়?=

নিশাত প্রিয়ম : যখনই দেখি, মনে হয় এর চেয়ে ভালো করতে চাই। আরও ভালো করার দরকার ছিল—নিজের অভিনয় দেখে সব সময় নিজের মধ্যে এটাই কাজ করে।

নিশাত প্রিয়ম
শিল্পীর সৌজন্যে
প্রথম আলো:

এমন কোনো স্বপ্ন আছে, যা এখনো পূরণ হয়নি?

নিশাত প্রিয়ম : আমার জীবনের এই স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না। আমার পরিবারে সবাই শিক্ষিত, সবাই শিক্ষায় জোর দিয়েছেন। আমি এমবিএ কমপ্লিট করেছি। আশপাশের সবার সহযোগিতায় কাজ করে এত দূর আসতে পেরেছি অথচ এটাই আমার বাবা দেখে যেতে পারেননি। সেই জায়গা থেকে সব সময় আমার একটা কষ্ট আছে, হাহাকার আছে। মনে হয়, আজকে আমার বাবা যদি বেঁচে থাকতেন, তিনি দেখতেন যে আমার পড়াশোনা শেষ করেছি, ক্যারিয়ারেও এত ভালো কাজ করছি; তিনি অবশ্যই অনেক গর্ব বোধ করতেন।

আরও পড়ুন

প্রথম আলো :

তরুণ বয়সের নিশাতকে নিয়ে যদি কিছু লিখতে বলা হয়, তাহলে কী লিখতেন?

নিশাত প্রিয়ম : আমি তো এখনো তরুণ...। আমি নিজেকে নিয়ে কিছু লিখলে এটাই লিখব—স্বপ্ন দেখো, স্বপ্ন পূরণ করো এবং স্বপ্নপূরণে যতটা পরিশ্রম করতে হয়, সব সময় তা করতে থাকো। নিজের যে চাওয়া বা ইচ্ছা, তা অবশ্যই পূরণ হবে।