আমরা ফিল্মের লোকজন এখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি হয়ে গেছি: বাপ্পারাজ

বাপ্পারাজসংগৃহীত
আজ ১১ মার্চ চিত্রনায়ক বাপ্পারাজের জন্মদিন। কিন্তু এই বিশেষ দিন নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই। আয়োজন করে কখনোই দিনটি পালন করেন না তিনি। কেন করেন না? প্রথম আলোর কাছে সেসব কথা বলতে গিয়ে এফডিসির সমিতির নেতা-নেত্রীদের যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। কথা বলেছেন শিল্পী সমিতির গত পিকনিকে মারামারি নিয়ে, পিকনিক ঘিরে সমিতির মধ্যে স্পষ্ট বিভেদের কথাও।

প্রথম আলো :

বিশেষ দিনটি কীভাবে কাটছে?

অন্যান্য দিনের মতোই কাটছে। আলাদা করে কাটছে না। কারণ, আমি আগেই বলেছি, আমার জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী কখনোই পালন করি না। একমাত্র বাবা বেঁচে থাকতে বাবার জন্য করা হতো আর ছোট ভাই সম্রাটের জন্য। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর আর এসব বাসায় করি না।

বাপ্পারাজ
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম আলো :

কেন? কোনো কারণ আছে কি?

কোনো কারণ নেই। এমনিই করি না। এটি আমার কাছে একটি ফালতু বা অযথা আবেগের কাজ মনে হয়। এই চর্চাই থাকা ঠিক নয়। এসবের কারণে কখনো কখনো ঘর-সংসারও ভেঙে যায়। আমাদের সমাজে কখনো কখনো কারও না কারও সংসারে অঘটনও ঘটে এসব নিয়ে। এমনও ঘটেছে যে স্ত্রী স্বামীকে বলছেন, ‘তুমি আমার জন্মদিন মনে রাখো না, বিবাহবার্ষিকী মনে রাখো না। তোমার সঙ্গে কথা বলব না। ভাতও খাব না।’ এসব কথা ভেবে, কোনো কিছুই পালন করি না। আমার স্ত্রী, সন্তান—কাউকেই শেখাইনি এসব।

প্রথম আলো :

বলিউডে দেখা যায়, তারকাদের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর মতো বিশেষ দিনগুলোয় সব প্রজন্মের শিল্পীদের একটা মিলনমেলা হয়, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা যায় না। কেন বলেন তো!

বাবাদের সময় বিষয়টি বেশি দেখেছি। সবার একটা মিলনমেলা হতো। ওই সব অনুষ্ঠানে আমারও যাওয়া হয়েছে, খুব ভালো লাগত। ওই সংস্কৃতি আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা সমিতির নির্বাচন, পিকনিক—এসব নিয়ে আছি। আমরা বাঙালিরা বিদেশে গেলে বিএনপি, আওয়ামী লীগ হয়ে যাই। আমরা তখন আর বাঙালি থাকি না। বিদেশের মাটিতে মারামারি করি। আমরা ফিল্মের লোকজন এখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি হয়ে গেছি। এখন আর শিল্পী নই আমরা, সিনেমায়ও নেই। একসময় আমরা শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকসহ কলাকুশলীরা বসতাম। আড্ডা হতো, সিনেমার কথা হতো। এখন সেটি আর নেই। এখন আমরা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত। এ বলে ওর সঙ্গে বসব না, ও বলে এর সঙ্গে বসব না। ছিন্নবিচ্ছিন্ন এক অবস্থা সিনেমা জগতের।

বাপ্পারাজ
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম আলো :

এই বিরোধ আমাদের সিনেমাকে আরও পিছিয়ে দেবে না?

এমনিই তো আমাদের সিনেমা পিছিয়ে গেছে। এসবের প্রভাবে আরও খারাপ হবে। আর এসব যাঁরা করছেন, তাঁরা তো করার জন্যই এখানে আসছেন। তাঁদের কোনো কাজকর্ম নেই। শিল্পীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে নিজেদের কাজে লাগাচ্ছেন। এখন যাঁরা বেকার, কাজকর্ম নেই—এমন সব মানুষকে ব্যবহার করে এসব বিভক্তি করানো হচ্ছে।

দুই সন্তান বাপ্পারাজ ও সম্রাটের সঙ্গে রাজ্জাক

প্রথম আলো :

তাহলে ফিল্মের তো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে...

যাবে মানে? হয়েই তো গেছে। গত পিকনিকে কোনো তারকা, ভালো শিল্পীদের দেখেছেন? দেখেননি। কারণ, অনেকেই যাননি। যাঁরা গেলেন, খেলাধুলা করলেন, আবার মারামারিও করলেন। বুঝেছেন, আমাদের সিনেমার মানুষের কী হাল! সিনেমার মান এখন ওই অবস্থায় চলে গেছে। যেমন নেতা–নেত্রী, তেমন কর্মীরাও। কারণ, আমাদের মতো যাঁরা আছেন, তাঁদের নেতা-নেত্রী তো তাঁরা হতে পারবেন না। কারণ, তাঁদের সেই যোগ্যতা নেই। আর আমরা এ ধরনের নেতা-নেত্রীকে মানবই বা কেন? যাঁরা পিকনিকে গিয়ে মারামারি করতে পারেন, সেই মানের কর্মীদের নেতা–নেত্রী হওয়াই তাঁদের যোগ্যতা। আমি আমার মানের নিচের একজনকে তো নেতা হিসেবে মানব না, অনুসরণও করব না। আমাদের সমিতির অবস্থা এখন এমনই, বেকার মানুষেরা নেতা-নেত্রী সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরিচালক সমিতিতে যান, ছবি নেই কিন্তু নেতা হয়ে বসে আছেন। শিল্পী সমিতিতে যান, প্রযোজক সমিতিতে যান—সবখানে একই চিত্র। কোনো কাজ নেই, সবাই নেতা।

নায়করাজ রাজ্জাকের দুই ছেলে—বাপ্পারাজ ও সম্রাট
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম আলো :

তাহলে যাঁরা নেতা-নেত্রী হচ্ছেন, তাঁরা কেবল ব্যক্তি হিসেবে লাভবান হচ্ছেন? সিনেমার কোনো লাভ হচ্ছে না?

একেবারেই ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন। সিনেমার জন্য কোনো কিছুই হচ্ছে না। সরকারি দাওয়াতপত্র পাচ্ছেন, সেখানে যাচ্ছেন, খাচ্ছেন। আবার নেতা-নেত্রী হয়ে নিজেদের কোনো ব্যবসা–বাণিজ্য থাকলে সেখানেও সুবিধা পেতে পারেন। ১৯ সংগঠন নেতা যাঁরা আছেন, তাঁরা কারা? তাঁরা হিন্দি ছবি আসার জন্য ছাড়পত্র দিচ্ছেন। ছাড়পত্র দেওয়ার তাঁরা কে?